কুরিয়ারের গাফেলতিতে নাজেহাল অনলাইনের শত কোটি টাকার আম বাজার

স্বাদে অনন্য হওয়ায় সারাবিশ্ব জুড়েই খ্যাতি রয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমের। স্থানীয় বাজার ছাড়াও অনলাইনে বিক্রি হচ্ছে এসব আম। তাই ক্রেতাদের ঘরে আম পৌঁছে দেওয়ার অন্যতম মাধ্যম এখন কুরিয়ার সার্ভিস। তবে কয়েকদিন ধরে টানা বৃষ্টির মধ্যে কুরিয়ারের গাফেলতিতে রাস্তায় পচে নষ্ট হচ্ছে শত শত মন আম। বিশেষ করে অনলাইন ব্যবসায়ীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে অনলাইনে আম বিক্রিতে চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ সারাদেশে উদ্যেক্তাদের উত্থান হয়েছে শত শত যুবকের। তবে অনলাইনে যারা আমের ব্যবসা করেন। তাদের শেষ ভরসা হচ্ছে স্টিডফাস্ট কুরিয়ার সার্ভিস। কারণ সারাদেশে যতগুলো আমের অর্ডার হয় সবগুলো ক্রেতা হাতে আম পেয়ে কুরিয়ার প্রতিনিধিকে পেমেন্ট করেন। আর এ ক্যাশঅন ডেলিভেরির কাজটি প্রথম থেকে করে আসছেন স্টিডফাস্ট কুরিয়ার। তবে চলতি বছরে তাদের বিরুদ্ধে সেবা নিয়ে চরম অনিয়ম ও দুর্ভোগের অভিযোগে পাওয়া গেছে।
অনলাইন ব্যবসায়ীরা বলছেন, কুরিয়ারের গাফেলতি বুকিং দেওয়ার ৭-৮ দিন পার হলেও ভোক্তার কাছে পৌঁছাচ্ছেনা আম। এতে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে শত কোটি টাকার অনলাইন আমের বাজার। এমনকি কুরিয়ার কতৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দিয়েও কোন প্রতিকার পচ্ছেননা ব্যবসায়ীরা।
সম্প্রতি বিভিন্ন সেবা নিয়ে চরম অনিয়ম ও দুর্ভোগের অভিযোগে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার কানসাটে স্টেড ফাস্ট কুরিয়ার সার্ভিসের শাখা অফিস ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেছেন অনলাইন আম ব্যবসায়ীরা।
ঘরপণ্যে নামের একটি ফেসবুক পেজের স্বত্বাধিকারী অলিউল আরিফিন দোলন বলেন, গত ৭ দিন আগে কুরিয়ারে আমাদের ৭০ ক্যারেট আম বুকিং দিয়েছিলাম। বৃষ্টিতে ভিজে রাস্তায় পচে গেছে ১৮ ক্যারেট আম। এতে আমার ক্ষয়ক্ষতি ৩০ হাজার টাকা। এই টাকা আমাকে কে দিবে?
'বীরবল' অনলাইন পেজের স্বত্বাধিকারী রিমন বলেন, স্টেট ফাস্ট কুরিয়ার সার্ভিসের অনিয়মের কারণে গত বছরও আমরা অনেক ক্ষতির মুখে পড়েছিলাম। এবারও একই ধরনের সমস্যা দেখা দিয়েছে। তাই বাধ্য হয়ে আমরা কানসাট বুকিং সেন্টার ঘেরাও করেছিলাম। গত বছরে আমার ৫০০ পারসেল হারিয়ে আছে। সেটিরও কোন হিসেব পাচ্ছিনা। এখন যে আমগুলোর বুকিং হচ্ছে সেগুলো ৮-১০ পরে ডেলিভারি হচ্ছে। এতে ক্যারেটেই পচে যাচ্ছে আম। ক্রেতারা ক্যারেট খুলে পচা আম পাচ্ছেন। ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া উপায় দেখছিনা।
জিহান নামের আরও একজন অনলাইন ব্যবসায়ী বলেন, ৫০ ক্যারেট আম পাঠিয়েছিলাম ১০ তারিখে। এখন পর্যন্ত ক্রেতার হাতে আম যায়নি। রাস্তায় আছে দেখচ্ছে। এসব আম কি ভালো থাকবে। অবশ্যয় পচে গেছে। আমরা এখন নিরুপায় হয়ে গেছি।
চাঁপাই ফুড'-এর মালিক মাসুদ রানা, অনলাইন উদ্যোক্তা শিমুল আহমেদ বলেন, রাস্তায় নষ্ট হচ্ছে অনেক আম। আমরা একাধীকবার অভিযোগ দিয়েও ব্যবস্থা হয়নি। আমরা এখন কোথায় যাব। কার কাছে যাব ভেবে পাচ্ছিনা।
ঘটনার পর স্টেড ফাস্ট কুরিয়ারের কানসাট শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত ম্যানেজার আশিক আহমেদ বলেন, গত বছরের অভিযোগগুলোর সমাধান এখন সম্ভব নয়। তবে চলতি বছরের ১১, ১২ ও ১৩ জুনে যেসব ক্ষতির ঘটনা ঘটেছে, সেগুলো সমাধানে আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আশ্বাস দিয়েছেন।
স্টেড ফাস্ট কুরিয়ারের স্বত্বাধিকারী কে এম রিদওয়ানুল বারী জিয়ন বলেন, ঈদের ছুটির সময়ে কিছু কিছু পারসেলে সমস্য হয়েছিল। কারণ সে সময়ে রাস্তায় যানযট সৃষ্টি হয়েছিল। তাদের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ পণ্যের ৫০ শতাংশ টাকা ফেরত দিচ্ছি। গত বছরের কেউ পারসেল না পেলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবে। বিষয় খতিয়ে দেখা হবে।
Comments