‘নো সুগার’ ডায়েট মানলে যেসব খাবার খেতে হবে

চিনি শুধু স্বাদের জন্য নয়, অনেক সময় অভ্যাসের জন্যও আমাদের খাবারের তালিকায় থাকা এক অপরিহার্য উপাদান। কিন্তু চিকিৎসকদের মতে, অতিরিক্ত চিনি আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। এটি ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ওজন বৃদ্ধি, এমনকি হৃদরোগের ঝুঁকিও বাড়িয়ে তোলে। তাই অনেকেই এখন 'নো সুগার' ডায়েট মেনে চলার চেষ্টা করছেন।
এই ডায়েট শুধু ওজন কমানোর জন্য নয়, বরং এটি রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণ, দাঁতের স্বাস্থ্য ভালো রাখা এবং সামগ্রিকভাবে একটি সুস্থ জীবনধারার জন্য উপযোগী। তবে একেবারে সবধরনের চিনি বাদ দিলে শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টি ঘাটতির আশঙ্কা থাকে। তাই প্রাকৃতিক চিনিযুক্ত খাবার গ্রহণ করাই উত্তম। চলুন জেনে নিই চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী 'নো সুগার' ডায়েটে কোন খাবারগুলো খাওয়া উচিত এবং কোনগুলো এড়িয়ে চলা দরকার।
যেসব খাবার রাখতে পারেন খাদ্যতালিকায়:
১. ফলমূল: আপেল, কমলা, নাশপাতি, বেরি জাতীয় ফল—এইসব ফলের প্রাকৃতিক চিনি শরীরের ক্ষতি করে না। বরং এগুলোতে থাকা ফাইবার, ভিটামিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরকে সুস্থ রাখতে সহায়ক।
২. সবজি: বাঁধাকপি, ফুলকপি, বেল পিপার, পালং শাকসহ নন-স্টার্চি সবজি কম চিনিযুক্ত এবং অত্যন্ত পুষ্টিকর।
৩. প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার: মাছ, মুরগি, ডাল, ছোলা, টোফু, লেন্সিল প্রোটিন সরবরাহ করে এবং রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে।
৪. সম্পূর্ণ শস্য: ওটস, ব্রাউন রাইস, কোয়িনোয়া, হোল হুইট ব্রেড ইত্যাদিতে ফাইবার বেশি থাকে যা হজমে সহায়তা করে ও রক্তে চিনির মাত্রা স্থিতিশীল রাখে।
৫. বাদাম ও বীজজাতীয় খাবার: আমন্ড, ওয়ালনাট, চিয়া সিড, ফ্ল্যাক্স সিডে রয়েছে স্বাস্থ্যকর চর্বি, প্রোটিন ও ফাইবার। এটি ক্ষুধা কমাতে এবং দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখতে সাহায্য করে।
৬. দুধ ও বিকল্প: চিনি ছাড়া কেফির, সয় মিল্ক, আমন্ড মিল্ক বা বাটারমিল্ক শরীরের জন্য উপকারী হতে পারে।
৭. মসলা ও হার্বস: দারচিনি, তুলসী, থাইম, অরিগানো জাতীয় হার্বস ও মসলা প্রাকৃতিকভাবে খাবারে স্বাদ আনে—কোনো চিনির প্রয়োজন পড়ে না।
৮. স্বাস্থ্যকর চর্বি: অ্যাভোকাডো, অলিভ অয়েল, বাদামের তেল হৃদয়ের জন্য উপকারী এবং এনার্জি দেয়।
যেসব খাবার এড়িয়ে চলা উচিত
চিনি যুক্ত পানীয়: সফট ড্রিংক, মিষ্টি চা-কফি, ফ্রুট জুস, এনার্জি ড্রিংক ইত্যাদি শরীরে বাড়তি চিনি যোগ করে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
মিষ্টি ও ডেজার্ট: ক্যান্ডি, কেক, পেস্ট্রি, আইসক্রিম ইত্যাদি বাদ দেওয়া ভালো। চাইলে সুগার-ফ্রি বিকল্প খুঁজে নিতে পারেন।
প্রক্রিয়াজাত খাবার: প্যাকেটজাত স্ন্যাকস, সস, সালাদ ড্রেসিংয়ে লুকানো চিনি থাকতে পারে। লেবেল ভালোভাবে না পড়ে এগুলো খাওয়া ঠিক নয়।
সাদা ভাত ও পাউরুটি: রিফাইন্ড শস্য দ্রুত রক্তে গ্লুকোজ বাড়িয়ে দেয়। এর বদলে হোল গ্রেইন বা সম্পূর্ণ শস্য বেছে নেওয়া উচিত।
চিনি যুক্ত ব্রেকফাস্ট সিরিয়াল: বাজারের সিরিয়ালগুলোতে লুকিয়ে থাকা চিনি রয়েছে। তাই কম চিনি যুক্ত বিকল্প বেছে নিন এবং তাতে ফল যোগ করে খান।
ফলের রস: ফলের ফাইবার বাদ পড়ে গেলে রস রক্তে চিনির মাত্রা দ্রুত বাড়িয়ে দেয়। তাই পুরো ফল খাওয়াই ভালো।
প্রক্রিয়াজাত মাংস: বেকন, সসেজের মতো কিছু প্রক্রিয়াজাত মাংসে চিনি থাকে। তাই প্রাকৃতিক ও অপ্রক্রিয়াজাত মাংসই নিরাপদ।
'নো সুগার' ডায়েট মানে একেবারে মিষ্টি থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া নয়, বরং চিনির প্রাকৃতিক, স্বাস্থ্যকর উৎস বেছে নেওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা। শুরুতে কঠিন মনে হলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শরীর ও মনের ওপর এর ইতিবাচক প্রভাব দেখা যায় কমে ওজন, উন্নত হয় ত্বকের অবস্থা এবং হৃদয়ের স্বাস্থ্যও ভালো থাকে।
Comments