কর্মীদের মানসিক স্বাস্থ্যে কর্মস্থলের প্রভাব
মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে পরিবেশের ভূমিকা রয়েছে এমনটাই বলেন মনোবিদরা। একাধিক গবেষণা করেছেন তারা এ বিষয়ে। পরিবেশ বলতে কেবল ঘরের কথা বলা হয় না বরং কর্মক্ষেত্রের পরিবেশের বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন গবেষণায় মনোবিদরা এমনটাই জানিয়েছেন। কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ কর্মীদের মানসিক স্বাস্থ্যে কীভাবে ভূমিকা রাখে সে বিষয়ে চ্যানেল 24 অনলাইনের সঙ্গে বিস্তারিত কথা বলেছেন সাইকোলজিস্ট ওয়াহিদা পারভীন।
মানসিক স্বাস্থ্য: বর্তমান সময়ে মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে গুরুত্ব দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে আমরা অনেক ভালোভাবে জানি না মানসিক স্বাস্থ্য কী। এই বিষয়টি নিয়ে ওয়াহিদা পারভীন বলেন, মানসিক স্বাস্থ্য কি এটা জানা জরুরি। বিষয়টা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকলে অনেক কিছু সহজ হয়ে যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সংজ্ঞা অনুযায়ী, একজন মানুষকে আমরা তখনই সুস্থ বলবো যখন সে সামাজিক, শারীরিক এবং মানসিকভাবে সুস্থ থাকবে।
তিনি আরও বলেন, সুস্থ বলতে এই তিনটি শর্ত মেনে ভালো থাকা। কেবল শারীরিকভাবে সুস্থ-সবল থাকাই ভালো থাকা নয়। যখন একজন মানুষ তার স্ট্রেস, মুড সুইয়িং, এবং এনজাইটি নিজেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে তাহলে আমরা ধরে নিবো সে মানসিকভাবে সুস্থ আছে। কিন্তু যখন সে বুঝতে পারবে যে তার সমস্যা হচ্ছে তখন বুঝতে হবে সে মানসিক সমস্যার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে।
কর্মপরিবেশের সঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্যের সম্পর্ক: ওয়াহিদা পারভীন বলেন, যারা চাকরি করেন তাদের দিনের বেশিরভাগ সময় অফিসেই কাটে। আমাদের পরিবেশ অনেক সময় মানসিক সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই খুব স্বাভাবিকভাবে কর্মক্ষেত্রে পরিবেশের সঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্যের সম্পর্ক রয়েছে। এই বিষয়র গুরুত্ব তুলে ধরতেই এবারের বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবসে কর্মক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে দরকার একটি সুষ্ঠু কর্মপরিবেশ। কর্মক্ষেত্রে সুষ্ঠু পরিবেশ না থাকলে যেমন মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকে না। আর যখন মানসিক স্বাস্থ্যগত সমস্যার মধ্যে দিয়ে যেতে হয় তখন কর্মদক্ষতা বিঘ্নিত হয়। যখন একজন কর্মী মানসিকভাবে ঠিক থাকেন না তখন সে ভালোভাবে কাজ করতে পারবেন না। সে কারণে কাজের পরিবেশ অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
কর্মীদের মানসিক স্বাস্থ্যসহায়ক পরিবেশ: বর্তমান সময়ে আমাদের দেশের অনেক অফিস কর্মীদের মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখেন। এমনকি কিছু প্রতিষ্ঠানে কাউন্সিলর নিয়োগ দেয়া হয় বলে জানান সাইকোলজিস্ট ওয়াহিদা পারভীন। তিনি বলেন, কর্মক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য মানসিক স্বাস্থ্য-সহায়ক পরিবেশ দরকার। এ জন্য ম্যানেজমেন্টের পক্ষ থেকে কিছু উদ্যোগ নিতে হবে। কর্মক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য যা করা যেতে পারে:
- কর্মীদের সবার মধ্যে সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা। কর্মীদের সহযোগিতায় কাজের পরিবেশ যেমন উন্নত হয় সেই সঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্যে ইতিবাচক প্রভাব পরে।
- কর্মীদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করার গুরুত্ব বুঝতে হবে। খারাপ ব্যবহারের ফলে অনেক সময় কর্মীদের মানসিক স্বাস্থ্যে খুব বাজে প্রভাব পরে যার ফলে অনেক কর্মীদের ডিপরেশনে মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। তাই ম্যানেজমেন্টকে এই বিষয়টি গুরুও দেয়া জরুরি।
- নিয়মিত কর্মীদের কাজের মূল্যায়ন করে উন্নতির জন্য গঠনমূলক পরামর্শ দেয়া। এতে তারা উৎসাহী হবে এবং কাজে স্বস্তি পাবে যেটা দারুণ উপকারী।
- কর্মীদের সাফল্যকে উৎসাহিত করা এবং তাদের কাজের স্বীকৃতি দেয়া।
- পেশাগত ও ব্যক্তিগত জীবনে ভারসাম্য রক্ষায় নির্দিষ্ট কর্মঘণ্টা নির্ধারণ করে, সেটার সঠিক বাস্তবায়ন করা।
- কর্মীদের প্রাপ্য ছুটি ও পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা। কর্মীদের প্রাপ্য ছুটি নেয়ার সুযোগও থাকতে হবে। মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নত বিশ্বের অনেক দেশের কর্মঘণ্টা কমিয়ে আনছে। এমনকি কিছু দেশে সপ্তাহে ছুটি তিন দিও করা হয়েছে। কর্মক্ষেত্রে পরিবেশ ভালো রাখতে এই বিষয়টির দিকেও নজর দিতে হবে।
- কর্মস্থানে কর্মীদের নিরাপত্তার বিষয়টির দিকেও নজর দিতে হবে। বিশেষ করে নারী কর্মীদের ক্ষেত্রে। নিরাপত্তাহীনতা কর্মীর মানসিক স্বাস্থ্য প্রভাবিত করে। এই সমস্যা বিষণ্নতা, উদ্বেগ ও চাপজনিত রোগের দিকে নিয়ে যায়। সেক্ষেত্রে কাজের ক্ষেত্রেও প্রভাব দেখা যায়।
- প্রত্যেকের মানসিক চাপ মোকাবিলার ক্ষমতা বাড়ানো দরকার। সে জন্য কর্মক্ষেত্রে মানসিক চাপ মোকাবিলার বিষয়ে কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেয়া যেতে পারে। কর্মক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্য পরামর্শদাতা নিয়োগ করা যেতে পারে।