আম কি সবার জন্য নিরাপদ? বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন

গ্রীষ্মকালে রসালো ফলের মধ্যে আমের জুড়ি নেই। পুষ্টিগুণে ভরপুর আম। ভিটামিন সি, ফাইবার, পটাশিয়াম এবং ক্যারোটিনয়েডে ভরপুর এই ফলটি সুস্বাদু হওয়ার পাশাপাশি স্বাস্থ্য রক্ষায়ও রাখে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। তবে এত গুণের মাঝেও কিছু মানুষকে আম খাওয়ার ক্ষেত্রে সচেতন হতে হবে। ইটিং ওয়েলের এক প্রতিবেদনে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন কাদের জন্য আম নিরাপদ নয় এবং কীভাবে এই মজাদার ফলটি খাওয়া সম্ভব
কারা আম খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন: আম খেতে গেলেও কিছু সতর্কতা মানা জরুরি। বিশেষ করে যাদের কিছু নির্দিষ্ট অ্যালার্জি বা স্বাস্থ্যের সমস্যা রয়েছে, তাদের জন্য আম হতে পারে ঝুঁকিপূর্ণ।
ম্যাঙ্গো ডার্মাটাইটিস: আমের চামড়ায় ইউরুশিওল নামে এক ধরনের রাসায়নিক থাকে। যাদের ত্বক এই উপাদানে সংবেদনশীল, তাদের জন্য আমের চামড়া বিপজ্জনক হতে পারে। তারা আমের খোসা স্পর্শ করলেই ত্বকে ফুসকুড়ি, লালচে চুলকানি কিংবা প্রদাহ দেখা দিতে পারে। একে বলা হয় 'ম্যাঙ্গো ডার্মাটাইটিস'। এই কারণে যাদের এরকম অ্যালার্জি আছে, তাদের আমের খোসা স্পর্শ না করাই ভালো। বরং ভালোভাবে ধুয়ে সম্পূর্ণভাবে খোসা ছাড়িয়ে কেবল আমের ভেতরের অংশ খেতে হবে।
ফলজাতীয় চিনি হজমে সমস্যা: অনেকের দেহে ফ্রুকটোজ ইনটলারেন্স নামক একটি অবস্থা থাকে, যেখানে শরীর প্রাকৃতিক চিনি (যেমন: আমে থাকা ফ্রুকটোজ) হজম করতে পারে না। এ ধরনের মানুষের আম খেলে পেটের ব্যথা, গ্যাস, ডায়রিয়া, কিংবা বমিভাব হতে পারে। সেক্ষেত্রে এই ফলটি খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দেয়াই ভালো।
ডায়াবেটিস রোগী: আমের প্রাকৃতিক মিষ্টতা অনেক সময় ডায়াবেটিস রোগীদের দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তবে পুষ্টিবিদরা বলেন,আম একটি লো-গ্লাইসেমিক ইনডেক্স ফল হওয়ায় এটি হঠাৎ করে রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ায় না। তবুও একসঙ্গে বেশি আম খাওয়া উচিত নয়। বরং পরিমাণমতো, এবং প্রোটিন বা ফ্যাটযুক্ত খাবারের সঙ্গে খেলে রক্তে চিনি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। যেমন, আমের সঙ্গে একমুঠো বাদাম বা এক চামচ চিয়া সিড পুডিং খাওয়া যেতে পারে।
আম খাওয়ার উপকারী ও মজাদার উপায়: চিকিৎসকরা আম খাওয়ার বেশ কিছু উপায় নিয়ে আলোচনা করেছেন।
স্মুদি: আম স্মুদিতে ব্যবহার করলে মিষ্টি ও ক্রিমি স্বাদ দেয়। আনারস বা নারকেলের সঙ্গে মিশিয়ে ট্রপিক্যাল স্বাদের স্মুদি তৈরি করা যায়।
নাইস ক্রিম: ডেইরি-মুক্ত আইসক্রিম হিসেবে আম ও দুধ একসঙ্গে ব্লেন্ড করে তৈরি করুন গ্রীষ্মের ঠান্ডা মিষ্টান্ন।
ফ্রুট লেদার: ওভেনে শুকিয়ে আম দিয়ে তৈরি করুন ঘরে বানানো হেলদি ফল লেদার বাচ্চাদের জন্য আদর্শ স্ন্যাকস।
সালাদ: আমের খণ্ড টুকরো সালাদে মেশালে বাড়ে স্বাদ ও পুষ্টি। বিশেষ করে আরুগুলা, চিংড়ি কিংবা ব্ল্যাক বিনসের সঙ্গে খেতে দারুণ লাগে।
এনার্জি বাইট: খেজুর ও বাদামের মিশ্রণে যদি শুকনো আম যোগ করেন, তবে পাবেন অসাধারণ ট্রপিক্যাল ফ্লেভারযুক্ত এনার্জি বাইট।
সালসা: পাকা আম, বেল পেপার, পেঁয়াজ ও ধনে পাতা দিয়ে তৈরি সালসা—লেবুর রস দিয়ে ফিনিশিং দিন। চিকেন বা টরটিলা চিপসের সঙ্গে খেতে অসাধারণ।
আম খাওয়া শুধু মুখরোচক স্বাদের জন্যই নয়, স্বাস্থ্য রক্ষায়ও অনন্য। তবে যাদের অ্যালার্জি বা বিশেষ স্বাস্থ্য সমস্যা রয়েছে, তাদের অবশ্যই সাবধানে আম খেতে হবে এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্যও আম নিষিদ্ধ নয় বরং সঠিক উপায়ে খেলে উপকারই পাওয়া যায়।
Comments