সুদহার বাড়লে মূল্যস্ফীতি না কমলেও ব্যবসার খরচ বাড়ে
মূল্যস্ফীতি কমাতে নীতি সুদহার কমানো অনেকগুলো আর্থিক বিবেচনার একটি পদক্ষেপ। বাজারে নিত্যপণ্যের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাওয়ায় সম্প্রতি এই নীতি সুদহার আবার বাড়ানো হয়েছে। দেশের অন্যতম প্রধান নীতি সুদহার রিপারচেজ অ্যাগ্রিমেন্ট বা রেপো রেট ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছর পঞ্চম দফায় বাড়ছে নীতি সুদহার যার মধ্যে তিনবারই বাড়িয়েছেন ড. ইউনুসের অন্তবর্তী সরকারের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর।
এতে করে কি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে? কাগজে কলমে সরকার বলবে কমেছে। কিন্তু বাজারে জিনিসপত্রের দামে এই মূল্যস্ফীতি কমার কোন প্রভাব খুব একটা নেই। বাংলাদেশ পরিসংখান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে, সেপ্টেম্বর মাসে দেশে মূল্যস্ফীতি কমেছে। এ মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ৯২ শতাংশ। তবে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের ওপরেই থাকছে।
বাস্তবতা হলো এ পর্যন্ত নীতি সুদহার বাড়ানোর পরেও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে তা কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারেনি। তারপরও কেন বাড়ানো হচ্ছে নীতি সুদহার? মূলত আইএমএফ-এর পরামর্শেই বাংলাদেশ ব্যাংক এই নীতি সুদহার বাড়িয়েছে। আইএমএফ-এর হিসেবে নীতি সুদহার প্রতি এক শতাংশ পয়েন্ট বাড়ালে বিপরীতে প্রথম এক বছরে মূল্যস্ফীতি শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ হারে কমে, এবং মুদ্রার বিনিময় হার ১ শতাংশ পয়েন্ট বাড়লে মূল্যস্ফীতি কমে শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ পয়েন্ট হারে।
বারবার নীতি সুদহার বাড়ানোয় ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। এর প্রভাবে একদিকে গ্রাহক পর্যায়ে ঋণের খরচ বাড়ছে, অন্যদিকে বেসরকারি খাতে কমছে ঋণপ্রবাহ। সুদহার বাড়ার বিরূপ প্রভাব পড়ছে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগে। ব্যাংকাররা বলছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক পলিসি রেট বাড়ানোর কারণে অর্থ সরবরাহ আরও সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে, যার ফলে ব্যাংকগুলো ঋণ প্রবাহও কমছে।
অবস্থা বেশ সঙ্গীন। একদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি সুদহার বাড়ছে, অন্যদিকে, সরকার ঘাটতি বাজেট মেটাতে ব্যাংকগুলো থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ নিচ্ছে। ফলে বাজারে তারল্য সংকটের পরিবেশ তৈরি হচ্ছে। ব্যাংকের তারল্য সংকট বাড়লে গ্রাহকদের থেকে তখন উচ্চ সুদে আমানত সংগ্রহ করতে হবে। এতে করে অর্থনীতি ছোট হবে, ঋণ নিয়ে যারা ব্যবসা সম্প্রসারণের চেষ্টা করেছিলেন তারা বিপদে পড়বেন এবং বিদেশি বিনিয়োগও নিরুৎসাহিত হবে। এতে করে বেকারত্ব আরও বাড়বে।
তাই সুদহার বাড়িয়ে বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের কৌশলের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। গত বছরের জুনেও ব্যাংক ঋণের সুদের হার ছিল ৯ শতাংশ। বর্তমানে সেটি বাড়তে বাড়তে ১৪-১৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সম্প্রতি আরেক দফা নীতি সুদহার বাড়িয়েছে। এতে আরেক দফা ব্যাংকঋণের সুদহার বাড়তে শুরু করেছে।
মানুষ কম কিনছে। বিশেষ করে একেবারে অত্যাবশ্যকীয় নয় এমন পণ্যের চাহিদা বাজারে কমে গেছে। এমন অবস্থায় সুদহার বাড়ানোর ফলে ব্যবসা—বাণিজ্যে নতুন করে স্থবিরতার আশংকা দেখা দয়েছে। ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে বড় সময় ধরে ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষতি হয়েছে। এখনকার পরিস্থিতির কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য নতুন করে চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়েছে।
সুদহার বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ার কারণে শুধু ঋণখেলাপিই বাড়বে। নতুন করে কর্মসংস্থান হবে না। এ অবস্থায় ব্যবসায়ীরা চরম হতাশায় ভুগতে শুরু করেছেন।
লেখক: সাংবাদিক