কুষ্টিয়ায় বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গুলি জব্দ

এক সময়ের কুষ্টিয়া পুলিশের তালিকাভুক্ত চরমপন্থি নেতা জাহাঙ্গীর কবির লিপটনকে তিন সহযোগীসহ আটক করেছে সেনাবাহিনী। আজ শুক্রবার সকাল আটটায় সদর উপজেলার উজানগ্রাম ইউনিয়নের দূর্বচারা গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে তাকে আটক করা হয়। এ সময় তল্লাশী করে ৬টি বিদেশি পিস্তল, একটি লং ব্যারেল গান, ম্যাগজিন, গুলি ও দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
লিপটন বর্তমানে সেনাবাহিনীর কুষ্টিয়া ক্যাম্পের হেফাজতে রয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার এক সদস্য এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। জাহাঙ্গীর কবির লিপটন ওই এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা আজিজুর রহমানের ছেলে। তবে তার বিরুদ্ধে কয়টি মামলা রয়েছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
প্রত্যক্ষদর্শী ও গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে জানা গেছে,বৃহস্পতিবার দিনগত রাত আড়াইটা থেকে সেনাবাহিনীর কুষ্টিয়া ক্যাম্পের একটি দল লিপটনের বাড়িতে অভিযান পরিচালনা করে। দীর্ঘ অভিযানের পর সকাল আটটার দিকে লিপটন ও তার তিন সহযোগি রাকিব(৩৮),সনেট হাসান(৪৫) ও লিটন(২৬)কে ক্যাম্পে নিয়ে যায় সেনাবাহিনী। এ সময় তল্লাশী চালিয়ে ৬টি পিস্তল,১টি লং ব্যারেল গান,বিপুল পরিমাণ গুলি ও দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।
গোয়েন্দা সংস্থার এক সদস্য বলেন, চারজনকে আটক করে ক্যাম্পে নেওয়া হয়েছে। তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গুলি জব্দ করা হয়েছে। এ বিষয়ে সেনাবাহিনীর কুষ্টিয়া ক্যাম্পের সঙ্গে যোগাযোগ করলে বেলা ১২টার সময় সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হবে বলে জানানো হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সোর্স পরিচয় দেওয়া চরমপন্থী সংগঠন গণমুক্তিফৌজের একসময়ের দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা ছিলেন লিপটন। ২০১২ সালের ডিএসবির তালিকায় শীর্ষ চরমপন্থী হিসেবে তাঁর নাম রয়েছে।
নব্বইয়ের দশকে জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি। ছাত্র থাকাকালীন চরমপন্থি দল গণমুক্তিফৌজে নাম লেখায়। সে সময় আন্ডারওয়ার্ল্ডে শুটার হিসেবে পরিচিতি পায়। একপর্যায়ে নিজেই বাহিনী গড়ে তোলে।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জোরদার অভিযান শুরু করলে লিপটন ভারতে পালিয়ে যায়। সেখানে অবস্থান করেই সে দেশে নানা অপরাধ কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছিল। এরপর ২০১৩ সালে লিপটন দেশে ফিরে আসে। অভিযোগ রয়েছে, লিপটন স্থানীয় র্যাবের কিছু সদস্যকে হাত করে নিজেকে এ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কথিত সোর্স পরিচয় দিয়ে থাকে। প্রায় আড়াই যুগ ধরে সন্ত্রাসী জগতে তৎপর লিপটন। শুরুতে বিভিন্ন অপারেশনে কিলার হিসেবে কাজ করত।
সর্বশেষ আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন তার চাঁদা বাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে ভুক্তভোগীরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে লিখিতভাবে অভিযোগ করেন। পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফের হাত ধরে প্রকাশ্যে আসেন তিনি। তারপর থেকে এলাকায় নিয়মিত যাতায়াত করতেন।
এদিকে লিপটনকে আটকের পর আনন্দ মিছিল করেছে এলাকাবাসী। জাহাঙ্গীর কবির লিপটনের মা রেহেনা খাতুন বলেন,আমার ছেলে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতো। তাই প্রতিপক্ষরা শত্রুতা করে ধরিয়ে দিয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদি হাসান বলেন, একসময় পুলিশের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী ছিলেন লিপটন। তার বিরুদ্ধে ইবি থানায় বেশি কিছু জিডি রয়েছে।
Comments