ডায়াবেটিস রোগীদের রুটি খাওয়া কি ভালো না ক্ষতি?

ডায়াবেটিস রোগীদের স্বাস্থ্য সচেতন না হলেই বিপদ। নিয়মিত শরীরচর্চা ও শারীরিক পরীক্ষা গুরুত্বপূর্ণ। একইসঙ্গে খাদ্যতালিকায় স্বাস্থ্যকর খাবার রাখতে হবে। এমন কিছু খাওয়া যাবে না, যা ডায়াবেটিস বাড়িয়ে তুলে এবং শরীরের ক্ষতি করে। এ জন্য এই রোগীরা কী খাবেন, কী এড়িয়ে চলবেন―তা নিয়ে চিন্তিত থাকতে হয়।
ডায়াবেটিসের রোগীদের খুব সাধারণ খাবার হচ্ছে রুটি। অধিকাংশ রোগীই নির্ভাবনায় এই রুটি খেয়ে থাকেন। কিন্তু সম্প্রতি রুটি খাওয়া নিয়েও নানা বিতর্ক ও চর্চা দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন মাধ্যমে। অনেকেই বলছেন, ডায়াবেটিসের রোগীদের রুটি খাওয়া ঠিক নয়। এতে ক্ষতি হয়। কিন্তু আসলেই কী তাই? এ নিয়ে ভারতীয় একটি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন মুম্বাইয়ের মীরা রোডের ওয়াকহার্ট হাসপাতালের সিনিয়র ডায়েটিশিয়ান রিয়া দেশাই। এবার তাহলে এ ব্যাপারে জেনে নেয়া যাক।
এ পুষ্টিবিদ বলেন, জোয়ার, ফিঙ্গার মিলেট (রাগি) এবং বাজরার (মুক্তা বাজরা) মতো বাজরা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য আশীর্বাদ হিসেবে বিবেচিত হয়। কেননা, এসবে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম এবং উচ্চ পরিমাণ ফাইবার রয়েছে। এসব শস্য রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে।
রিয়া দেশাই বলেন, বাজরা শরীরে ধীরে ধীরে ভেঙে যায়। অবিচ্ছিন্নভাবে শক্তি প্রকাশ করে এবং গ্লুকোজ উঠানামা রোধ করে। বাজরা প্রয়োজনীয় ভিটামিন, খনিজ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ। যা ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে উচ্চ অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য পরিচিত।
তিনি আরও বলেন, বাজরা ম্যাগনেশিয়ামেও ভরপুর। এটি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ডায়াবেটিস থাকলে এবং রক্তে শর্করার মাত্রা বজায় রাখতে লড়াই করে। এ জন্য প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় বাজরা রাখা ভালো।
এছাড়া বেঙ্গালুরুর সাকরা ওয়ার্ল্ড হসপিটালের ইন্টারনাল মেডিসিন অ্যান্ড ডায়াবেটোলজির এইচওডি ডা. সুব্রত দাস বলেন, মানুষের প্রোটিন প্রক্রিয়াকরণের জন্য প্রোটেসের মতো হজম এনজাইম রয়েছে। কিন্তু এটি গ্লুটেনকে পরিপূর্ণভাবে ভাঙতে পারে না। অধিকাংশ মানুষ অজীর্ণ গ্লুটেন সহ্য করতে পারলেও কারও কারও ক্ষেত্রে এটি মারাত্মক অটোইমিউন প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। যা সিলিয়াক ডিজিজ নামে পরিচিত এবং অন্ত্রের ক্ষতি করে।
এ চিকিৎসক বলেন, সিলিয়াক ডিজিজবিহীন অন্যরা গ্লুটেন গ্রহণের পর ফোলাভাব, ডায়রিয়া, মাথাব্যথা বা ত্বকের ফুসকুড়ির মতো সমস্যা অনুভব করতে পারে। ধারণা করা হয়, গ্লুটেনের পরিবর্তে এফওডিএমএপি (ফেরেন্টেবল অলিগোস্যাকারাইডস, ডিস্যাকারাইডস, মনোস্যাকচারাইডস এবং পলিওলস) নামক কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ করার কারণেই এমন হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
কয়েক শতাব্দী ধরে মানুষ গ্লুটেনযুক্ত খাবার গ্রহণ করছে, যা প্রোটিন, দ্রবণীয় ফাইবার ও পুষ্টি সরবরাহ করে। চিকিৎসক সুব্রত দাস বলেন, গোটা শস্য থেকে পাওয়া গ্লুটেন স্বাস্থ্যকর ব্যক্তিদের জন্য ক্ষতিকর নয়, যদি হজম করতে পারা যায়। তবে গম প্রায়ই স্ন্যাক ক্র্যাকার এবং আলুর চিপসের মতো প্রসেসড ফুডে ব্যবহার হয়, ফলে পুষ্টির মান হারায়। গ্লুটেন মুক্ত ডায়েটে যারা প্রক্রিয়াজাত খাবার খান, তাদের ওজন বৃদ্ধি ও রক্তে শর্করার মতো স্বাস্থ্যজনিত সমস্যা হতে পারে। মূলত, সমস্যাটি প্রক্রিয়াজাত খাবারগুলোয় সোডিয়াম, চিনি ও অ্যাডিটিভগুলো, গ্লুটেন নিজে নয়।
এ চিকিৎসক সতর্ক করে বলেন, যাদের গমে অ্যালার্জি, সিলিয়াক ডিজিজ, গ্লুটেন অসিহষ্ণুতা বা গ্লুটেন অ্যাটাক্সিয়া রয়েছে, তারা গ্লুটেন খাওয়ার ফলে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যার মুখে পড়তে পারেন। বাজরা রুটি, পোরিজ, পানীয় ও ফ্ল্যাটব্রেডের মতো রেসিপিগুলো ভালো কাজ করে। বাজরা দুই ধরনের- ছোট (গৌণ) এবং বড় (মেজর)। প্রাচীনতম শস্যের মধ্যে একটি জন্মাতে পারে এবং হাজার হাজার বছর ধরে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং আফ্রিকাজুড়ে প্রধান খাদ্য হয়ে উঠেছে এটি।
Comments