করুণ পরিস্থিতিতে দিন পার করছেন প্রোডাকশন ম্যানেজাররা
তিনি ছিলেন চলচ্চিত্রের শুটিংয়ের প্রোডাকশন ম্যানেজার। হয়ে গেলেন সবজি বিক্রেতা। আবার কেউ বিক্রি করছেন চা, পান সুপারিও। সংসার চালাতে জীবিকার তাগিদে আরও নানা কাজে জড়িয়ে পড়েছেন প্রোডাকশন ম্যানেজাররা।
এ প্রসঙ্গে সংবাদমাধ্যমে কথা বলেন প্রোডাকশন ম্যানেজার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি মোহাম্মদ আবু জাফর। তিনি জানান, তাদের সংগঠনের সদস্য ২৫০ জন। কিন্তু নিয়মিত শুটিংয়ের কাজে আছেন হাতেগোনা ২০-৩০ জন। সংগঠনের ৮০ ভাগই বেকার জীবন যাপন করছেন।
আবু জাফর আরও বলেন, দীর্ঘ সময় বেকার থাকায় সংসার চালাতে ঢাকার মগবাজারে কেউ চা-পান বিক্রি করছেন। কেউ রাস্তায় ভ্যানে তরিতরকারি বিক্রি করছেন। ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালানোসহ নানা পেশায় যুক্ত রয়েছেন অনেকে।
দীর্ঘ ২৫ বছর মিডিয়ার ক্যারিয়ার পার করা প্রোডাকশন ম্যানেজার রিপন হাওলাদার। বেকার জীবন পার করায় এখন সবজি বিক্রেতার পথ বেছে নিয়েছেন।
সংবাদমাধ্যমে রিপন বলেন, 'রাস্তায় ভ্যানে করে এখন সবজি বিক্রি করি। কোনো দিন ভাবিনি, জীবনে এই দুঃসময় আসবে, বেকার হয়ে যাব! পরিবার নিয়ে অভাব-অনটনে থাকতে হচ্ছে। আমরা প্রোডাকশনের লোকেরা সবচেয়ে বেশি অবহেলিত।'
প্রোডাকশন ম্যানেজার মো. কামরুল বলেন, 'সন্তান, পরিবার নিয়ে খুবই খারাপ অবস্থায় রয়েছি। কল্পনাও করিনি, এমন জীবন যাপন করতে হবে।'
প্রোডাকশন ম্যানেজার হাফিজুর রহমান। শুটিংয়ের কাজ না থাকায় সংসার চালাতে এখন ঢাকার বেগুনবাড়ী এলাকায় হাতিরঝিলের পাশে চা, পান বিক্রি করেন। তিনি বলেন, 'কাজ যখন থাকে না তখন চা, পান, সিগারেট বিক্রি করি। মাস শেষেই পরিবারে টাকা পাঠাতে হয়। খুবই খারাপ অবস্থায় রয়েছি।'
প্রোডাকশন ম্যানেজার আব্দুল বলেন, করোনার সময়ের চেয়েও খারাপ অবস্থায় আছি। করোনার সময় অনেকে সহায়তা করেছে। সে সাহায্য দিয়ে বাচ্চার দুধ কিনেছি, নিজেরা ডালভাত খেয়েছি। কিন্তু এখন এমন অবস্থা, দুঃখ বলার মতো কেউ নেই!
কাজ পাওয়ার আশায় সকাল-সন্ধ্যা এফডিসিতে বসে থাকার সংখ্যাও কম নয়। দীর্ঘ সময় এফডিসিতে বসে থাকা এরশাদ মিয়া বলেন, আমাদের মধ্যে অনেকেই কাজ না থাকায় গ্রামে চলে গেছে। কাজ না পাওয়ায় আমরা ধারদেনা করে চলছি।
প্রোডাকশন ম্যানেজারদের এই অবস্থা প্রসঙ্গে মো. আবু জাফর আবু মনে করেন দেশের বর্তমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতি। ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই ও গণআন্দোলন শুরু হলে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করে শোবিজ পাড়ায়। যে কারণে চলতি বছরের জুলাই মাসেই কাজ হারিয়েছেন অনেকে। পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক হলেও প্রোডাকশন টিম এখনো পুরোপুরি শুটিংয়ে ফিরতে পারেনি। আর তাই মানবেতর জীবন যাপন করছেন প্রোডাকশন ম্যানেজাররা।