নতুন করে বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু করলেন ট্রাম্প

আবারও বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু করলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মঙ্গলবার থেকেই ট্রাম্প মেক্সিকো ও কানাডার সব পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে দিলেন। ছিনের ওপর দিলেন অতিরিক্ত আরো ১০ শতাংশ। জবাবে কানাডাও পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে। পাল্টা ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে চীন ও মেক্সিকো।
এই অবস্থাকে এক প্রকার যুদ্ধ হিসেবে দেখা হচ্ছে বিশ্বব্যাপী। ট্রাম্প গত ৪ ফেব্রুয়ারি চীনের ওপর বর্ধিত হারে শুল্ক আরোপ করে এই যুদ্ধের সূচনা করেছিলেন। নতুন করে মেক্সিকো ও কানাডার ওপর শুল্ক আরোপের মধ্য দিয়ে সেই চক্র যেন পূর্ণ হলো।
সংবাদ বিশ্লেষণ
বিশ্ব বাণিজ্য যুদ্ধে বাংলাদেশের লাভ হবে?
শেষ পর্যন্ত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের পথে আরও দৃঢ় পদক্ষেপে হাঁটতে শুরু করেছেন। বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য যুদ্ধের সূচনা করলেন তিনি। ট্রাম্প মেক্সিকো ও কানাডার ওপর আরোপ করলেন ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক। অন্যদিকে চীনের ওপর আরোপ করা হলো অতিরিক্ত ১০ শতাংশ শুল্ক। যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক আরোপ করলে এই দেশগুলোও পাল্টা শুল্ক আরোপ করবে বলে আগাম ঘোষণা দিয়ে রেখেছিল তার বাস্তবায়ন করেছে কানাডা ও চীন। ট্রাম্পের আগের মেয়াদেও এরকম শুল্ক আরোপের ফলে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ চলছিল। এ কারণে যেসব দেশ লাভবান হয়েছে এর মধ্যে রয়েছে ভিয়েতনাম, তাইওয়ান, দক্ষিণ কোরিয়া ও বাংলাদেশ। সে সময় বাণিজ্য যুদ্ধে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য আমদানি বেড়েছিল প্রায় ১৪ শতাংশ। এবারও সে কথাই বলছেন বিশ্লেষকরা। এবার ট্রাম্প এসেই চীনের ওপর যে শুল্ক আলোপ করেছে তার সুবিধা পেয়েছে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিকারকরা। গতকাল চীনের ওপর আরও অতিরিক্ত ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ফলে বাংলাদেশের সুযোগ আরও বাড়ল। তার কিছুটা প্রমাণও পাওয়া গেছে। এই জুলাই-ফেব্রুয়ারিতেই রপ্তানি বেড়েছে ১১ শতাংশ। নতুন বাণিজ্য যুদ্ধ পুরো বিশ্বের অর্থনীতিকে টালমাটাল করে দিতে পারে। আর এ কারণে ছোট অর্থনীতির দেশ হিসেবে বাংলাদেশের জন্য কিছুটা হলেও আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাতে সুযোগটা বেশি, কারণ চীন থেকে প্রচুর ক্রয়াদেশ বন্ধ হয়ে যেতে পারে যার একটি অংশ আসতে পারে বাংলাদেশে। ভিয়েতনাম ইতিমধ্যেই এই সুযোগ বড় আকারে নিতে সক্ষম হয়েছে। একক রাষ্ট্র হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র পোশাকের প্রধান রপ্তানি বাজার। যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে চীনের প্রভাব বেশি। দেশটিতে পোশাক রপ্তানিতে চীনের হিস্যা ২১ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রে শীর্ষ ১০ পোশাক রপ্তানিকারক দেশের মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ভিয়েতনাম। বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়। বাংলাদেশের হিস্যা ৯ শতাংশের কিছু বেশি। শুল্ক লড়াই এর কারণে ক্রেতারা বিকল্প দেশ হিসেবে বাংলাদেশে নজর বাড়াবে বলে ধারণা করছেন রপ্তানিকারকরা। তৈরি পোশাকের দেশ হিসেবে বাংলাদেশের ভিত্তি অনেক মজবুত। এটা বাংলাদেশের জন্য অবশ্যই একটা বড় সুযোগ। এ সুযোগ কতটা কাজে লাগানো সম্ভব হবে সেটাই দেখার বিষয়। আরেকটি ধারণা স্পষ্ট হচ্ছে যে, কম শুল্কের সুবিধা নিতে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, কানাডাসহ অনেক দেশই বাংলাদেশে প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ (এফডিআই) বাড়াতে পারে। বড় অর্থনীতির দেশগুলোর পারস্পরিক শুল্ক লড়াই যত তীব্র হবে, ততই বাংলাদেশের মতো ছোট অর্থনীতির দেশগুলোতে নজর পড়বে বিনিয়োগকারীদের। তবে এটাও ভাবতে হবে যে, সবকিছু নির্ভর করছে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কতটা বিনিয়োগবান্ধব থাকছে এবং কতটা কৌশল নিয়ে এগোতে পারবেন আমাদের নীতি নির্ধারকরা।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো জানিয়েছেন, মার্কিন পণ্যের উপর 'প্রতিশোধমূলক' শুল্ক আরোপ করা হবে। ট্রুডো জানিয়েছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট যদি শুল্কনীতি নিয়ে তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে, তবে তাঁরাও উচ্চ শুল্ক আরোপ করবে। ১০৭ বিলিয়ন ডলার মূল্যের মার্কিন পণ্যের উপর শুল্ক চাপানো হবে। মঙ্গলবার থেকে ৩০ বিলিয়ন ডলার মার্কিন পণ্যের উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। ২১ দিন পর দ্বিতীয় বার বাকি মূল্যের পণ্যের উপর বাড়তি শুল্ক চাপাবে কানাডা। আমেরিকা প্রশাসন শুল্কনীতি প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত মার্কিন পণ্যের উপর আরোপ করা শুল্ক বহাল থাকবে। এর মধ্যেই কানাডার সব সুপার শপ থেকে সরিয়ে নেয়া শুরু হয়েছে মার্কিন পণ্য।
আমেরিকান পণ্যের উপর অতিরিক্ত শুল্ক বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে চীনও। সেই তালিকায় যেমন আছে খাদ্যপণ্য, তেমনই বস্ত্রও। এর মধ্যে দিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে পাল্টা জবাব দিলেন চিন প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং।
মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লদিয়া শেনবাউম জানিয়েছেন, মেক্সিকোর স্বার্থ রক্ষায় শুল্ক আরোপের পাশাপাশি দ্বিতীয় পরিকল্পনাও রয়েছে। তা বাস্তবায়নে কাজ চলছে। এই পরিকল্পনায় শুল্কের পাশাপাশি শুল্কবহির্ভূত বিষয়ও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
Comments