কক্সবাজারে রানওয়ে নির্মাণের যৌক্তিকতা নিয়ে উঠলো প্রশ্ন
সাগরের জলরাশি ছুঁয়ে ওঠানামা করবে প্রতিটি উড়োজাহাজ। যাত্রী বা পর্যটকদের মনজুড়ে থাকবে প্রশান্তির এক অনুভূতি। যার আকর্ষণে বাড়বে দেশি-বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা। প্রকৃতির এই উচ্ছ্বসিত হাতছানিতে নির্ভর করেই ২০০৯ থেকে ২০১৩ মেয়াদে উন্নয়নের কাজ শুরু হয় কক্সবাজার বিমানবন্দরের। ২০১৫ সালে রানওয়ে কাজের উদ্বোধন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৬ হাজার ৭৭৫ ফুট রানওয়েকে ১০ হাজার ৭০০ ফুটে উন্নীত করতে ব্যয় হয় প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা। সাগরপাড় ভরাট করে তৈরি হচ্ছে রানওয়ের বড় একটি অংশ। যা শাহজালাল বিমানবন্দরের রানওয়ে থেকেও বড়।
বাস্তব প্রেক্ষাপটে এত ব্যয়ে রানওয়ে নির্মাণের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তবে তা মানতে নারাজ বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) বর্তমান চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মঞ্জুর কবীর ভুঁইয়া।
তিনি বলেন, যথাযথ উন্নয়ন করতে পারলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের পর্যটকরা সরাসরি কক্সবাজারে আসতে পারবে। যেখানে এখন ঢাকা থেকে আসতে হচ্ছে। সে লক্ষ্যেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এতে পর্যটন শিল্পে বড় ধরনের ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
ইতোমধ্যে বিমানবন্দরের রানওয়ে ২ হাজার ২২৫ ফুট বাড়িয়ে সম্প্রসারণ করা হয়েছে ৯ হাজার ফুটে। যা দেশের অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরের রানওয়েগুলোর মধ্যে সর্ববৃহৎ। আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে রানওয়ে আরও সম্প্রসারিত করে করা হচ্ছে ১০ হাজার ৭০০ ফুট।
তবে রানওয়েতে এতো ব্যয়কে অপচয় হিসেবে দেখছেন এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহিদুল আলম। তার মতে, কক্সবাজারে বিদেশি পর্যটক ও বিমানবন্দরে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বেশি হবে না।
তিনি বলেন, শুধু বিচ দেখতে খুব বেশি পর্যটক আসবে না। পর্যটকদের আনতে হলে তাদের জন্যে বিভিন্ন বিনোদনের ব্যবস্থাও করতে হবে। ফলে মনে হচ্ছে এত টাকা খরচ করে রানওয়ে নির্মাণ পুরোটাই অপচয়।
এ বিষয়ে বেবিচক চেয়ারম্যান বলছেন, যে জিনিস হয়ে গেছে সেটা তো আমরা আর ফেরাতে পারবো না। এই প্রকল্পে ইতিমধ্যে বিপুল অর্থ বিনিয়োগ হয়ে গেছে। এখন লক্ষ্য হচ্ছে সেই বিনিয়োগ থেকে কীভাবে সঠিকভাবে রাজস্ব আয় করা যায়।
এদিকে, চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দর থেকে কক্সবাজার বিমানবন্দরের দূরত্ব ১৪০ কিলোমিটার। সেক্ষেত্রে স্বল্প দূরত্বে আরেকটি আন্তর্জাতিক মানের বিমানবন্দর কতটা লাভজনক হবে, তা নিয়ে সন্দিহান বিশেষজ্ঞরা। ওয়াহিদুল আলমের মতে, গুরুত্ব বিবেচনায় চট্টগ্রামের চেয়ে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে কক্সবাজার বিমানবন্দরকে। স্বল্প দূরত্বে আরেকটি আন্তর্জাতিক মানের বিমানবন্দর তৈরি করলে খুব একটা লাভ হবে না।