ট্রাম্পের সহায়তা বন্ধের প্রভাব কতটুকু পড়বে বাংলাদেশে?
জরুরি খাদ্য সহায়তা এবং মিশর ও ইসরায়েলের জন্য সামরিক অর্থায়ন ছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আর কোনো দেশের জন্য বৈদেশিক সহায়তা দেবে না। সম্প্রতি ট্রাম্প প্রশাসন এই সিদ্ধান্ত জানিয়েছে।
বাংলাদেশেও ইউনাইটেড স্টেটস এজেন্সি ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট বা ইউএসএআইডি তাদের কার্যক্রম বাস্তবায়নকারী সব অংশীজনকে তাদের অধীন চলমান সব প্রকল্পের কার্যক্রম বন্ধ অথবা স্থগিত করার নির্দেশ দিয়েছে। গত শনিবার ইউএসএআইডি বাংলাদেশ থেকে পাঠানো এক চিঠিতে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়।
যুক্তরাষ্ট্র সরকারের এমন ঘোষণায় ভাবনায় ফেলেছে সরকার এবং বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলোকে। তবে অন্তবর্তী সরকার জানিয়েছে, ইউএসএআইডি তাদের চলমান সব প্রকল্পের কার্যক্রম বন্ধ অথবা স্থগিতের নির্দেশ দিলেও বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের জন্য দেওয়া খাদ্য ও পুষ্টিসহায়তা কার্যক্রম এ স্থগিতাদেশের বাইরে থাকবে। অর্থাৎ রোহিঙ্গাদের জন্য দেওয়া খাদ্য ও পুষ্টি সহায়তা কার্যক্রম চলবে। সরকার এটাও বলছে যে, এ স্থগিতাদেশ বাংলাদেশের জন্য বড় কোনো প্রভাব ফেলবে না। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার অনেকেই জানিয়েছেন তাদের অনেক প্রকল্প বন্ধ থাকবে আপাতত।
গত ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে জনস্বাস্থ্য,শিক্ষা, খাদ্য নিরাপত্তা, পরিবেশ ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ খাতে সহায়তা দিয়ে এসেছে। ২০২১ সালে ৫০ কোটি ডলার, ২০২২ সালে ৪৭ কোটি ডলার, ২০২৩ সালে ৪৯ কোটি ডলার ও ২০২৪ সালে ৪৫ কোটি ডলার সহায়তা পেয়েছে বাংলাদেশ। ১৯৭৪ সালে সই করা 'অর্থনৈতিক প্রযুক্তিগত ও সম্পর্কিত সহায়তা' শীর্ষক একটি চুক্তির অধীনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্র ও শাসনের মতো বিভিন্ন খাতে আজ পর্যন্ত ৮০০ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি ফান্ড দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ইউএসএআইডি মূলত একটি দ্বিপক্ষীয় সাহায্য সংস্থা। ফলে চরম দারিদ্র্য দূরীকরণ, শিক্ষা উন্নয়ন, নারীর ক্ষমতায়ন, পরিবেশ, প্রযুক্তি খাতসহ অনেক খাতেই এই বন্ধের প্রভাব পড়বে। বিশেষ করে জনস্বাস্থ্য ও দুর্যোগ মোকাবিলাসহ বিভিন্ন প্রকল্পে, স্বাস্থ্য খাতের পিইপিএফএআর (এইচআইভি/এইডস) কর্মসূচি বন্ধ হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের জন্য দেওয়া খাদ্য ও পুষ্টিসহায়তা চালু থাকলেও রোহিঙ্গাদের জন্য স্বাস্থ্য সুরক্ষা, সেখানকার পরিবেশ প্রতিবেশ রক্ষায় অন্যান্য কার্যক্রম নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও নির্দেশ দিয়েছেন, কঠোরভাবেই বিদেশি সহায়তার জন্য নতুন তহবিল দেওয়া বন্ধ করা হবে। এ সিদ্ধান্তে মানবিক সংস্থাগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তাদের আশঙ্কা,এই স্থগিতাদেশ বৈশ্বিক অস্থিরতা ও জীবনহানি বাড়াতে পারে। অক্সফাম আমেরিকার প্রধান অ্যাবি ম্যাক্সম্যান মন্তব্য করেছেন,এতে সংকটে থাকা কমিউনিটির জীবন বিপর্যয়কর হবে।
এই স্থগিতাদেশ কমপক্ষে তিন মাস স্থায়ী হবে। তবে অনেকেরই আংশকা এক পর্যায়ে দু'একটি ক্ষেত্রে ছাড় দিয়ে স্থায়ীভাবেই সহায়তা বন্ধ করবে ট্রাম্প প্রশাসন।
Comments