ভূঞাপুরে জমজমাট ঘাসের বাজার: চরাঞ্চলের মানুষের জীবিকার নতুন ভরসা
টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলায় যমুনা নদীর তীরঘেঁষা গোবিন্দাসি ঘাটে প্রতিদিন ভোরে বসে ঘাসের বাজার। গবাদিপশুর খাদ্য হিসেবে পরিচিত বিভিন্ন প্রজাতির ঘাস আর কাঁঠাল পাতার স্তুপে সাজানো এই হাট এখন চরাঞ্চলের বহু মানুষের জীবিকার প্রধান উৎস হয়ে উঠেছে। চরাঞ্চলের বিভিন্ন অফসলি ও পতিত জমিতে প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো নানান ঘাস কেটে জীবিকা নির্বাহ করছেন গ্রামের অসংখ্য মানুষ। তারা জানাচ্ছেন—এ ঘাস চাষ করতে হয় না, সেচ-সারও লাগে না। প্রকৃতির দান ঘাস কাটাই তাদের আয়ের পথ খুলে দিয়েছে।
ভোর হতেই গোবিন্দাসী ঘাটে দেখা যায় ঘাসের সারি সারি আঁটি। নেপিয়ার, দুর্বাঘাস, গর্বাঘাসসহ নানা ধরনের ঘাসের স্তুপে ভরে ওঠে হাট। পাশাপাশি বিক্রি হয় কাঁঠাল পাতা। চরাঞ্চলবাসী নৌকা ও ভ্যান নিয়ে ঘাস আনে, আর বিভিন্ন এলাকার ক্রেতারা এসে কিনে নিয়ে যান পশু খাদ্য। ঘাসের মূল্য আঁটির আকার ভেদে ভিন্ন ভিন্ন
দুর্বাঘাস ৮০–১০০ টাকা, গর্বাঘাস: ৭০–৮০ টাকা, নেপিয়ার: ৫০–৮০ টাকা, কাঁঠাল পাতা: ২০–৩০ টাকা। ঘাস বিক্রি করতে আসা কালিপুর গ্রামের কদ্দুস (৩৫) বলেন, "চর অঞ্চল থেকে ঘাস কেটে বেচেই সংসার চলছে।" চরচিতুলিয়া পাড়ার সাইফুল ইসলাম (৪০) জানান, "প্রতিদিন ৫–৬ শ টাকার ঘাস বিক্রি করি। তবে বর্ষায় কষ্ট হয়—পানি বাড়লে নৌকা নিয়ে ঘাস কাটতে যেতে হয়।" ঘাস বিক্রেতা ফজল শেখ (৬০) বলেন, "ঘাসই এখন আমার সংসারের ভরসা।"
রুলিপাড়ার নাজমুল (১৯) জানান, "ঘাস বিক্রির টাকায় আমাদের সংসার চলে। লেখাপড়ার খরচও চলে এ থেকেই।" ঘাস পরিবহনে নিয়োজিত ভ্যানচালক কালাম (৩০) বলেন, "প্রতিদিন ভ্যান নিয়ে এসে ঘাস পরিবহন করি। ৫–৬ শ টাকা পর্যন্ত আয় হয়।" ক্রেতা ইমান আলী (৬২) জানান, "আজ তিন আঁটি ঘাস কিনলাম ১শ ৫০ টাকায়। এখানকার ঘাস ভালো, দামও হাতের নাগালে।"
যমুনার তীর ঘেঁষা গোবিন্দাসী বাজার একসময় শুধুই টাটকা মাছের জন্য পরিচিত ছিল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই বাজার এখন 'ঘাসের হাট' হিসেবেও সমান জনপ্রিয়। চরাঞ্চলের মানুষের কাছে এটি শুধু একটি বাজার নয়—জীবিকার নির্ভরতার শক্ত ঠিকানা।
Comments