রাজধানীর খিলগাঁওয়ে অর্ধশতাধিক সুবিধাবঞ্চিতদের ঈদের উপহার প্রদান

প্রতিদিনের ব্যস্ত চলার পথে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের আনাগোনা আমাদের চোখে পড়ে। আমরা কেউ কেউ পাঁচ বা দশ টাকা সাহায্য করে নিজেদের কর্তব্যের সমাপ্তি টানি। অথচ আপনার-আমার মত সুবিধাবঞ্চিত শিশুরাও তো মানুষ, সামাজিক জীব হিসেবে এদেরও রয়েছে কিছু স্বপ্ন।
ঈদের জামায় খুশির সাঝ সবার সবার মাঝে ছড়িয়ে যাক এই শ্লোগানকে সামনে রেখে মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) বিকেলে রাজধানীর খিলগাঁও গর্ভ: স্কুল এন্ড কলেজ মাঠে "এসো গড়ি ফাউন্ডেশনের" পক্ষ থেকে দেড় শতাধিক পথশিশু, কিশোর-কিশোরীর মাঝে ঈদ উপহার প্রদান করা হয়েছে। সেই সাথে ছোট্ট ছোট্ট শিশুদের জন্য শুকনো খাবার আইটেম প্রদান করা হয়েছে।
প্রধান অতিথি, সংগঠনের উপদেষ্টা ও বাংলা পোস্টের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোহাম্মদ অলিদ বিন সিদ্দিক তালুকদার বলেন ; দেশের মোট জনসংখ্যার ৩ কোটিরও বেশি শিশু দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে। মোট জনসংখ্যার যেখানে ৪৫ ভাগই শিশু সেখানে জনসংখ্যার এই বিরাট অংশ যদি দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে, তাহলে উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব নয় কিছুতেই। মানুষের বেঁচে থাকার জন্য যে মৌলিক চাহিদাগুলো রয়েছে তাতে এই ছন্নছাড়া শিশুদের কোনো অধিকারই নেই। একটি উন্নয়নশীল দেশের অংশ হয়ে এই বিপুল সংখ্যক শিশু রোজ না খেয়ে রাস্তায় ঘুরে বেড়ায়, ক্ষুধার কষ্টে চড়-থাপ্পড় খেয়েও সাধারণ পথযাত্রীর কাছে হাত পেতে থাকে কিছু টাকার জন্য। আমরা কেউ কেউ করুণা করি ওদের, কেউ কেউ প্রচণ্ড অহংকারে গায়ে হাত তুলি। সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য বাজেটের যে অংশ বরাদ্দ করা হয় সেটাও তারা চোখে দেখে না।
ফাউন্ডেশনের সদস্য সচিব তানভীর এর সঞ্চালনায় ও ফাউন্ডেশনের পরিচালক রায়হান হোসাইনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা ও বাংলা পোস্টের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোহাম্মদ অলিদ বিন সিদ্দিক তালুকদার, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন - ঈশ্বরদী উপজেলা জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সভাপতি- মিসেস রোকেয়া হাসেম, স্বাগত বক্তব্য রাখেন- বহুল জনপ্রিয় নৃত্য শিল্পী ও সংবাদ উপস্থাপক, মোবাশ্বিরা নুজহাত তাসনিয়া উপ্তি। এসএমএস মুরাদ, নাজমুল হাসান, আতিকুজ্জামান জাহিদ, রেজাউল শিপার, নীলাঞ্জনা রহমান, রাকিব খান, সংগঠনের কোষাধ্যক্ষ মো: রাহাত, প্রোগ্রাম বাস্তবায়ন কমিটির মিম ইসলাম, আল আমিন, সদস্য বৃষ্টি, শাওন, আমিনুল ইসলাম, জুবায়ের আহমেদ, সুমন ও মেহেদী প্রমুখ।
মিসেস রোকেয়া হাসেম বলেন; বাংলাদেশের ধারাবাহিক উন্নতি আর উন্নয়নমুখী সরকারের অর্জনগুলোর প্রতি সম্মান রেখে আমি বলতে চাই যে, এই সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের যথাযথ পরিচর্যার ব্যবস্থা করা হোক। আমাদের দেশের আনাচে-কানাচে হাজারো সামাজিক ও মানবিক চিন্তাধারার মানুষ রয়েছে, যারা ব্যক্তিগত কিংবা সামাজিক সংগঠনের সাহায্য নিয়ে এই অবহেলিত জনগোষ্ঠীর পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে। অথচ যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া এই মহান উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা পুরোপুরিভাবে অসম্ভব না হলেও কষ্টসাধ্য ব্যাপার।
মোবাশ্বিরা নুজহাত তাসনিয়া উপ্তি বলেন; বেকার যুব সমাজের একটি অংশকে এই শিশুদের পুনর্বাসন, শিক্ষা, সংস্কৃতি ও দক্ষ নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনাকে কাজে লাগিয়ে একই সঙ্গে বেকারত্বের অভিশাপও কিছুটা কমিয়ে আনা সম্ভব।
অলিদ তালুকদার বলেন; বছরে একবার পুরনো শীতবস্ত্র দান, শখের বসে কিংবা লোক দেখানোর উদ্দেশ্য নিয়ে একবেলা সুবিধাবঞ্চিতদের খাবারের ব্যবস্থা করার মধ্যে কোনো স্থায়ী সমাধান নেই। ব্যক্তিগত উদ্যোগ, সরকারি বেসরকারি সহায়তা ও সদিচ্ছাই পারে সুবিধাবঞ্চিতদের মুখে হাসি ফোটাতে।
বক্তারা বলেন; একটি সুস্থ, সুন্দর, স্বাভাবিক এবং মৌলিক চাহিদাসম্পন্ন জীবন উপহার দিতে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য চাই স্থায়ী সমাধান। প্রতি বছর বাজেট প্রণয়নে এই খাতে বিশেষ বরাদ্দ প্রয়োজন, বরাদ্দকৃত বাজেটের সুযোগ অধিকতর সুবিধাভোগীরা নিচ্ছে কি-না, সেদিকেও থাকতে হবে কড়া নজরদারি। পাশাপাশি শিশু শ্রমের আওতায় থাকা কোমলমতি সুবিধাবঞ্চিত ও হতদরিদ্র শিশুদের জন্য জরুরি ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত পথশিশুদের পাশে "ঈদে হোক নতুন কিছু" শিরোনামে '২০১৭' সাল থেকে এসো গড়ি ফাউন্ডেশনের এই কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে সংগঠনটি। সেই ধারাবাহিকতায় প্রতিবারের ন্যায় এই ঈদে ও সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মাঝে ঈদের হাসি ছড়িয়ে দিতেই " এসো গড়ি ফাউন্ডেশন" তাদের পাশে দাঁড়ায়।
Comments