উচ্চ রক্তচাপ নিয়ে যা জানা জরুরি
আপনার রক্ত ধমনির ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময় হৃদয় থেকে কতটা জোরে চাপ দেয় এবং সেই রক্ত কতটা বাধার সম্মুখীন হয় তাই সাধারণত রক্তচাপ হিসেবে পরিচিত।
যখন এই চাপটা বারবার অনেক বেশি হয় তখন একে বলে উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন। চলুন জেনে নেই এই অবস্থাটা কী, এর কারণ, লক্ষণ, চিকিৎসা এবং প্রতিরোধের উপায়।
উচ্চ রক্তচাপ কী
যখন আপনার ধমনি (blood vessel) গুলো সরু হয়ে যায়, তখন রক্ত চলাচলে বেশি বাধা পড়ে। এই বাধার কারণে হৃদয়কে বেশি জোরে রক্ত পাম্প করতে হয়—তখনই রক্তচাপ বেড়ে যায়।
এই অবস্থাটা যদি অনেকদিন থাকে, তাহলে তা হার্টের সমস্যাসহ নানা স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের মতে, বর্তমানে প্রায় অর্ধেক আমেরিকান প্রাপ্তবয়স্কের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে।
সাধারণত হাইব্লাড প্রেশার ধীরে ধীরে তৈরি হয় এবং শুরুতে কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। কিন্তু চুপিসারে এটি হার্ট, ব্রেইন, চোখ ও কিডনির মতো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের ক্ষতি করতে পারে।
নিয়মিত রক্তচাপ মাপা খুব দরকার, কারণ তাতে প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়ে এবং সময়মতো ব্যবস্থা নেওয়া যায়।
উচ্চ রক্তচাপের বিভিন্ন ধরন-
স্বাভাবিক: 120/80 mm Hg এর নিচে
উচ্চ রক্তচাপের শুরু: সিস্টোলিক 120–129 এবং ডায়াস্টোলিক 80-এর নিচে
প্রাথমিক হাইপারটেনশন: 130–139 / 80–89 mm Hg
সেকেন্ডারি ২ হাইপারটেনশন: 140+/90+ mm Hg
হাইপারটেনসিভ ক্রাইসিস: 180+/120+, যা বিপজ্জনক, সাথে বুকব্যথা, মাথাব্যথা, শ্বাসকষ্ট হলে তড়িৎ চিকিৎসা দরকার
উচ্চ রক্তচাপের কারণ কী?
উচ্চ রক্তচাপ দুই ধরনের-
প্রাথমিক হাইপারটেনশন
এটি ধীরে ধীরে তৈরি হয় এবং এর পেছনে থাকতে পারে:
পারিবারিক ইতিহাস বা জেনেটিক কারণ-
বেশি বয়স (৬৫+)
স্থূলতা বা ওবেসিটি
অতিরিক্ত লবণ খাওয়া
শারীরিক পরিশ্রম না করা
ডায়াবেটিস বা মেটাবলিক সিনড্রোম
অতিরিক্ত অ্যালকোহল পান
কালো বর্ণের লোকদের মাঝে বেশি দেখা যায় (যুক্তরাষ্ট্রে)
সেকেন্ডারি হাইপারটেনশন
এটি দ্রুত হয় এবং সাধারণত অন্য কোনো রোগের কারণে হয়ে থাকে, যেমন:
কিডনি সমস্যা
স্লিপ অ্যাপনিয়া
থাইরয়েড বা অ্যাডরিনাল গ্ল্যান্ডের সমস্যা
কিছু নির্দিষ্ট ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ
সাধারণত হাইপারটেনশনে কোনো উপসর্গ থাকে না। অনেকেই জানতেই পারেন না তারা এই সমস্যায় ভুগছেন। তবে রক্তচাপ অতিরিক্ত বেড়ে গেলে দেখা দিতে পারে-
মাথাব্যথা
বমি বা বমিভাব
চোখে ঝাপসা দেখা
বুক বা পিঠে ব্যথা
শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া
তাই নিয়মিত প্রেশার মাপা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
উচ্চ রক্তচাপের ক্ষতিকর প্রভাব
চুপিসারে এটি শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে ক্ষতি করে। চিকিৎসা না হলে যেসব সমস্যা হতে পারে-
স্ট্রোক
হার্ট অ্যাটাক
হার্ট ফেইলিওর
কিডনি নষ্ট
চোখের দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া
যৌন সমস্যা
স্মৃতিশক্তি ও ব্রেইনের সমস্যা (ডিমেনশিয়া)
গর্ভাবস্থায় উচ্চ রক্তচাপ
অন্তঃসত্ত্বা নারীদের মাঝে হাইপারটেনশন-
কিডনির কার্যক্ষমতা কমাতে পারে
শিশু কম ওজনে জন্মাতে পারে
প্রি-এক্ল্যাম্পসিয়া হতে পারে (ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা)
গর্ভাবস্থার পর রক্তচাপ স্বাভাবিক হলেও, পরবর্তীতে আবার হাইপারটেনশন হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
চিকিৎসা
- জীবনযাত্রার পরিবর্তন:
স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া (সবজি, ফল, মাছ)
নিয়মিত ব্যায়াম (সপ্তাহে কমপক্ষে ১৫০ মিনিট)
- ওজন কমানো
- স্ট্রেস কমানো
- ধূমপান ছেড়ে দেওয়া
- অ্যালকোহল কমানো
- যদি অন্য রোগ থেকে হয় (সেকেন্ডারি), তাহলে মূল রোগের চিকিৎসা করতে হবে, যেমন কিডনি বা থাইরয়েড সমস্যা। তারপরও যদি প্রেশার না কমে, জীবনযাত্রার পরিবর্তন ও ওষুধ—দুইটা লাগবে।
উচ্চ রক্তচাপ ঠেকাতে যা করবেন
প্রতিদিন নিয়মিত খাবারের অন্তত ৫০-৬০ ভাগ ফল ও সবজি খান
অতিরিক্ত লবণ ও চিনি কম খাওয়া
ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা
ধূমপান ও অ্যালকোহল থেকে দূরে থাকা
নিয়মিত রক্তচাপ মাপা
হাই ব্লাড প্রেশার অনেক সময় বোঝা যায় না, কিন্তু শরীরের অনেক অঙ্গের ক্ষতি করতে পারে। নিয়মিত রক্তচাপ মাপা, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন আর প্রয়োজনে চিকিৎসা নেওয়াই এর সবচেয়ে ভালো প্রতিরোধ।
সূত্র: হেলথলাইন
Comments