স্টার সিনেপ্লেক্সে মানবতা বনাম কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দ্বন্দ্ব

দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর দর্শকদের সামনে এসেছে আইকনিক 'সাই-ফাই' ফ্র্যাঞ্চাইজি 'ট্রন'-এর নতুন পর্ব 'ট্রন : এরিস'। তবে এটি নিছকই চোখ ধাঁধানো অ্যাকশন আর ভিজুয়ালের সিনেমা নয়। ব্রিটিশ অভিনেত্রী জোডি টার্নার স্মিথের মতে, এই ছবি প্রযুক্তি এবং মানবতা এই দুইয়ের জটিল সংযোগ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা শুরু করবে। ছবিতে জার্মন লেটো অভিনয় করেছেন এরেস চরিত্রে; এক অত্যাধুনিক ডিজিটাল প্রোগ্রাম, যাকে একটি বিপজ্জনক মিশনে ডিজিটাল জগৎ থেকে পাঠানো হয় বাস্তব দুনিয়ায়।
মানবজাতির সাথে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআইয়ের 'শরীরে-শরীরে' এই প্রথম সাক্ষাৎ। কোডের সাথে বিবেকের এই সংঘর্ষ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে ছবিটি। গ্রেটা লি অভিনীত এনকম সিইও ইভ কিমের সাথে এরেস যখন অপ্রত্যাশিত মানুষে ভরা এক জগতে নিজের প্রোগ্রামিং এবং স্থান নিয়ে প্রশ্ন করতে শুরু করে, তখন তার পাশেই- তবে বেশির ভাগ সময় তার উল্টো দিকে থাকে তার সেকেন্ড-ইন-কমান্ড 'অ্যাথেনা'।
এই চরিত্রেই অভিনয় করেছেন টার্নার-স্মিথ। নিজের চরিত্র প্রসঙ্গে অভিনেত্রী বলেন, 'যখন কোনো চরিত্র বিশৃঙ্খলার (কেওস) প্রতিনিধিত্ব করে, সেটি সবসময়ই মজার। নিজস্ব কায়দায় অ্যাথেনা সেই বিশৃঙ্খলা, যা সূক্ষ্মতা বা নুয়্যান্সকে ব্যাখ্যা করতে না পারার কারণে জন্ম নিতে পারে।' টার্নার স্মিথের মতে, এই নতুন অভিজ্ঞতা অ্যাথেনাকে পরিবর্তন করছে এবং সূক্ষ্মতা ব্যাখ্যা করাই চরিত্রটির মূল সংগ্রাম। নাইন ইঞ্চি নেইলসের রোমাঞ্চকর সাউন্ডট্র্যাক, শ্বাসরুদ্ধকর ভিজুয়াল এবং গতিময় অ্যাকশনের মতো ভক্তদের প্রত্যাশিত সব উপাদানের পাশাপাশি, ছবিটি দর্শকদের চিন্তার খোরাকও জোগাবে বলে মনে করেন ৩৯ বছর বয়সী এই অভিনেত্রী। তিনি বলেন, 'আমি চাই মানুষ সিনেমা দেখে গিয়ে আলোচনা করুক।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআইয়ের খারাপ দিক নিয়ে এত বেশি কথা হয়; কিন্তু আমি চাই মানুষ ইভ কিমের মতো করে ভাবুক, যিনি ভাবছেন, 'কীভাবে আমরা এই প্রযুক্তিকে মানবকেন্দ্রিক রাখব? কীভাবে আমরা এটিকে বিশ্বকে আরো ভালো করার জন্য ব্যবহার করব?' টার্নার স্মিথ আরো যোগ করেন, 'আমাদের সিনেমা এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দিচ্ছে না; কিন্তু প্রশ্নটির মধ্যে অবস্থান করছে, যা আমি মনে করি যেকোনো চলচ্চিত্রের জন্য জরুরি। এটি আপনাকে ভাবাবে এবং কথা বলতে উৎসাহিত করবে। আশা করি, কোনো ভবিষ্যতের প্রোগ্রামার এই সিনেমাটি দেখবে, যে এমন এক প্রতিভা হবে যে এরেসের মতো একটি প্রোগ্রাম তৈরি করে বিশ্বকে উন্নত করবে।
পরিচালক জোয়াকিম রনিং স্বীকার করেছেন, ছবিটি এআই নিয়ে তার নিজের মিশ্র অনুভূতিকে প্রতিফলিত করে। সিনেমাটি কি একটি ইউটোপিয়া (আদর্শ জগত) নাকি ডিস্টোপিয়া (দুঃস্বপ্নময় জগত) দেখায় এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, 'আমার মনে হয় দুটোরই কিছুটা আছে। আমার মিশ্র আবেগ রয়েছে। একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা এবং শিল্পী হিসেবে আমি কিছুটা উদ্বিগ্ন, আমি আশা করি আমরা সাবধানে এবং কিছু সুরক্ষামূলক বেড়া বা গার্ডরেইল দিয়ে এআইয়ের সাথে এগিয়ে যেতে পারব। তবে অন্যদিকে, এটি মানবতাকে এগিয়ে নিতে এবং এমন কিছু সমস্যার সমাধান খুঁজে পেতেও সাহায্য করতে পারে, যা আমরা অন্যভাবে পারতাম না।' টার্নার স্মিথের কাছে চিত্রনাট্য পড়ার মুহূর্ত থেকেই 'ট্রন : এরিস'-এর আবেগিক গভীরতা স্পষ্ট ছিল। তিনি বলেন, 'এতে হৃৎপিণ্ড ছিল, কৌতুক ছিল- এটি কত মজার ছিল তা আমাকে মুগ্ধ করেছে; আমি এটি আশা করিনি এবং এটি ছিল কুল, আপনারা জানেন?'
বিশেষ করে লেটোর সাথে কাজ করার অভিজ্ঞতাকে তিনি ফলপ্রসূ বলে বর্ণনা করেন। তার সাথে আমার দারুণ সময় কেটেছে। তিনি একজন 'ট্রন হেড'। তিনি এই ফ্র্যাঞ্চাইজিটির একজন বিশাল ভক্ত। আর তিনি এটিকে কতটা ভালোবাসেন এবং এর যতœ নেন, তা আপনি অনুভব করতে পারতেন' বলেন টার্নার স্মিথ।
সেই উদ্দীপনা সংক্রামক ছিল বলেও তিনি জানান। অভিনেত্রী আশা করেন ভবিষ্যতে এই সিরিজের আরো ছবি তৈরি হবে। তিনি বলেন, 'আমি 'ট্রন ফোর'-এর জন্য মুখিয়ে আছি, যখন অ্যাথেনা ফিরে আসবে।'
Comments