সিলেটের ৬ শ্রমিককে ২০ হাজার টাকায় বিক্রি

সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার একটি গ্রাম থেকে কাজের উদ্দেশ্যে কক্সবাজার যাওয়া ৬ জন শ্রমিককে জনপ্রতি ২০ হাজার টাকা করে বিক্রি করে মানবপাচার চক্র। পাচারের ৬ দিন পর গতকার মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) রাত সাড়ে ৮টার দিকে তাদের উদ্ধার করে টেকনাফ থানা পুলিশ। ইতোমধ্যে এই বিষয়ে টেকনাফ মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, কাজের উদ্দেশ্যে কক্সবাজার গিয়ে নিখোঁজের ৬ দিন পর গত মঙ্গলবার রাতে তাদেরকে উদ্ধার করে টেকনাফ থানা পুলিশ। টেকনাফের রাজার ছড়া গ্রামের দুর্গম পাহাড় থেকে তাদেরকে উদ্ধার করা হয়।
উদ্ধারকৃতরা হলেন- জকিগঞ্জ উপজেলার ৪নং খলাছড়া ইউনিয়নের পশ্চিম লোহারমহল গ্রামের মৃত লুকুছ মিয়ার ছেলে রশিদ আহমদ(২০), ফারুক আহমদের ছেলে মারুফ আহমদ (১৮), আজির উদ্দিনের ছেলে শাহিন আহমদ (২১), মৃত দুরাই মিয়ার ছেলে এমাদ উদ্দিন (২২), সফর উদ্দিনের ছেলে খালেদ হাসান (১৯) ও মৃত সরবদির ছেলে আব্দুল জলিল (৫৫)
অপহৃতদের উদ্ধারের পর জানা গেছে, মানবপাচারচক্র মালয়েশিয়ায় পাঠানোর জন্য ছয়জনকে জনপ্রতি ২০ হাজার টাকা করে কিনে নেয়। তাদেরকে বিক্রি করে শহিদুল নামের এক ঠিকাদার। সেই ঠিকাদার ছাড়া আর কাউকেউ তারা চিনতে পারেনি। শহিদুলই তাদেরকে কাজের কথা বলে মানবপাচারকারীদের হাতে তুলে দেয়।
উদ্ধার হওয়া খালেদ হাসান বলেন, আমাদের যে ঠিকাদার ছিল তার শ্যালক এসে আমাদের খাওয়া দাওয়া করায়। এরপর আমাদেরকে একটি সিএনজি অটোরিকশায় তুলে দেয়। এর পর কয়েকবার অটোরিকশা বদলানো হয়। আমাদেরকে বলে কাজের সাইট একটু পরে। একটু পরে বলে বলে আমাদের জঙ্গলের ভিতর দিয়ে পাহারে নিয়া যায়। এরপর আমরা জানতে পারি আমাদের ঠিকাদার আমাদেরকে জন প্রতি ২০ হাজার টাকা করে বিক্রি করে দিয়েছে।
আব্দুল জলিল বলেন, শহিদুল নামে এক রাজমিস্ত্রির সাথে আমরা দুইমাস কাজ করেছি। এইসূত্রে তার সাথে পরিচয়। আমরা বাড়িতে যাওয়ার পর প্রতিদিন ৫ থেকে ৭ বার কল দিয়ে বলতো কাজে আসো তোমরা। বলতো ভাল কাজ আছে। ৫ তালা বিল্ডিংয়ে তোমরা কাজ করবা। শহিদুল আমাদের এখনে এনে দালালের কাছে বিক্রি করে দেয়। আমাদের খোঁজে যখন নিউজ হয়, ইন্টারনেটে আমাদের ছবি ছড়িয়ে পড়ে তখন তারা আমাদের বলে তোমাদের এনে আমরা আতঙ্কে আছি। তোমরা মালয়েশিয়া কি যাবে না। আমরা বলছি আমরা মালয়েশিয়া যাবো না, আমাদের বাড়ি পাঠিয়ে দাও। নিউজের কারণে পুলিশের আসা যাওয়া শুরু হয়। তখন তারা আমাদের রাতে ছেড়ে দেয়। এরপর পুলিশ আমাদের উদ্ধার করে। আমরা কাউকে চিনতে পারিনি। তবে দেখলে চিনতে পারবো।
এর আগে, গত ১৫ এপ্রিল বিকেলে ওই ৬ জন সিলেট থেকে থেকে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন। ১৬ এপ্রিল সকালে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার পৌঁছা পর্যন্ত পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও এরপর থেকে তাদের সকলের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। পরিবারের লোকজন বারবার তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও কারো কোনো সন্ধান পাচ্ছিলেন না। এরপর বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে তাদের খোঁজ চেয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এরপর মঙ্গলবার (২২এপ্রিল) রাতে সাড়ে ৮টার দিকে টেকনাফের রাজার ছড়া গ্রামের দুর্গম পাহাড় থেকে তাদের উদ্ধার করে টেকনাফ থানা পুলিশ।
টেকনাফ মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) হিমেল রায় বলেন, অপহৃত ৬ জনকেই উদ্ধার করা হয়েছে। একজনকে ছাড়া উনারা বাকি কাউকেই চিন্তে পারেন নাই। এই বিষয়ে একটি মামলা হয়েছে। সবাইকেই উদ্ধার করা হয়েছে। আজকে আদালতে তাদের তুলা হবে। তাদের জবানবন্দি নেওয়া হবে সেই অনুযায়ী পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কক্সবাজার পুলিশ এর অতিরিক্ত এসপি (অপরাধ) নাজমুস সাকিব খান বলেন, তাদের সকলকেই উদ্ধার করা হয়েছে। এইরকম আরো অনেক ঘটনায় ঘটেছে। সবাইকেই উদ্ধার করা হয়েছে। এইরকম ঘটনায় আরো অনেক মামলা চলমান রয়েছে।
Comments