রাতে ভেজা চুলে ঘুমানোর অভ্যাস কতটা ক্ষতিকর

অনেকেই ক্লান্ত হয়ে ভেজা চুলেই বিছানায় যান। অনেকের ধারণা ভেজা চুলে ঘুমানো ঠিক না কারণ জ্বর বা ঠান্ডা লাগে। আবার অনেকেই ভাবেন এটা খুব স্বাভাবিক। অন্যদিকে চিকিৎসকরা শুধু ঠান্ডা লাগা নয়, ভেজা চুলে ঘুমানোর ফলে হতে পারে ছত্রাক সংক্রমণ, মাথার ত্বকে প্রদাহ, এমনকি চুল পড়া বা চুল ভেঙে যাওয়ার মতো সমস্যা। চিকিৎসকেরা বলছেন, এই অভ্যাসটা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, ভেজা চুলে ঘুমিয়ে পড়লে সরাসরি ঠান্ডা লাগার আশঙ্কা নেই। কারণ ঠান্ডা লাগা মানেই সর্দি-কাশি হওয়া নয়।
১. সর্দি হবে না, তবে ভাইরাস থেকে সতর্ক থাকুন
আমাদের দাদি-নানিদের ধারণা ছিল ভেজা চুলে ঘুমালে ঠান্ডা লেগে যাবে, আর সেই থেকেই সর্দি হবে। তবে চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে, সর্দি হয় ভাইরাস সংক্রমণে। ঠান্ডা লাগা কিংবা ভেজা চুলে ঘুমানো এর জন্য দায়ী নয়। বিশেষজ্ঞ ডা. চিরাগ শাহ বলেন, ঘুমের সময় চুল ভেজা থাকলেই সর্দি হবে এমন কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই।
২. স্ক্যাল্পে ফাংগাল ইনফেকশনের ঝুঁকি
ভেজা চুলে ঘুমানোর ফলে মাথার ত্বকে ছত্রাকের সংক্রমণ হতে পারে। ডা. শাহ জানাচ্ছেন, মাথায় মালাসেজিয়া নামক ছত্রাক প্রাকৃতিকভাবেই থাকে। কিন্তু ভেজা চুল ও বালিশের আর্দ্র পরিবেশে এই ছত্রাক দ্রুত বাড়ে। এর ফলে খুশকি বা চর্মরোগ হতে পারে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, বালিশে গড়ে ৪ থেকে ১৬ ধরনের ছত্রাকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে, যেগুলোর মধ্যে কিছু মারাত্মক সংক্রমণ ঘটাতে পারে।
৩. চুল ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা বেশি
ডা. আদর্শ বিজয় মুদগিল বলেন, ভেজা অবস্থায় চুল সবচেয়ে দুর্বল থাকে। ঘুমের সময় এপাশ-ওপাশ করার ফলে চুল ছিঁড়ে যেতে পারে। বিশেষ করে কেউ যদি ভেজা চুল বেঁধে ঘুমান, তাহলে চুলে অতিরিক্ত চাপ পড়ে এবং তা ভাঙার ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়। তাই ভেজা চুলে ঘুমাতে হলে চুল খোলা রাখাই ভালো।
যদি বাধ্য হয়ে ভেজা চুলেই ঘুমান, তবে যেসব সাবধানতা মানতে হবে:
> নারিকেল তেল ব্যবহার করুন: নারিকেল তেল ভেজা চুলের ভাঙন প্রতিরোধে সহায়ক। এটি চুলে অতিরিক্ত পানি শোষণ কমায় এবং চুলের কিউটিকল সুরক্ষিত রাখে। তবে যদি আপনার সেবোরিয়িক একজিমা থাকে, তাহলে নারিকেল তেল না লাগানোই ভালো।
> কন্ডিশনার ব্যবহার করুন: চুলে কন্ডিশনার ব্যবহার করলে তা মসৃণ হয়, কিউটিকল সিল হয় এবং চুল সহজে জট ছাড়ানো যায়।
> যতটা সম্ভব শুকিয়ে নিন ও জট ছাড়ান: চুল একেবারে শুকানো সম্ভব না হলে অন্তত কিছুটা শুকিয়ে নিন। হালকা ব্লো-ড্রাই করলে ভালো। ঘুমানোর আগে চুল যতটা সম্ভব জটমুক্ত করে নিন।
> সিল্কের বালিশের কভার ব্যবহার করুন: সিল্ক বা স্যাটিনের বালিশের কভার ঘর্ষণ কমায়, ফলে চুল ভাঙার সম্ভাবনা কমে যায়।
ভেজা চুলে ঘুমালে ঠান্ডা লাগার ভয় নেই ঠিকই, তবে এটি চুল ও মাথার ত্বকের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। ফাংগাল ইনফেকশন, চুল ভেঙে যাওয়া ও সকালে এলোমেলো জট-পাকানো চুল এসব ঝুঁকি এড়াতে চুল শুকিয়ে ঘুমানোই ভালো। আর যদি সময় কম থাকে, তাহলে উল্লিখিত সাবধানতাগুলো অবলম্বন করাই ভালো।
সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস
Comments