‘আমার মুক্তি আলোয় আলোয়’

ভোরের আলো ফুটতেই রমনার বটমূলে ভৈরবীতে রাগালাপ দিয়ে ছায়ানটের ১৪৩২ বঙ্গাব্দবরণের সূচনা হলো। রমনার বটমূলে সাজানো মঞ্চে সারি বেঁধে বসেছেন দেড় শতাধিক শিল্পী। ঠিক সোয়া ৬টায় শুরু হয় ঐতিহাসিক এই বর্ষবরণের ৫৮তম আয়োজন।
ছায়ানটের পক্ষ থেকে আগেই বলা হয়, 'বিশ্বব্যাপী যেমন ক্ষয়ে চলেছে মানবতা, তেমনি এ দেশেও ক্রমান্বয়ে অবক্ষয় ঘটছে মূল্যবোধের। তবু আমরা আশাহত হই না, দিশে হারাই না, স্বপ্ন দেখি হাতে হাত রেখে সকলে একসঙ্গে মিলবার, চলবার। বাঙালি জাগবেই, সবাই মিলে সুন্দর দিন কাটানোর সময় ফিরবেই। সার্থক হবেই হবে, মানুষ-দেশ, এ পৃথিবীকে ভালোবেসে চলবার মন্ত্র।'
ছায়ানটের এবারের আয়োজনের বার্তা, 'আমার মুক্তি আলোয় আলোয়'।

যথারীতি অনুষ্ঠান সাজানো হয়েছে নতুন আলো, প্রকৃতি এবং মানুষকে ভালোবাসবার গান, দেশপ্রেম-মানবপ্রেম আর আত্মবোধন-জাগরণের সুরবাণী দিয়ে। সব মিলিয়ে বাঙালি সমাজকে নিয়ে আলোর পথে মুক্তির পথযাত্রী হবার আহ্বান থাকবে এবারের পরিবেশনায়।
১৯৬৭ সালের পহেলা বৈশাখ রমনা উদ্যানে যে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান হয়, সেটাই এখন বাঙালির বর্ষবরণের অন্যতম অনুষঙ্গ। মানুষের মনে স্বাধিকারের চেতনা জাগানোর স্বপ্ন নিয়ে যে ক'জন মানুষ সেদিন নগরে বর্ষবরণের গোড়াপত্তন করেছিলেন, তাদের মাঝে সনজীদা খাতুন ছিলেন অন্যতম। এবারই প্রথম সেই সনজীদাকে ছাড়া বর্ষবরণ করছে ছায়ানট। গত ২৫ মার্চ তিনি মারা যান।
ছায়ানটের বর্ষবরণ আয়োজনের অন্যতম দিক লিখিত বক্তব্য কিংবা বিশেষ বার্তা। যা বরাবরই পাঠ করে আসছিলেন সনজীদা খাতুন। এবার ছায়ানটের হয়ে সেই বার্তা পাঠ করবেন নির্বাহী সভাপতি ডা. সারওয়ার আলী।
বলা দরকার, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের বছর ছাড়া প্রতিটি পহেলা বৈশাখেই ছায়ানটের উদ্যোগে এই অনুষ্ঠান হয়েছে; নতুন বছরকে স্বাগত জানানো হয়েছে সুরের মূর্ছনা আর আশার বার্তায়। করোনা মহামারির দু'বছর রমনা বটমূলে অনুষ্ঠানটি না হলেও আয়োজনটি করা হয়েছে অন্তর্জালে।
Comments