হঠাৎ মাংসপেশিতে টান লাগলে কী করবেন?
প্রায় প্রতিদিন আমাদের বিভিন্ন কাজ করতে হয়। আর বিভিন্ন সময় কাজ করতে গিয়েই মাংসপেশিতে টান লাগে। শরীরের মাংসপেশি বা টেন্ডনের টান পড়া বা আঘাত লাগা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে সাধারণ সমস্যা। বিশেষজ্ঞের ভাষায় মাসল পুল, মাসল সোরনেস, স্ট্রেইন, স্প্রেইন, ক্র্যাম্প, স্প্যাজম ইত্যাদি বলা হয়ে থাকে। হঠাৎ কোনো ভারী কাজ, খেলাধুলা, কিংবা দুর্ঘটনার ফলে ঘটতে পারে। বিশেষ করে রাতে ঘুমোনোর সময়ে পায়ের শিরায় টান ধরে যাওয়ার সমস্যা কমবেশি অনেকেরই আছে। ঠান্ডার সময়ে এই সমস্যা আরো বেড়ে যায়। এই ধরনের সমস্যা যদি সময়মতো সঠিকভাবে শনাক্ত ও চিকিৎসা না করা হয়, তবে তা দীর্ঘমেয়াদি জটিলতায় পরিণত হতে পারে।
মায়ো ক্লিনিকের এক প্রতিবেদনে এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা কথা বলেছেন। তারা বলছেন, মাংসপেশী বা টেন্ডনের আঘাতের প্রধান লক্ষণ হলো ব্যথা, ফোলা এবং নির্দিষ্ট স্থানে চাপ দিলে ব্যথার অনুভূতি। আঘাত গুরুতর হলে ক্ষতস্থানে ফাঁকা বা আলাদা অংশ অনুভূত হতে পারে। চিকিৎসকেরা শারীরিক পরীক্ষার মাধ্যমে এই ধরনের আঘাত শনাক্ত করেন। যদি প্রয়োজন হয়, তবে আল্ট্রাসাউন্ডের সাহায্যে ক্ষতিগ্রস্ত মাংসপেশী ও টেন্ডনের অবস্থা পর্যালোচনা করা হয়।
প্রাথমিক চিকিৎসা: মাংসপেশিতে টান লাগলে ব্যথা হয়। অনেকেই এই সমস্যাকে খুব বেশি আমলে নেন না। তবে ব্যথা পাওয়ার পর একটু সচেতন হলেই আরাম পাওয়া সম্ভব। মাংসপেশিতে টান লাগলে প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে চারটি বিষয়ের প্রতি জোড় দিয়েছেন চিকিৎসকরা। চিকিৎসকরা একে বলেন আরআইসি পদ্ধতি। পেশিতে আঘাতের পর প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে আরআইসিপদ্ধতি কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। হঠাৎ পেশীতে টান লাগলে ঘাবড়ে না গিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে এ কাজগুলো করুন।
বিশ্রাম: আঘাতপ্রাপ্ত স্থান খুব বেশি নাড়াচড়া করা যাবে না বরং বিশ্রামে রাখুন। ব্যথা বা অস্বস্তি তৈরি করে এমন কাজ এড়িয়ে চলুন। তবে সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় রাখা যাবে না।
বরফ: আঘাতের পরপরই বরফ বা ঠান্ডা পানির সংমিশ্রণে বানানো স্লাশ ব্যবহার করুন। দিনে ১৫-২০ মিনিট অন্তর ২-৩ ঘণ্টা পরপর বরফ দিন। অনেকেই গরম পানি দেন আঘাত পেলে, ভুলেই এই কাজটা করা যাবে না।
চাপ: আঘাতপ্রাপ্ত স্থানে চাপ দিলে আরাম পাবেন। আর এ কারণে ইলাস্টিক ব্যান্ডেজ ব্যবহার করুন। বাজারে এখন ইলাস্টিক ব্যান্ডেজ অনেক জনপ্রিয়, এগুলো বেশ আরামদায়ক। তবে অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ করবেন না, কারণ এটি রক্ত সঞ্চালনে বিঘ্ন ঘটাতে পারে।
উচ্চতা: আঘাতপ্রাপ্ত অংশকে হৃদযন্ত্রের সমান উচ্চতায় বা তার উপরে রাখার চেষ্টা করুন। যেমন পায়ে ব্যথা পেলে রাতে ঘুমানোর সময় পা বালিশের ওপর রাখতে পারেন। এতে করে এতে ফোলাভাব কমাতে সহায়তা করবে।
সতর্কতা: আঘাত পাওয়ার পর আমরা ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই ওষুধ খাই যা বিপদ ডেকে আনতে পারে। চিকিৎসকরা বলেন আঘাত পাওয়ার পর প্রথম ৪৮ ঘণ্টায় অ্যাসপিরিন, আইবুপ্রোফেন বা ন্যাপ্রোক্সেনের মতো ব্যথানাশক ওষুধ খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।, কারণ এগুলো রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। আঘাত গুরুতর হলে যৎ দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। সময় নষ্ট করকে বিপদের আশঙ্কা থাকে। একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসক পেশি পর্যবেক্ষণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। যদি পেশির সম্পূর্ণ ছিঁড়ে যায়, তবে সার্জারির প্রয়োজন হতে পারে।