সিলেট থেকে উড়াল দিলো কার্গো ফ্লাইট; ব্যবসা-বাণিজ্যের নতুন দ্বার উন্মোচন

অবশেষে দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান হলো। প্রথমবারের মতো সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ৬৬ টন গার্মেন্টস পণ্য নিয়ে স্পেনের উদ্দেশে উড়াল দিলো কার্গো বিমান। গতকাল রোববার রাত ৮টা ৭মিনিটে কার্গো ফ্লাইটের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন। এসময় বিশেষ এই বিমানটিকে ওয়াটার গার্ড স্যালুট দেওয়া হয়। এর মধ্য দিয়ে সিলেট থেকে ব্যবসা-বাণিজ্যের নতুন দ্বার উন্মোচিত হলো।
পরে এক অনুষ্ঠানে যোগ দেন বাণিজ্য এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। এ সময় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, সাফল্য কোনো গন্তব্য নয়, এটি একটি যাত্রা। আমরা আজকে যে সাফল্য অর্জন করলাম, এটি কোনোভাবেই গন্তব্য নয়, এটি একটি যাত্রা। ফ্যাসিস্ট সরকারের অনেক দায় আমাদের নিতে হচ্ছে। ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর আমাদের সর্বক্ষেত্রে সক্ষমতা বেড়েছে।
তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরা যে পরিমাণ অর্থ খরচ করে অন্য দেশের বিমানবন্দর ব্যবহার করতেন এখন তার থেকে অনেক কম খরচে দেশ থেকে কার্গো করতে পারবেন। এই কার্গো যাত্রার ফলে ঢাকা থেকে ইউরোপে কার্গো পরিবহন ব্যয় কমেছে ১৩ শতাংশ। ফ্যাসিস্ট আমলের সৃষ্ট সমস্যাগুলো সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকায় আমরা সমাধান করতে পেরেছি। স্বাধীনতার পর আজই প্রথম ঢাকার বাইরে থেকে কার্গো ফ্লাইট শুরু হয়েছে। এটি সিলেটবাসীর জন্য একটি ঐতিহাসিক দিন। ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কার্গো ফ্লাইট চালু হওয়া নিঃসন্দেহে যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
অনুষ্ঠানে মেক্সিকোতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুশফিকুল ফজল আনসারী, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ারভাইস মার্শাল মঞ্জুর কবির ভূইয়া, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব নাসরীন জাহান ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও সিলেটের সুধীজন উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে, প্রথমবারের সিলেট থেকে কার্গো সার্ভিস চালু হওয়ায় সিলেটের ব্যবসায়ীদেরও ব্যবসা-বাণিজ্যের দুয়ার খুলছে। সিলেট দিয়ে পণ্য রপ্তানির সাথে সাথে আমদানিরও সুযোগ তৈরি হচ্ছে। একইসাথে ব্যবসা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন খাতেরও সার্বিক উন্নয়ন হবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। তবে পণ্য রপ্তানীতে সিলেটের ব্যবসায়ীদের সম্পৃক্ত করতে হলে বিমানবন্দরে কোয়ারেন্টাইন সার্টিফিকেট, প্যাকেজিং ও পণ্য ফ্রিজিং ব্যবস্থা চালু করার দাবি জানিয়েছেন তারা।
ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও এয়ারফ্রেইট বিভাগের সহকারী কমিশনার মো. ফিরোজ হোসেন বিশ্বাস বলেন, 'সিলেট ওসমানী বিমানবন্দরে কার্গো ফ্লাইট চালু করতে আমরা দেড় বছর ধরে ট্রায়ালে ছিল। সব প্রস্তুতি শেষে রোবার এটি উদ্বোধন হলো। টার্মিনালে যারা দায়িত্বে আছেন তারাই কার্গো সার্ভিসের কাজে সমাপৃক্ত ছিলেন। তবে কার্গো বিমানে মালামাল তোলার জন্য কিছু স্টাফ ঢাকা থেকে এসেছে। এখান থেকে আমরা ১৮ জন নিয়োগ দিয়েছি।' তিনি আরও বলেন, আগামী ১ ও ৪ মে আরও দুটি ফ্লাইট পরিচালনা করা হতে পারে।
সিলেটের আমদানি রপ্তানিকারক মো. আবুল কালাম বলেন, এটি সিলেটবাসীর জন্য অত্যন্ত আনন্দের খবর। এতে শুধু ব্যবসায়ীরা লাভবান হবে না, বিভিন্ন সেক্টরের মানুষের আয়ের পথ বাড়বে। তিনি বলেন, সিলেটের ব্যবসায়ীরা কার্গো ফ্লাইটের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানী করা ছাড়াও আমদানীও করতে পারবেন। প্রথম কয়েক মাস হয়তো আমদানি করার পথ তৈরি হবে না। কিন্তু যেহেতু কার্গো ফ্লাইট সরাসরি সিলেটে আসবে, সে হিসেবে আমদানি করারও একটু ভালো সুযোগ রয়েছে।
সিলেট চেম্বার অব কমার্স ইন্ড্রাস্ট্রির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মুজিবুর রহমান বলেন, সিলেট থেকে গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানী করার সুযোগ নেই। সিলেটের ব্যবসায়ীরা কাঁচামাল রপ্তানী করার ভালো সুযোগ তৈরি হয়েছে। এই ফ্লাইট যাতে সব সময় চালু থাকে সে ব্যাপারে সরকারের নিকট জোর দাবি জানান তিনি। একই সঙ্গে বিমানবন্দরে কোয়ারেন্টাইন সার্টিফিকেট, প্যাকেজিং ও পণ্য ফ্রিজিং ব্যবস্থা চালু করা গেলে সিলেটের ব্যবসায়ীরা সরাসরি সিলেট থেকে কার্গো ফ্লাইটের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানী করতে পারবেন বলেও জানান তিনি।
ওসমানী বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, কার্গো টার্মিনালের প্রাথমিক ধারণক্ষমতা ১০০ টন। ইউরোপ ও যুক্তরাজ্যের বাজারের জন্য আধুনিক মানসম্পন্ন যন্ত্রপাতি, বিশেষ করে এক্সপ্লোসিভ ডিটেকশন সিস্টেম (ইউডিএস) যুক্ত রয়েছে এতে। ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পর এই প্রথম আরএ-থ্রি প্রটোকল অনুসরণ করে চালু হলো কোনো কার্গো টার্মিনাল। তবে এখনই সিলেটের উৎপন্ন পণ্য বিশেষ করে পচনশীল সবজি—এই টার্মিনাল দিয়ে রপ্তানি করা যাচ্ছে না। এ জন্য প্রয়োজন আধুনিক প্যাকিং হাউস, যা এখনো সিলেটে গড়ে ওঠেনি। বর্তমানে দেশের একমাত্র সরকারি প্যাকিং হাউস রয়েছে রাজধানী ঢাকার শ্যামপুরে।
গত ৮ এপ্রিল থেকে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে ভারত ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করায় বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানিতে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা বাড়তি খরচ হবে বলে জানান বাণিজ্য উপদেষ্টা। ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল হওয়ায় বাংলাদেশের রপ্তানি যাতে বাধাগ্রস্ত না হয়, সেজন্য প্রথম উদ্যোগ হিসেবে ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কার্গো সেবা চালু করলো সরকার।
Comments