প্রতিদিন ডিম খেয়ে হার্টের ক্ষতি করছেন না তো?
প্রোটিন সমৃদ্ধ ডিমকে সবচেয়ে উপকারী এবং পুষ্টিকর খাবার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এটি যুগ যুগ ধরে মানুষের দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় যুক্ত রয়েছে। ডিম অনেক ধরনের আছে, কিন্তু সবচেয়ে পরিচিত হলো মুরগির ডিম। ডিমে ভালো মানের প্রোটিন এবং বেশ কিছু ভিটামিন ও মিনারেল থাকে যা স্বাস্থ্যকর খাবারের অপরিহার্য অংশ। বিশ্বের অনেক জায়গায় ডিম একটি সহজলভ্য ও সস্তা খাবার।
অতীতে ডিম স্বাস্থ্যকর কিনা তা নিয়ে কিছু বিতর্ক ছিল, বিশেষত কোলেস্টেরল সম্পর্কিত। তবে পরিমিত ডিম খাওয়া স্বাস্থ্যকর, কারণ এটি প্রোটিন এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় পুষ্টির একটি ভালো উৎস হতে পারে। ডিম প্রোটিন ও ভিটামিনের ভালো উৎস। ডিম সঠিকভাবে রান্না করা এবং প্রস্তুত করা গুরুত্বপূর্ণ।
ডিম খাওয়ার উপকারিতাঃ ডিমের প্রোটিন পেশী সহ শরীরের টিস্যু বজায় রাখতে এবং মেরামত করতে সহায়তা করে। ডিমের মধ্যে ভিটামিন এবং খনিজ উপাদান রয়েছে যা মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুতন্ত্রের কার্যকরীভাবে কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয়। ডিমের পুষ্টিগুণ শক্তি বাড়াতেও সাহায্য করে।
ডিমে থাকা ভিটামিন এ, ভিটামিন বি ১২ এবং সেলেনিয়াম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। ডিমের কোলিন অ্যামাইনো অ্যাসিড হোমোসিস্টাইন ভেঙে ফেলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যা হৃদরোগে অবদান রাখতে পারে। এছাড়াও ডিমে ফোলেট থাকে, যা জন্মগত অক্ষমতা যেমন স্পাইনা বিফিডা প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে।
ডিমে থাকা লুটেইন এবং জেক্সানথিন ম্যাকুলার ডিজেনারেশন প্রতিরোধে সাহায্য করে, যা বয়সজনিত অন্ধত্বের প্রধান কারণ। ডিমের অন্যান্য ভিটামিনও দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়। ডিমের প্রোটিন দীর্ঘ সময়ের জন্য পেট ভরিয়ে রাখতে সহায়তা করে। এর ফলে বারবার ক্ষুধা লাগার প্রবণতা কমে।
ডিমের কিছু ভিটামিন এবং খনিজ ত্বক এবং চুলের জন্য উপকারী। এটি শরীরের টিস্যুলির ভাঙন রোধ করতে সহায়তা করে। ডিম খেলে ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী হয় যা যেকোনো রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করে।
ডিম এবং হার্টের স্বাস্থ্যঃ ডিম একটি অপেক্ষাকৃত কম-ক্যালোরি, পুষ্টি-ঘন খাবার যার প্রতিটিতে মাত্র ৭৮ ক্যালোরি থাকে, এতে প্রায় ৬ গ্রাম প্রোটিন থাকে। সুস্থ মানুষের জন্য সপ্তাহে একবার বা দুইবার তিন-ডিমের অমলেট খাওয়া ভালো। যদি কেউ উচ্চ-কোলেস্টেরল এড়াতে কুসুম ছাড়া ডিম খেতে চান তবে ডিমের সাদা অংশ বেছে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
যাদের হৃদরোগ বা উচ্চ কোলেস্টেরল রয়েছে তাদের ডিম খাওয়া কমাতে হবে। সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের সঙ্গে আলোচনার পর তাদের ডায়েট তৈরি করা উচিত।
ঝুঁকির কারণঃ যদিও ডিমে প্রচুর পুষ্টিগুণ রয়েছে, তবে প্রতিদিন খাওয়ার কিছু সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও হতে পারে।
কিছু গবেষণায় দেখা গেছে ডিম খেলে হৃদরোগ ও মৃত্যুর ঝুঁকি বেড়ে যায়। ডিমে উচ্চ মাত্রার খাদ্যতালিকাগত কোলেস্টেরল এবং স্যাচুরেটেড ফ্যাটের কারণে এটি হতে পারে। অনেক বেশি ডিম খাওয়ার ফলে হজমের অস্বস্তিও হতে পারে, যেমন ফোলাভাব, গ্যাস, ডায়রিয়া, পেটে ব্যথা, বদহজম এবং বমি।
ডিমের ওপর খুব বেশি নির্ভর করলে তা পুষ্টির ভারসাম্যহীনতার কারণ হতে পারে। প্রচুর ডিম খাওয়ার ফলে উচ্চ স্যাচুরেটেড ফ্যাটের কারণে ওজন বৃদ্ধি পেতে পারে, যার ফলে নন-অ্যালকোহলযুক্ত ফ্যাটি লিভার রোগও হতে পারে।