আতঙ্ক দূর হোক

নজিরবিহীন অবনতিশীল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির মধ্যেই নজিরবিহীন ভাবে রাত তিনটায় সংবাদ সম্মেলন ডেকে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। মাঝরাতে সংবাদ সম্মেলন করে উপদেষ্টা নিজের সিরিয়াসনেস দেখাতে চেয়েছেন। তাঁর সাফ কথা, আওয়ামী লীগের দোসররা দেশকে অস্থিতিশীল করার সব ধরনের চেষ্টা করছে।
প্রশ্ন হলো, এরকম একটি সাদামাটা কথা বলার জন্য কি রাত তিনটায় সংবাদ সম্মেলন ডাকা লাগে? আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের সাত মাস পরেও আওয়ামী লীগ-কে দায়ী দেয়া বক্তব্য কতটুকু গ্রহণযোগ্য তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সোমবার গভীর রাতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন কিন্তু তার আগে রোববার দেশব্যাপী আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে অভিযোগ তুলে এর প্রতিবাদে সমাবেশ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী। তাঁদের ভাষ্য, দেশব্যাপী ছিনতাই, হামলা, ধর্ষণের মতো অপরাধ বেড়ে গেছে। দেশের মানুষকে সুরক্ষা দিতে না পারলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে পদত্যাগের আহ্বান জানান তাঁরা। সংবাদ সম্মেলনে অবশ্য পদত্যাগ সংক্রান্ত শিক্ষার্থীদের দাবি প্রসঙ্গে বলেছেন, পরিস্থিতি ঠিক হয়ে গেলে তো আর পদত্যাগ করা লাগবে না। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগের থেকে অনেক উন্নতি হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।
দৈনিক মানবজমিন গত ২৪ ফেব্রুয়ারী একটি ব্যাখ্যামূলক প্রতিবেদন করেছে। শিরোনাম ছিল 'পথে পথে আতঙ্ক'। পরিস্থিতি এখন আসলেই তাই। কোন আপরাধটি না ঘটছে? ছিনতাই, চাঁদাবাজি, খুন, ধর্ষণ, দখল- সবই চলছে বেপোরোয়াভাবে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সম্প্রতি বলেছেন, ''দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোর দায় এই সরকার এড়াতে পারে না।'' পুলিশ আছে,মাঠে সেনাবাহিনী আছে ম্যাজিষ্ট্রেসি ক্ষমতা সহ। এছাড়া চলতি মাসের শুরু থেকে চলছে বিশেষ অভিযান অপারেশন ডেভিল হান্ট। কিন্তু পরিস্থিতি ভয়াবহই থাকছে।
উদ্বেগের আসল কারণটি আরও বড়। সাধারণ মানুষের মনে ভয় ঢুকে যাওয়া, নিরাপত্তাহীনতার বোধ তৈরি হওয়া। সেটা শুধু কাউকে দোষারোপ করে বা সাধারণ কথা বলে দূর করা যাবেনা। আর্মি-পুলিশ-প্রশাসন পরিস্থিতির রাশ নিজেদের হাতে আনতে না পারলে মানুষের মনের সেই ভয়টা আরও বিস্তার লাভ করবে।
আতঙ্ক, দুশ্চিন্তা, উৎকণ্ঠা- এমন অনুভূতি নিত্যসঙ্গী হয়েছে মানুষের। প্রতিহিংসার চর্চা যারাই করতে চেষ্টা করুক, যত উসকানিই থাকুক এসব থেকে বেরিয়ে নাগরিকের সুরক্ষা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাই হবে প্রধান কাজ। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা গভীর রাতে সংবাদ সম্মেলন করে পরিস্তিতি নিয়ন্ত্রণে আনবার প্রতিজ্ঞা করেছেন। জনগণ তাঁর সেই সদিচ্ছাটির বাস্তব রূপায়ণ কত দূর হচ্ছে সেটা দেখতে চায়। প্রশাসন যে অপরাধ দমনে সক্রিয়, তা জনসমক্ষে দৃশ্যমান হওয়া জরুরি। কারণ কালহরণ অনেক হয়েছে।
Comments