অতিরিক্ত আঁটসাঁট পোশাকের যত প্রভাব

নিজের সুবিধা বিবেচনা করে সবসময় স্বাচ্ছন্দ্য দেয় এমন পোশাক নির্বাচন করা উচিত বলেন ফ্যাশন সচেতনরা। আবহাওয়া, উপলক্ষ্য এবং অন্যান্য আরও কিছু বিষয় বিবেচনা করে পোশাক নির্বাচন করা হয়। তবে অনেকেই আছেন যারা ফ্যাশনের অংশ হিসেবে অতিরিক্ত আঁটসাঁট পোশাক পরেন। তবে এ ধরনের পোশাক নির্বাচনের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞরা সচেতন হতে বলেছেন। কারণ অতিরিক্ত আঁটসাঁট পোশাক নিয়মিত পরলে শারীরিক নানা জটিলতা দেখা দিতে পারে। প্রথম দিকে সমস্যা তেমন তীব্র না হলেও, দীর্ঘমেয়াদে এসব পোশাক শরীরের জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের এক প্রতিবেদনে সিকে বিরলা হাসপাতালের অভ্যন্তরীণ চিকিৎসা বিভাগের প্রধান পরামর্শদাতা ড. নরেন্দ্র সিংলা জানান, অতিরিক্ত আঁটসাঁট পোশাক শরীরে কীভাবে প্রভাব ফেলে, তা বুঝতে হলে আমাদের শরীরের প্রতিক্রিয়া বোঝা জরুরি। আঁটসাঁট পোশাক পরার ক্ষতিকর দিক আলোচনা করতে গিয়ে তিনি যেসব সমস্যা উল্লেখ করেছেন তা হলো-
১. ত্বকে জ্বালা ও র্যাশ: অতিরিক্ত আঁটসাঁট জামাকাপড় শরীরে ঘর্ষণ তৈরি করে, যা লালচে দাগ, চুলকানি বা র্যাশের কারণ হতে পারে। বিশেষ করে যেখানে পোশাক বারবার ঘষে, সেখানে সমস্যা বেশি হয়।
২. স্নায়ু চাপে পড়ে: অঙ্গ বিশেষে আঁটসাঁট কাপড়ের কারণে স্নায়ু চাপে পড়ে। এতে হাত বা পায়ে ঝিনঝিন, অসাড়তা বা ব্যথা অনুভূত হয়। নিয়মিত চাপ পড়লে এটি স্থায়ী সমস্যা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
৩. শ্বাস-প্রশ্বাসে অসুবিধা: চেস্ট বা পেটের চারপাশে আঁটসাঁট পোশাক ডায়াফ্রামকে স্বাভাবিকভাবে চলাচল করতে দেয় না। এতে শ্বাস ছোট হয়ে আসে, অক্সিজেন গ্রহণ কমে যায়, ক্লান্তি আসে।
৪. রক্ত সঞ্চালনে বিঘ্ন:পায়ের বা কোমরের আশপাশে আঁটসাঁট পোশাক রক্ত চলাচল বাধাগ্রস্ত করে। এতে অস্বস্তি, পা ফুলে যাওয়া, এমনকি ভারিকোজ ভেইন বা ব্লাড ক্লট পর্যন্ত হতে পারে।
দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা: অতিরিক্ত আঁটসাঁট পোশাকের কারণে শরীরে অনেক সময় দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা হয় বলছেন বিশেষজ্ঞরা। এই সমস্যাগুলোর মধ্যে রয়েছে:
হজমে সমস্যা: পেটের চারপাশে চাপে থাকলে অ্যাসিড রিফ্লাক্স, আইবিএস বা জিইআরডি-র মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। আঁটসাঁট পোশাক পেটের অ্যাসিড ওপরে ঠেলে দেয়, গ্যাস ও বুকে জ্বালাপোড়া সৃষ্টি করে।
ইনফেকশনের ঝুঁকি বাড়ে: বিশেষ করে নারীদের ক্ষেত্রে আঁটসাঁট পোশাক, বিশেষত আঁটসাঁট আন্ডারগার্মেন্ট, আর্দ্রতা ধরে রাখে। এতে ইস্ট ইনফেকশন বা অন্যান্য ছত্রাক সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
দীর্ঘমেয়াদি স্নায়ুব্যথা: চাপের কারণে স্নায়ুর ওপর প্রভাব স্থায়ী হতে পারে। ঝিনঝিন, অসাড়তা, এমনকি ব্যথা স্থায়ী রূপ নিতে পারে, যা পরবর্তীতে চিকিৎসা করেও পুরোপুরি সেরে না-ও উঠতে পারে।
রক্ত চলাচলের দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা: আঁটসাঁট কাপড় দীর্ঘদিন পরলে ভারিকোজ ভেইন ও এমনকি ডিপ ভেইন থ্রম্বোসিস-এর মতো মারাত্মক অবস্থার আশঙ্কা থাকে।
অস্থি ও মাংসপেশিতে চাপ: কোমরে আঁটসাঁট বেল্ট বা পোশাক পিঠ ও ঘাড়ের পেশিতে চাপ সৃষ্টি করে। এতে পেশিতে টান পড়ে, এবং দীর্ঘমেয়াদে তা ঘাড়, পিঠ বা হাঁটুর ব্যথায় পরিণত হয়।
শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা: ঘন ঘন ছোট ছোট শ্বাস নেওয়ার অভ্যাস গড়ে উঠলে শ্বাসতন্ত্র দুর্বল হয়ে পড়ে। যারা হাঁপানি বা অন্যান্য শ্বাসজনিত সমস্যায় ভোগেন, তাদের জন্য এটি আরও ঝুঁকিপূর্ণ।
ত্বকের দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি: চিরুনি ঘর্ষণের ফলে ত্বকে একজিমা বা ডার্মাটাইটিস হতে পারে। যদি সমস্যা দীর্ঘদিন চলতে থাকে, তাহলে ইনফেকশন পর্যন্ত হতে পারে।
নিয়মিত অতিরিক্ত আঁটসাঁট পোশাক পরা শুধু অস্বস্তি বা অল্পস্বল্প ত্বকের সমস্যা তৈরি করে না, বরং দীর্ঘমেয়াদে এটি আমাদের শরীরের জন্য ভয়াবহ ক্ষতির কারণ হতে পারে। শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা থেকে শুরু করে হজমের গোলমাল, নার্ভের ব্যথা, সংক্রমণ, এমনকি রক্তনালির জটিলতাও সৃষ্টি হতে পারে। তাই ফ্যাশনের কথা মাথায় রাখলেও স্বাস্থ্যের ব্যাপারে সচেতন থাকা অত্যন্ত জরুরি। আরামদায়ক, সঠিক মাপের পোশাক পরাই শরীর ও মন দুটোই সুস্থ রাখার চাবিকাঠি। মনে রাখতে হবে, স্টাইলের চেয়ে স্বাস্থ্যের গুরুত্ব অনেক বেশি।
Comments