গর্ভাবস্থায় প্রসাধনী পণ্যের ব্যবহারে কি সন্তানের ক্ষতি হয়?
গর্ভাবস্থায় বা শিশুদের স্তন দানকারী মায়ের সন্তানের কথা ভেবে বিভিন্ন বিষয় নিয়েই সচেতন থাকতে হয়। এমনকি প্রসাধনী পণ্য ব্যবহারের ক্ষেত্রেও তাদের বেশ ভাবতে হয়। দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা বলা হয়েছে, গবেষণা থেকে জানা গেছে প্রসাধনীর অতিরিক্ত ব্যবহার রক্ত এবং বুকের দুধে পলি-ফ্লুরোঅ্যালকাইল পদার্থ (পিএফএএস)-এর মাত্রা বাড়ায়। আর এ জন্য শিশুর স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হয়। শিশুর শরীরে পিএফএএস ভয়াবহ ক্ষতি করে।
পিএফএএস: বর্তমানে বাজারের প্রায় সব প্রসাধনীতেই পিএফএএসের উপস্থিতি রয়েছে। পিএফএএসকে 'ফরএভার কেমিক্যাল'ও বলা হয় কারণ এটি পরিবেশ বা শরীর সঙ্গে মিশে গেলে সহজে দূর হয় না। নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে, এই রাসায়নিক পদার্থ শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করে। পিএফএএস রাসায়নিক যৌগের একটি বড় শ্রেণি, যেখানে প্রায় ১৫,০০০ প্রকারের রাসায়নিক রয়েছে। পিএফএএস যেহেতু দূর হয় না তাই এটা পরিবেশে থেকে যায় এবং শরীরে জমা হয়। এর ফলে ক্যানসার, কিডনি ও লিভারের সমস্যা, জন্মগত ত্রুটি, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার দুর্বলতা এবং অন্যান্য গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকি বাড়ে।
গবেষণার ফলাফল: একটি গবেষণা করা হয় দুই হাজার নারীর ওপর। যেখানে নারীর প্রসাধনীর ব্যবহারের ফলে সন্তানের ওপর কেমন প্রভাব পড়ে সেটা লক্ষ্য করা হয়। ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক এবং এই গবেষণার সহ-লেখক অ্যাম্বার হল বলেন, পিএফএএস শুধু রক্ত এবং বুকের দুধে উপস্থিত থাকে না। সময়ের সঙ্গে এটার মাত্রা বেড়েই চলেছে যেটার জন্য অরিরিক্ত প্রসাধনী ব্যবহার দায়ী। বিষয়টা সত্যি ভয়াবহ দিকে যাচ্ছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত প্রসাধনী পণ্য ব্যবহার করেছেন, তাদের রক্ত এবং স্তন দুধে পিএফএএসের মাত্রা অনেক বেশি। যারা প্রথম এবং তৃতীয় ত্রৈমাসিকে প্রতিদিন মেকআপ করেছেন, তাদের রক্ত এবং বুকের দুধে এই রাসায়নিকের মাত্রা ছিল যথাক্রমে ১৪ শতাংশ এবং ১৭ শতাংশ বেশি। আর যারা গর্ভাবস্থায় অন্তত দুইবার চুলের রঙ ব্যবহার করেছেন, তাদের শরীরে পিএফএএসের মাত্রা ৩৬ শতাংশের বেশি।প্রসবের পর নেল পলিশ ব্যবহারকারীদের রক্তে এর মাত্রা ছিল ২৭ শতাংশের।
মায়ের শরীরে পিএফএএসের মাত্রা বনাম শিশুর স্বাস্থ্যঝুঁকি: পিএফএএসের উপস্থিতি শিশুর জন্য বিপজ্জনক। শিশুর শরীর খুবই সংবেদনশীল আর এই রাসায়নিকের কারণে তাদের সারাজীবনের জন্য স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে বলছেন বিশেজ্ঞরা। পিএফএএস গর্ভকালীন ওজন কমানো, প্রিম্যাচিউর বেবি, বুকের দুধের পুষ্টিগুণ কমে যাওয়া, স্নায়ুতন্ত্রের সমস্যা তৈরি করে। এমনকি শিশুর জন্মের পর তাকে যেসব টিকা দেয়া হয় তার কার্যকারিতা কমানোর ঝুঁকিও থাকে।
আগের গবেষণাগুলোতেও একই রকম উদ্বেগজনক তথ্য পাওয়া গেছে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ত্রিশ হাজার আম্বিলিকাল কর্ডের থেকে রক্ত সংগ্রহ করা হয় নমুনা হিসেবে। পাশাপাশি দেখা যায় যুক্তরাষ্ট্রে মায়েদের শরীরে পিএফএএস এই রাসায়নিক পদার্থটির উপস্থিতি বিপজ্জনক মাত্রার রয়েছে।
কীভাবে ঝুঁকি কমানো সম্ভব:
বিশেষজ্ঞরা বলছেন একটু সচেতন হলেই শিশুদের পিএফএএসে ঝুঁকি থেকে রক্ষা করা সম্ভব। শিশুদের স্বাস্থ্যঝুঁকি কমাতে মায়েদের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশকেও সচেতন হতে হবে পিএফএএসের বিষয়ে। পাশাপাশি গর্ভাবস্থায় বা শিশুদের স্তন দানকারী মায়েরা সচেতন থাকতে হবে। শিশুদের স্বাস্থ্যঝুঁকি কমাতে যেসব পদক্ষেপ নিতে হবে:
খুব বেশি দরকার না হলে প্রসাধনী ব্যবহার না করা ভালো। আর যদি নিতেই হয় তবে অপ্রয়োজনীয় প্রসাধনী পণ্য ব্যবহার বন্ধ করতে পারেন মায়েরা।
এমন পণ্য বেছে নেয়া যেগুলো পিএফএএস মুক্ত। তবে, পিএফএএস চিহ্নিত করা সহজ নয়, কারণ এটি অনেক সময় পণ্যের গায়ে উল্লেখ থাকে না।
পিএফএএসের ব্যবহার প্রতিরোধে প্রতিটি দেশের সরকারকে সচেতন হতে হবে। বর্তমানে অনেক দেশ এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রে ক্যালিফোর্নিয়ার পিএফএএসের ব্যবহারের কিছু নিয়ম দেয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, এই গবেষণাটি গর্ভবতী এবং স্তন্যদানকারী মায়ের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেয়। সহজ কথায় বলা যায় পিএফএসের মতো রাসায়নিক পণ্য থেকে দূরে থাকা মা এবং শিশু দুজনের স্বাস্থ্যের জন্যই ভালো। প্রসাধনী ব্যবহারের ক্ষেত্রে মায়েদের সচেন হতে হবে কারণ পিএফএএস শিশুর বিপদের কারণ।