জলকেলী উৎসব ঘিরে পাহাড়ে সাজসজ্জা

বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি ধর্মীয় উৎসব মাহাঃ সাংগ্রাই পোয়েঃ বা জলকেলী উৎসব। পুরনো বছরের শুদ্ধ জলের মাধ্যমে দুঃখ গ্লানি মুছে ফেলে নতুন বছরটিকে গ্রহন করার নামই জলকেলী উৎসব' যাকে মারমা ভাষায় বলা হয় রিলং পোয়েঃ। এই উৎসবকে ঘিরে এরই মধ্যে আন্দন্দের আমেজ বিরাজ করছে বান্দরবানের পাহাড়ি জনপদ। প্রতিটি গ্রাম কিংবা মহল্লায় আনন্দের উৎসবের মাতোয়ারা পুরো পাহাড়ের মানুষ। রিলংপোয়েঃ কে ঘিরে পাহাড়ে শুরু হয়েছে সাজ সজ্জার কাজ। ব্যস্ত সময় পাড় করছেন বৌদ্ধ ধর্মালম্বীর তরুন তরূনীরা।
আগামী ১৩ এপ্রিল রবিবার 'পাইংছোয়াই' অর্থাৎ ফুল ছিঁড়ার দিন। ১৪ই এপ্রিল সোমবার বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি ধর্মীয় উৎসব মাহাঃ সাংগ্রাই পোয়েঃ বা জলকেলী উৎসব। সাংগ্রাই পোয়েঃ একদিন আগে রাতে কিংবা ভোর সকালে ইচ্ছেমতো ফুল ছিঁড়া হয়। এসব ফুল ব্যবহৃত হয় বুদ্ধের মূর্তি পূজা এবং বাড়ি সাজানোর কাজে। তারমধ্যে "সাংগ্রাই পাইং" নামের মেঘ সাদা রংঙের ফুলটিই সবথেকে জনপ্রিয়। এরপর থেকে শুরু হবে মাসব্যাপী রিলং পোয়েঃ বা জলকেলী উৎসব।

সাংগ্রাই এর প্রধান আকর্ষণ হল পানি খেলা যেটিকে মারমারা বলে "রিলং পোয়েঃ"। সাংগ্রাই উৎসবের শেষদিনে এই পানি খেলা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। মুলত: পুরনো বছরে দুঃখ ক্লান্তি মুছে নতুন বছরকে বরণ করতে ও একজনকে একজন পানি ছিটানো মাধ্যমে পাহাড়ের সকল মানুষ জড়ো হয়ে আনুন্দে মেতে উঠেন। এই উৎসবকে ঘিরে নতুন বছরকে বরণ করে নিতে সেজেছে পুরো পাহাড়। বান্দরবানে প্রতিটি পাহাড়ি গ্রাম ও মহল্লা জুড়ে চলছে বাঁশের তৈরী নৌকাসহ বিহারগুলোতে চলছে সাজ সজ্জার কাজ। এছাড়াও স্থানীয় বাজার ও মার্কেট গুলোতে পড়েছে কেনাকাটার ধুম। নতুন বছরকে বরণ ও পুরোনোকে বিদায় জানাতে এরই মধ্যে আনন্দে মেতেছেন পাহাড়ের বাসিন্দারা।
সাংগ্রাই উৎসব উদযাপন পরিষদ আয়োজক কমিটি জানিয়েছে, আসন্ন মাহাঃ সাংগ্রাই পোয়েঃ উৎসবকে ঘিরে নানা কর্মসূচি গ্রহন করা হয়েছে। ৮দিন ব্যাপী এই উৎসবে রয়েছে নানা আনুষ্ঠানিকতা। ১২ তারিখ শনিবার প্রথম দিনে ম্যারাথন দৌড়ক, ফুটবল প্রীতি ম্যাচ ও সাংগ্রাই লোকজ ক্রীড়া উৎসব, ১৩ তারিখে বর্ণাঢ্য র্যালী ও বয়োজৌষ্ঠ পূজা,১৪ তারিখে বুদ্ধস্নান্ব পিঠা তৈরী,১৫ তারিখে ঐতিহ্যবাহী বলীখেলা,তৈলাক্ত বাঁশ আরোহণ লোকজ ক্রীড়া,১৬ থেকে ১৭ তারিখ তিনদিনব্যাপী মৈত্রী পানি