শরীরে ভিটামিন ডি-এর অভাবে নষ্ট হচ্ছে হরমোন ভারসাম্য

বর্তমানে অনেকেই থাইরয়েড হরমোনের সমস্যায় ভুগছেন। বিশেষ করে হাইপোথাইরয়েডিজম বা অটোইমিউন থাইরয়েড ডিজঅর্ডারের প্রভাব দিন দিন বাড়ছে। চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদরা বলছেন, এই সমস্যাগুলোর অন্যতম কারণ হতে পারে ভিটামিন ডি-এর অভাব। একটি গুরুত্বপূর্ণ ইমিউন মডুলেটর বা রোগ প্রতিরোধক হিসেবে ভিটামিন ডি শরীরের নানা কার্যক্রমে ভূমিকা রাখে, যার মধ্যে অন্যতম হলো থাইরয়েড হরমোনের ভারসাম্য রক্ষা করা। পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পুষ্টিবিদ মাহমুদা আফরিন এ বিষয়ে কথা বলেন।
পুষ্টিবিদ মাহমুদা আফরিন বলেন, ভিটামিন ডি-এর অভাব শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে দুর্বল করে তোলে। ফলে অটোইমিউন ডিজঅর্ডারের ঝুঁকি বেড়ে যায়, যেগুলো প্রায়ই থাইরয়েড গ্ল্যান্ডকে আক্রমণ করে। `হাশিমোটো থাইরয়েডাইটিস' মানুষের মাঝে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি অত্যন্ত সাধারণ একটি বিষয়।
ভিটামিন ডি এর অভাবের প্রভাব প্রসঙ্গে তিনি আরও যেসব বিষয় তুলে ধরেন তা হলো:
ইমিউন সিস্টেম দুর্বল করে: ভিটামিন ডি মানুষের শরীরে রোগ প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। এর অভাবে শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে যায়, ফলে অটোইমিউন ডিজিজ (যেখানে শরীর নিজের থাইরয়েড গ্ল্যান্ডকে আক্রমণ করে) হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।
হাশিমোটো থাইরয়ডাইটিসের ঝুঁকি বাড়ায়: এই রোগ একটি অটোইমিউন সমস্যা, এবং গবেষণা দেখা গেছে, অনেক হাশিমোটো রোগীর শরীরে ভিটামিন ডি-এর মাত্রা কম থাকে।
থাইরয়েড হরমোন কার্যকারিতা কমে যেতে পারে: ভিটামিন ডি-এর অভাবে T3 (triiodothyronine) এবং T4 (thyroxine) হরমোনের রিসেপ্টর সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না, ফলে হরমোন থাকলেও শরীর তা সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারে না।
হরমোন রূপান্তরে বাধা সৃষ্টি করে: ভিটামিন ডি এর অভাবে T4 থেকে T3-এ রূপান্তর বাধাগ্রস্ত হতে পারে, যার ফলে ক্লান্তি, ওজন বাড়া, মন খারাপ থাকা ইত্যাদি উপসর্গ বেড়ে যায়।
মানসিক স্বাস্থ্যে প্রভাব: ভিটামিন ডি ও থাইরয়েড হরমোন উভয়ই মস্তিষ্কের সেরোটোনিন ও ডোপামিন উৎপাদনে ভূমিকা রাখে। অভাব হলে বিষণ্নতা, দুশ্চিন্তা আরও প্রকট হতে পারে।
করণীয়: পুষ্টিবিদ মাহমুদা আফরিন পরামর্শ দিয়েছেন, প্রথমেই রক্তে ভিটামিন ডি-এর মাত্রা পরীক্ষা করানো জরুরি। এরপর চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা যেতে পারে। একই সঙ্গে রোদে নিয়মিত সময় কাটানো, দুধ, ডিমের কুসুম, চর্বিযুক্ত মাছ (স্যামন, টুনা), মাশরুম ইত্যাদি খাদ্য তালিকায় রাখা উচিত।
বিশেষ করে যারা থাইরয়েড হরমোনের ওষুধ লেভোথাইরক্সিন গ্রহণ করছেন, তাদের জন্য ভিটামিন ডি-এর পর্যাপ্ততা নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ঘাটতি থাকলে ওষুধের কার্যকারিতা কমে যেতে পারে।
শরীরের সামগ্রিক সুস্থতার জন্য হরমোন, ভিটামিন ও মিনারেলের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি। থাইরয়েড সমস্যা থাকলে তা শুধু ওষুধেই নির্ভর না করে, খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও চিকিৎসকের পরামর্শে সঠিক পথ অনুসরণ করলেই সুস্থ থাকা সম্ভব।
Comments