মানিকগঞ্জে অনুষ্ঠিত হলো ঐতিহ্যবাহী 'জামাই মেলা'

মানিকগঞ্জের ঘিওরে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ২০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী 'জামাই মেলা'। প্রতি বছর দোল পূর্ণিমা উৎসব উপলক্ষ্যে আয়োজন করা হয় এই মেলার। তবে এবার পবিত্র রমজান মাসের কারণে ঈদের তিন দিন পর গত বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয় এই মেলা। মেলার আয়োজক উপজেলার পয়লা ইউনিয়নের বাঙ্গালা মুক্তা সংঘ। স্থানীয় স্কুল মাঠে তিন দিনের এ মেলা শেষ হয় গতকাল শনিবার।
আয়োজকরা জানান, জামাই মেলা নামে খ্যাত এ মেলার দ্বিতীয় দিন বৌ মেলা, তৃতীয় দিন সার্বজনীন মেলা হিসেবে পরিচিত। এ মেলাকে দোল মেলা, বাঙ্গালার মেলা বা মাছের মেলা নামেও ডেকে থাকেন স্থানীয়রা।
জানা যায়, মেলার সময় পুরো ইউনিয়নের মেয়ে আর জামাইকে দাওয়াত করে আনা হয়। আশপাশের গ্রামগুলোতে আত্মীয়স্বজনদের পদচারণার হিড়িক পড়ে যায়। তারপর মেলা থেকে জামাতারা বড় বড় মাছ, পান সুপারি আর মিষ্টি কেনেন। এ যেন এক অঘোষিত প্রতিযোগিতা। সেই মাছ শ্বশুরবাড়িতে নেওয়া হয়। তারপর মাছসহ নানা পদের তরকারি রান্না করে অতিথিসহ বাড়ির লোকজন খান। এটা এখানকার দীর্ঘ দিনের প্রচলিত রীতি। এ কারণে এটাকে 'জামাই মেলা' বলা হয়। এরপর মেয়ে জামাতাদের শ্বশুর বাড়ির পক্ষ থেকে দেওয়া হয় আকর্ষণীয় নানারকম পুরস্কার। ব্যতিক্রমী বাহারি পুরস্কারের মধ্যে রয়েছে মোবাইল ফোন, গরু, মহিষ, আসবাবপত্র, নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার ইত্যাদি।
দ্বিতীয় দিনের 'বৌ মেলায়' নববধূ ও বাবার বাড়িতে বেড়াতে আসা মেয়েরা মেলায় আসেন। স্বামীদের নিয়ে সারাদিন মেলায় ঘোরাঘুরি করেন ও প্রয়োজনীয় বিভিন্ন জিনিস কেনাকাটা করেন।
মেলায় মাছ ছাড়াও আসবাবপত্র, বাঁশ-বেতসামগ্রী, লৌহজাত দ্রব্য, ফলমূল, নানা ধরনের বাহারি মিষ্টি, বিন্নী খৈ, পানসুপারি, মৃৎশিল্প, কসমেটিকস, মুখরোচক নানা ধরনের খাবারের দোকানে ছিল উপচে পড়া ভিড়। মেলায় ছোট সাইজের মিষ্টির পাশাপাশি বিশাল এক থেকে দেড় কেজি ওজনের মিষ্টিও বিক্রি হয়। নাগর দোলা, শিশুতোষ খেলার সামগ্রী, মৃৎ শিল্প, আসবাবপত্র, মিষ্টি, কসমেটিকসের দোকানে ক্রয়-বিক্রয় চলে মেলা শেষ হওয়ার পরও কয়েক দিন পর্যন্ত। সরেজমিনে মাছের দোকানে গিয়ে দেখা যায়, ২ কেজি থেকে ২০ কেজি ওজনের মাছের সমারোহ। শতাধিক জেলে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ডালায় সাজিয়ে রেখেছেন। বিক্রিও হচ্ছে প্রচুর। এর মধ্যে বিভিন্ন নদীর বাঘাইর, আইড়, বোয়াল, কাতল, পাঙ্গাস, সিলভার কার্প, গ্রাস কার্প, চিতল ইত্যাদি। মেলায় কিশোর ও প্রবীণ ব্যক্তিদের মিনি ম্যারাথন দৌড় প্রতিযোগিতারও আয়োজন করা হয়। পরে বিজয়ীদের দেওয়া হয় মোবাইল ফোন, অ্যালুমিনিয়ামের কলস, দেয়াল ঘড়ি, জামা-কাপড়সহ বিভিন্ন পুরস্কার।
Comments