গরমের মৌসুমে লোডশেডিং-এর শঙ্কা

সচিবালয়সহ সরকারি-বেসরকারি অফিস, মসজিদ ও বাসাবাড়িতে ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে এসি চালানো যাবে না। যদি এর নিচে চালানো হয় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে। সম্প্রতি এমন একটি ঘোষণা দিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।
ইঙ্গিতটি স্পষ্ট যে, এবার রজমান ও গরমের মৌসুমে বিদুতের লোডশেডিং বাড়বে। গ্রীষ্মে বিদ্যুৎ পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা করা হচ্ছে বিভিন্ন পর্যায় থেকে। শীতের শেষে তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করায় বাড়ছে বিদ্যুতের চাহিদা। পুরো মার্চেই এবার রোজা থাকবে এবং এ সময়ে চাহিদা বাড়বে। কিন্তু চাহিদার সঙ্গে মিলিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। প্রয়োজনের চেয়ে বেশি বিদ্যুৎকেন্দ্র থাকলেও তা পুরোপুরি কাজে লাগছে না। ইতিমধ্যে দেশের বিভিন্ন এলাকায় অল্প সময়ের লোডশেডিং শুরু হয়েছে।
জ্বালানি উপদেষ্টা গত ৫ ফেব্রুয়ারি বিদ্যুৎ ভবনে গ্রীষ্মের প্রস্তুতি নিয়ে অনুষ্ঠিত সভা শেষে জানিয়েছিলেন, রোজায় নয়, লোডশেডিং হতে পারে গ্রীষ্মকালে। কিন্তু এর মধ্যেই বিভিন্ন প্রান্ত থেকে রোডশেডিং-এর কবর আসছে। গ্রীষ্ম সামনে রেখে মার্চে সর্বোচ্চ ১৬ হাজার এবং এপ্রিলে ১৮ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা ধরা হয়েছে। গত বছর একই সময়ে ১২ থেকে ১৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়েছে। এবার এটি ১৩ থেকে ১৫ হাজার মেগাওয়াট হতে পারে। ঘাটতি পূরণে গত তিন বছরের মতো এবারের গ্রীষ্মে লোডশেডিং করতে হতে পারে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা বলেছেন, ১ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট পর্যন্ত লোডশেডিং হতে পারে। আর এ কারণেই এসি ২৫ ডিগ্রির নিচে রাখার কথা বলছেন তিনি।
উপদেষ্টা যা বলেছেন তার চেয়ে বেশি লোডিশেডিং-এর আশংকাই স্পষ্ট। বড় কারণ গ্যাস ও কয়লার সরবরাহ নিয়ে অনিশ্চয়তা। সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকার ভারতীয় ব্যবসায়িক গোষ্ঠী আদানি গ্রুপের কাছে পুরো বিদ্যুৎ সরবরাহ চেয়েছে। গত তিন মাসের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে উৎপাদন সক্ষমতার অর্ধেক বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে আদানি গ্রুপ। আসন্ন গ্রীষ্ম মৌসুম সামনে রেখে আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে সম্পূর্ণ বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ। ভারতের ঝাড়খন্ড রাজ্যের গোড্ডায় অবস্থিত আদানি গোষ্ঠীর কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন সক্ষমতা হচ্ছে ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট। ৮০০ মেগাওয়াট সক্ষমতার দুটি ইউনিট আছে এ কেন্দ্রে। নভেম্বর থেকে একটি ইউনিটের বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। গ্রীষ্মকাল চলে আসায় সরবরাহ এখন আগের পর্যায়ে নেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে বাংলাদেশ থেকে। ডলার সংকটের কারণে নির্ধারিত সময়ে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করতে না পারায় গত ৩১ অক্টোবর একটি ইউনিট বন্ধ করে দেয় আদানি। ফলে বিদ্যুৎ সরবরাহ অর্ধেকে নামে। এরপর শীতে চাহিদা কম থাকায় বাংলাদেশের পক্ষ থেকেও অর্ধেক বিদ্যুৎ সরবরাহ চালিয়ে যেতে অনুরোধ করা হয়। আদানির কোম্পানিকে মাসে ৮৫ মিলিয়ন বা ৮ কোটি ৫০ লাখ ডলার করে পরিশোধ করছে বাংলাদেশ। এখন চাহিদা বাড়ায় দ্বিতীয় ইউনিট থেকেও পুনরায় বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করতে বলেছে।
বর্তমানের পরিস্থিতি সামনে খারাপের দিকে যেতে পারে বলে শংকা আছে। আদানির বাইরে আমদানি থেকে আসবে এক হাজার মেগাওয়াট। বাকি বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে হবে তেলচালিত কেন্দ্র থেকে। বিদ্যুৎকেন্দ্রের বকেয়া বিল পরিশোধ ও জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে না পারলে দু–তিন হাজার মেগাওয়াট ঘাটতি হতে পারে। এতে প্রতিদিন দু–তিন ঘণ্টা লোডশেডিং হতে পারে গরমের সময়।
উৎপাদন সক্ষমতা থাকার পরও সংকট কাটছে না। বর্তমানে ১৪৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র মিলে উৎপাদন সক্ষমতা আছে প্রায় ২৭ হাজার মেগাওয়াট। দিনে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়েছে ১৬ হাজার ৪৭৭ মেগাওয়াট, গত বছরের ৩০ এপ্রিল। এরপর আর কখনোই ১৬ হাজার মেগাওয়াটে যায়নি উৎপাদন। কারণ পিডিবির কাছে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর বিল পাওনা ২০ হাজার কোটি টাকার বেশি। কেন্দ্র চালাতে জ্বালানি আমদানি নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো।
Comments