শিশুর স্থূলতার কারণ ও ক্ষতির দিক

সময়ের সঙ্গে প্রতিনিয়ত আমাদের জীবনযাত্রায় নানা পরিবর্তন দেখা দিচ্ছে। এই প্রযুক্তির যুগে অনেকটা সহজ হয়ে গেছে জীবন। চাইলেই হাতের নাগালে পাওয়া যায় অনেককিছু। কিন্তু এই প্রযুক্তির কারণে জীবন শুধু সহজই হয়নি, ভোগান্তিও এসেছে অনেক। প্রযুক্তির কারণে ব্যায়াম এবং কায়িক পরিশ্রম কমে যাওয়ায় অনেকের ওজন নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। এমনকি বর্তমান সময়ে চাইল্ড ওবিসিটি বা শিশুর স্থূলতা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে।
কেন শিশুরা জন্মের পর মুটিয়ে যায় সে প্রসঙ্গ নিয়েই আজকের লেখা। শিশুর স্থূলতার বিষয় নিয়ে সঙ্গে কথা হয় কক্সবাজারের রোহিঙ্গা কনটেস্টে এনজিওর পুষ্টিবিদ চামিলি জান্নাতের।
শিশুর স্থূলতার কারণ: পুষ্টিবিদ চামিলি জান্নাত বলেন, বর্তমান সময়ে শিশুর মধ্যে স্থূলতা একটি ভয়াবহ স্বাস্থ্য সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, শিশুদের স্থূলতা শুধু দৈহিক গঠনকে প্রভাবিত করে না, এটি ভবিষ্যতের জন্য মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই শিশুর বয়সে অতিরিক্ত ওজনকে অবহেলা নয়, গুরুত্ব দিয়েই দেখতে হবে। বেশিরভাগ সময় স্থূলতার পেছনে জীবনধারণ, জিনগত প্রভাব ও খাওয়া দাওয়ার ধরনই কারণ হয়ে থাকে। আমেরিকান রির্সাচের নানান গবেষণায় জানা গেছে স্থূলতা থেকেই মূলত নানান রোগের সূত্রপাত হয়। শিশুর স্থূলতা মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
শিশু স্থূলতার পেছনে প্রধানত তিনটি কারণকে দায়ী করেছেন পুষ্টিবিদ পুষ্টিবিদ চামিলি জান্নাত। এগুলো হলো:
> জীবনধারণের ধরন,
> খাদ্যাভ্যাস, এবং
> জিনগত প্রভাব।
সুস্থ থাকতে করণীয়: শিশুরা পরিবার থেকেই সবকিছু শেখে। তাই ছোট থেকেই স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রায় বিষয়ে পরিবারের ক্ষুদে সদস্যদের সচেতন করতে হবে। সুতরাং কিছু কিছু খাবার একেবারেই বর্জন করা আবশ্যক। কথা বলবো সেইসব খাবার ও খাবারের অপকারিতা ও খারাপ চর্চা নিয়ে।
১। অতিরিক্ত তেলে ভাজা,সল্টি খাবার পরিহার করতে হবে।
২। প্রসেস খাবার, পিজ্জা, বার্গার, আইসক্রিম, চিকেন ফ্রাই, সিঙ্গারা,সমুচা ইত্যাদি খাবারগুলো পরিহার করতে হবে। কারণ এগুলোতে থাকে সোডিয়াম বাইকার্বোনেট যা ওজন বাড়াতে ও শরীরের বিভিন্ন অর্গানের জন্য ক্ষতিকর।
৩। বসে বসে টিভি দেখা,মোবাইল গেইমিং করা কমাতে হবে এবং অবশ্যই প্রতিদিন মাঠে শারীরিক খেলাধুলা করতে দেয়া উচিত।
8। বাচ্চাদের যত দেরিতে চিনি বা চিনি জাতীয় খাবার দেয়া হবে ততই ভালো।কেননা চিনি জাতীয় খাবার খেলে তা এডিপস টিস্যুতে চর্বি জমিয়ে পরবর্তীতে শিশুদের স্থূলতায় পরিণত করে।
৫। গুরুত্বপূর্ণ আরো একটি মুখ্য বিষয় হলো, গর্ভকালীন সময়ে মায়ের সঠিক পরিচর্যা। কারণ, মায়ের সঠিক স্বাস্থ্য, খাদ্যাভ্যাস ও মানসিক সুস্থতা গর্ভস্থ শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
৬। বাচ্চার ওজন ও উচ্চতার ফলোআপে রাখা প্রতিটা বাবা-মায়ের দায়িত্ব। সেইসঙ্গে বয়সের সঙ্গে শিশুর ওজন-উচ্চতা বৃদ্ধি ব্যাপারে সচেতন হওয়া উচিত। প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। কেননা শূন্য থেকে আঠারো বছর পর্যন্তই তিনটি বিশেষ সাইকেলের মধ্য দিয়ে বাচ্চারা প্রাপ্তবয়স্ক হয়। যদি বাবা-মা সঠিক পরিচর্যা ও খাবারের ব্যাপারে সচেতন থাকে তাহলে স্থূলতা সহজেই এড়ানো সম্ভব।
৭। অনেক শিশু রাতে দেরি করে ঘুমায়, সকালে দেরিতে ওঠে। এমনকি তারা সকালের খাবারও ঠিকভাবে খায় না। যার ফলে, হরমোন ও মেটাবলিজমে সমস্যা তৈরি হয়। তাই শিশুরা অনেক বেশি অসুস্থ হয়ে যায়।
৮। প্রধান আরেকটি বিষয় হলো বাচ্চাদের কে ক্যালোরি মেইনটেইন না করে বেশি করে খাওয়ানো। বাবা-মায়েরা ভাবেন বেশি খাবার খেলেই সন্তান সুস্থ থাকবে। যেটার কারণে শিশুর স্থূলতার সমস্যা হয়। তাই একসঙ্গে এতো খাবার না দিয়ে সুষম খাবার ও ক্যালোরি মেইনটেইন করে পুষ্টিকর খাবার খাওয়াতে হবে। সেইসঙ্গে শিশুর মানসিক বিকাশ ও সুস্থতা বজায় বিষয়টিও দেখতে হবে।
শিশুর স্থূলতা একদিনে তৈরি হয় না। এটি প্রতিদিনের ছোট ছোট অভ্যাসের ফল। তাই পরিবার থেকেই শিশুদের সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও জীবনধারা শেখানো জরুরি। শিশুর ভবিষ্যৎ সুস্থ ও সুন্দর রাখতে সচেতন হতে হবে।
Comments