ট্রাম্পের ব্যবসা জ্ঞান

ব্যবসাটা ভালোই বোঝেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কারণ, তিনি একজন ব্যবসায়ী মানুষ। ইউক্রেনের পেছনে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয় করা নিশ্চয়ই একটি অনিরাপদ বিনিয়োগ।
এই যুদ্ধে ইউক্রেনের জেতার কোনো আশা নাই। রাশিয়ার দখলে যেটুকু চলে গেছে, সেখানেই মোট খনিজ সম্পদের ৬৩%। পুরো দেশটি যদি রাশিয়ার পেটে ঢুকে যায়, তবে তো সবই গেল। তার চেয়ে ভালো হয় রাশিয়ার সঙ্গে ভাগাভাগিতে চলে যাওয়া।
ইউক্রেনের যে অংশটুকু এখনও অবশিষ্ট আছে, তার ৫০% খনিজ হাতিয়ে নিতে পারলে সেটিই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। উপায় না থাকায় রাজি হতে হয়েছে জেলেনস্কিকে। এ ছাড়া কী আর করা।
জেলেনস্কি রাজি না হলে কী হতে পারত? ধারণা করি, ট্রাম্প ও পুতিনের সঙ্গে একটা বোঝাপড়া হয়ে গিয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্র তার সব ধরনের সহযোগিতা বন্ধ করে দেবে। অর্থ ও অস্ত্রের অভাবে রণেভঙ্গ হবে ইউক্রেনের। এরপর পুরো ইউক্রেন দখলে নেবে রাশিয়া। খনিজ সম্পদের ব্যবসাটা দেওয়া হবে মার্কিন কোম্পানিগুলোকে। মানে দেশ আমার, মাটির নিচের সম্পদের ব্যবসা তোমার।
ভাবছি, ভলোদমির জেলেনস্কির বিপ্লবজ্ঞান নিয়ে। নিজের গায়ে বল-শক্তি নাই। সে রাশিয়ার মত এক দানবের বিরুদ্ধে লড়তে গেছে অন্যের ওপর ভরসা করে।
মা-খালাদের মুখ থেকে একটি প্রবাদ শুনেছি অনেকবার। তা হলো- ' জল জল মেঘের জল, বল বল বাহুর বল'। জলের উৎস যদি মেঘ হয়, তবে তা হবে অনেক বিশাল। আর লড়তে হলে চাই নিজের বাহুবল।
যুদ্ধটা রাশিয়ার উঠোনে। নিজের বাড়িতে চাচা, জেঠা এবং চাচাত-জেঠাত ভাইদের জোর বেশি থাকে। কেউ যদি ভাবেন, দূর থেকে মামাদের ডেকে এনে জেঠাদের শায়েস্তা করবেন, তা অসম্ভব। আর ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি যেন তা-ই করতে চেয়েছিলেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, জেলেনস্কির উচিত ছিল রাশিয়ার সঙ্গে সমঝোতায় গিয়ে যুদ্ধটা এড়ানো। সেই সমঝোতা যদি খুব খারাপও হতো, তা এরচেয়ে অনেক ভালো ছিল। এখন তো দেশটাই ধ্বংস হয়ে গেছে। ব্যবসায়ী হলেও ট্রাম্পের এই কথাটি অনেক বিজ্ঞজনোচিত।
রাশিয়ার চাওয়াটা খুব একটা বেশি তো ছিল না। প্রধান চাওয়াটা ছিল, ইউক্রেন ন্যাটোতে যেতে পারবে না। এই দেশটি রাশিয়া ও ন্যাটোর মাঝখানে একটি নিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে থাকবে। কিন্তু জেলেনস্কি গোঁ ধরলেন, তিনি ন্যাটোতে যাবেনই। ন্যাটো জোটে যাবার খায়েশ না দেখালে ক্রাইমিয়াও হাতছাড়া হতো না। এই ক্রাইমিয়ায় ছিল ব্ল্যাক সি'তে অবস্থিত রাশিয়ার একমাত্র বন্দর, যা সারাবছর ব্যবহার করা যায়। ইউক্রেন ন্যাটোতে চলে গেলে তো সেই বন্দর হাতছাড়া হয়ে য়ায়। এমন উপক্রম দেখা দেওয়ায় পুতিন ক্রাইমিয়া দখল করে নিল।
প্রতিবেশীর সঙ্গে সম্পর্ক বৈরি রেখে কেউ ভালো থাকতে পারে না। বরঞ্চ একটু কম-বেশি হলেও প্রতিবেশীর সঙ্গে বোঝাপড়া ঠিক রেখেই ভালো থাকতে হয়। ওই ইংল্যান্ড, ইউরোপের বুদ্ধিতে চলে আজ ইউক্রেনের সর্বনাশ। এখান থেকে সকলেরই শিক্ষা নেওয়ার আছে।
Comments