বর্ষণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বান্দরবান সদর উপজেলার সুয়ালক মাঝের পাড়া, রেইছা থলি পাড়া, জামছড়ি, বাঘমারা, বালাঘাটা, ডুলুপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকাজুড়ে চলছে নৌকা বানানোর প্রস্তুতি। নৌকা তৈরিতে গ্রামের যুবকরা বাঁশ কেটে কাঁধে করে নিয়ে আসছে প্রয়োজনীয় আনুষাঙ্গিক যন্ত্রাংশগুলো। গ্রামে তরুণরা দলবদ্ধভাবে মাঠে কাজ ্রে বুস্ত সময় পাড় করছেন। আবার কিছু কিছু গ্রামে ভ্যান গাড়ির সাহায্যে নিয়ে যাচ্ছে বাঁশ। নৌকার কারিগরও মাটি খুঁড়ে বাঁশগুলো গর্তে দিচ্ছে। অনেকে আবার করাত দিয়ে মাপজোখ করে কাটছে পরিমাপ মতন। এছাড়াও মারমা তরুণীরা স্বচ্ছ পানিয়ে দিয়ে বিহারে পরিষ্কারে কার্যক্রম চালাচ্ছে। দলবেঁধে সাঙ্গু নদীতে কাপড় চোপর পরিষ্কার করতে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন। সাংগ্রাই উৎসবকে ঘিরে এমন দৃশ্যপট চিত্র যেন প্রতিটি পাহাড়ি গ্রামে গ্রামে। তিনদিনের আয়োজন আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন বৌদ্ধ ধর্মালম্বীরা।
দুখিং পাড়া ও রেইছা বাসিন্দা প্রুমংউ ও উসাইনু মারমা বলেন, তিনদিন সাংগ্রাই উৎসবকে ঘিরে নৌকা তৈরী করা হচ্ছে। যাতে পানি খেলা সময় প্রস্তুতি নিতে পারি। যেহেতু পুরানো বছরকে বিদায় জানিয়ে নতুন বছরকে বরণ করে নিবো সেই জন্য আমারা ঢেলে সাজাচ্ছি। আর গ্রামে বিহারগুলোতে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা করছি। বছরে একটিবার আসে মারমাদের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি ধর্মীয় উৎসব মাহাঃ সাংগ্রাই পোয়েঃ।
সাংগ্রাই উৎসব উদযাপন পরিষদের সভাপতি চনুমং মারমা বলেন, মারমাদের সাংগ্রাই উৎসবকে ঘিরে আয়োজক কমিটিরা বিভিন্ন কর্মসূচী হাতে নেয়া হয়েছে। ৮ দিন ব্যাপী অনুষ্ঠানকে ঘিরে র্যালী,বয়োজৌষ্ঠ পুজা ও যেটা মুল আকর্ষণ মৈত্রী বর্ষণ বা পানি খেলা রয়েছে। এউ উৎসবের বিভিন্ন শ্রেনীর পেশায় মানুষ অংশগ্রহনের পাশাপাশি সহযোগীতা করার আহ্বান জানান।
বান্দরবান পুলিশ সুপার শহিদুল্লাহ কাউছার বলেন, বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ধর্মীয় উৎসব সাংগ্রাই পোয়েঃকে ঘিরে ৮দিন ব্যাপী কর্মসূচীতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিরাপত্তা জোড়দার করা হয়েছে। তাছাড়া প্রতিটি স্থানে সাদা পোশাকে, মোবাইল প্লাটুন ও গোয়েন্দা সংস্থাসহ তিনটি স্তরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সদস্যরা নিয়োজিত থাকবে।
Comments