টিসিবি পণ্য মিললো মুদি দোকানির বাড়িতে, উদ্ধার করলো জনতা

মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার উথলী ইউনিয়নে এক মুদি দোকানির বাড়ি থেকে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) পণ্য উদ্ধার করেছে স্থানীয় জনতা। মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) দুপুর ২টার দিকে উথলী পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় রোডের মুদি দোকানি নাজিমের বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয় ১৭ বোতল (৩৪ লিটার) সয়াবিন তেল ও ১৭ কেজি চিনি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, টিসিবির ডিলার উৎপল দাস উথলী ইউনিয়নের ৪, ৫, ৬, ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডে ১১০০ জন কার্ডধারীর মাঝে পণ্য বিতরণ করেন। কিন্তু গত শনিবার বিতরণ শেষ হওয়ার পর কিছু অবিক্রিত পণ্য নির্ধারিত গোডাউনে না রেখে তিনি তা পার্শ্ববর্তী মুদি দোকানি নাজিমের কাছে বেশি দামে বিক্রি করেন।
খবর পেয়ে স্থানীয় জনতা নাজিমের বাড়িতে গিয়ে ওইসব পণ্য উদ্ধার করে ডিলারের গোডাউনে জমা দেন। তবে ঘটনাটি জানার পর দুই ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় এলাকাবাসীর মাঝে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।
স্থানীয় এক সংরক্ষিত নারী ইউপি সদস্য ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রভাবশালী কয়েকজনকে 'ম্যানেজ' করে প্রশাসনকে অবহিত না করেই মালামাল ডিলারের গোডাউনে ফিরিয়ে দেন। অভিযোগ রয়েছে, তিনি মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ডিলার উৎপল দাসকে পালিয়ে যেতে সহায়তা করেন। ঘটনার পর থেকে ডিলার উৎপল দাস ও ইউপি সদস্য মনোয়ারা বেগম মুঠোফোন বন্ধ রেখে পলাতক রয়েছেন।
এদিকে অভিযুক্ত মুদি দোকানি নাজিম পণ্য কেনার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, "কিছুটা বেশি দামে পণ্য কিনেছি। এটা ভুল হয়েছে, ভবিষ্যতে এমন হবে না।"
স্থানীয়দের দাবি, ডিলার উৎপল দাস দীর্ঘদিন ধরেই টিসিবির পণ্য কালোবাজারে বিক্রি করে আসছেন। আগের সরকারে দলীয় প্রভাব খাটিয়ে এবং বর্তমানে সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্য, ট্যাগ অফিসারদের 'ম্যানেজ' করে এই অনিয়ম চালিয়ে যাচ্ছেন।
উল্লেখযোগ্য যে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে তিন শতাধিক কার্ডধারীর জন্য বরাদ্দকৃত চাল, চিনি, ডাল ও সয়াবিন তেলের কোনো খোঁজ মেলেনি।
উথলী ইউনিয়ন সচিব মো. গোলাম মোস্তফা বলেন, "এ ধরনের অনিয়মের বিষয়ে আমি অবগত ছিলাম না। আপনার মাধ্যমে জানলাম। ডিলার আমাকে কোনো তথ্য জানায়নি।"
এ বিষয়ে কথা বলতে গেলে ট্যাগ অফিসার মো. মিজানুর রহমান সাংবাদিকদের দেখে ঘটনাস্থলের কাছাকাছি এসেও ফিরে যান। তার বিরুদ্ধেও রয়েছে সরকারি অর্থ আত্মসাতসহ নির্বাচনী অনিয়মের অভিযোগ।
তবে ফোনে তিনি জানান, "টিসিবি পণ্য বাইরে বিক্রির সুযোগ নেই। এমন কিছু হলে তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জাকির হোসেন বলেন, "সুবিধাভোগী ব্যতীত অন্য কেউ টিসিবি পণ্য নিতে পারেন না। এমন কিছু হয়ে থাকলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।"
Comments