হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ায় ঘুমের অস্বাভাবিকতা

সুস্থ থাকতে পর্যাপ্ত ঘুম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মনোযোগ, উৎপাদনশীলতা, মেজাজ, এমনকি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও ঘুমের ভূমিকা অনস্বীকার্য। তবে সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, ঘুম কম হলেও সমস্যা, আবার বেশি হলেও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়তে পারে। বিশেষ করে যাদের জেনেটিকভাবে হৃদরোগের ঝুঁকি রয়েছে, তাদের জন্য এটি হতে পারে মারাত্মক সতর্কবার্তা।
হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ায় ঘুমের অস্বাভাবিকতা: ২০১৯ সালের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, যারা দিনে ছয় ঘণ্টার কম বা নয় ঘণ্টার বেশি ঘুমান, তাদের মধ্যে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। এমনকি যাঁরা সম্পূর্ণ সুস্থ, তাদের ক্ষেত্রেও এই ঝুঁকি দেখা দিতে পারে।গবেষক সেলিন ভেটার বলেন, জীবনধারা নিয়ে পরিকল্পনা করার সময় আমরা কী খাচ্ছি, কতটা শারীরিকভাবে সক্রিয়, সেগুলো বিবেচনায় নিই ঠিকই, কিন্তু ঘুমের দৈর্ঘ্য বা মানের গুরুত্ব অনেকেই ভুলে যাই। অথচ ঘুমও হৃদ্যন্ত্রের সুস্থতায় সমান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
জেনেটিক রিস্ক থাকলেও ঘুম দিয়ে রক্ষা সম্ভব: যাদের পরিবারে হৃদরোগের ইতিহাস রয়েছে, অর্থাৎ জেনেটিকভাবে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি আছে তারাও ঘুমের মাধ্যমে এই ঝুঁকি অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেন। বিশেষজ্ঞ ডা. মেইর ক্রাইগার বলছেন, যথাযথ ঘুম না হলে শরীরে ইনফ্লেমেশন, ওবেসিটি, ইমিউন সিস্টেমের সমস্যা, এমনকি রক্তনালির স্বাভাবিক কাজেও সমস্যা দেখা দেয় যা হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়।
ঘুমের সমস্যায় যা করবেন: অনেকের ক্ষেত্রেই ঘুমানো সহজ নয়। মানসিক চাপ, ইনসমনিয়া, বয়সজনিত পরিবর্তন বা ঘরের ছোট শিশুর জন্য ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। নিয়মিত ঘুমের ব্যাঘাত দীর্ঘমেয়াদে হৃদ্রোগসহ নানা জটিলতা বাড়াতে পারে। ডা. গাই মিন্টজ বলেন, আমাদের হৃদযন্ত্র ২৪ ঘণ্টা কাজ করতেই থাকি। তাই আমাদের বিশ্রাম নিয়ে হয়। পর্যাপ্ত বিশ্রাম না নিলে হার্টের ক্ষতি হতে পারে এমনকি বিকল হয়ে যেতে পারে।
যারা নিয়মিত ঘুমের সমস্যায় ভোগেন, তাদের ঘুম বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া উচিত। সঠিক চিকিৎসা বা লাইফস্টাইল পরিবর্তনের মাধ্যমে অনেক সময় সমস্যার সমাধান সম্ভব। উদাহরণস্বরূপ, কগনিটিভ বিহেভিয়ারাল থেরাপি ইনসমনিয়া কমাতে সহায়ক হতে পারে। আবার ঘুমের সময়ের আগে অতিরিক্ত ক্যাফেইন, ভারী খাবার কিংবা অস্বাভাবিক এক্সারসাইজ হতে পারে ঘুম না আসার কারণ।
অন্যদিকে, ঘুমের সমস্যায় একটি জার্নাল রাখতে পারেন। এতে প্রতিদিন ঘুমের সময়, ব্যাঘাত ও অন্যান্য অভ্যাস নথিভুক্ত করলে বোঝা যাবে সমস্যার উৎস কোথায়।
সবশেষে বলা যায়, হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে ঘুমের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অতিরিক্ত ঘুম কিংবা অপ্রতুল ঘুম দুটোই হতে পারে বিপজ্জনক। প্রতিদিন ৬ থেকে ৯ ঘণ্টা মানসম্পন্ন ঘুম শুধু হৃদযন্ত্র নয়, সার্বিক সুস্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য। আপনি যদি হৃদরোগের পারিবারিক ইতিহাস বহন করেন, তাহলে ঘুমের বিষয়ে সচেতন হোন।
সূত্র: হেলথলাইন
Comments