সিলেটের চন্ডিপুল মোড়; সড়ক নয়, যেন গাড়ির হাট

সিলেটের দক্ষিণ সুরমার চন্ডিপুল এলাকায় ত্রিমুখী রাস্তার দুপাশ দখল করে গড়ে উঠেছে সিএনজিচালিত অটোরিকশার একাধিক অবৈধ স্ট্যান্ড। সড়কের দুই পাশের এসব স্ট্যান্ড থেকে বিভিন্ন উপজেলার উদ্দেশে ছেড়ে যায় অটোরিকশা। সড়কের ওপর দাঁড়িয়ে যাত্রী ওঠানামা করাসহ পার্কিং করে রাখা হয় যত্রতত্র। ফলে ওই এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে শহরমুখী মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে।
জানা যায়, গুরুত্বপূর্ণ ওই সড়কের দুপাশ দখল করে একাধিক অবৈধ সিএনজিচালিত অটোরিকশার স্ট্যান্ড বসিয়ে এক শ্রেণির অসাধু চক্র চাঁদা আদায় করছে। ফলে ব্যস্ত সড়কটি সংকীর্ণ হয়ে যানজটের তৈরি হচ্ছে। ভোগান্তিতে পড়ছেন যাত্রী, চালক ও পথচারীরা।
৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর ওই এলাকার কৃষকদলের এক নেতার শেল্টারে শ্রমিকদলের কয়েকজন প্রভাবশালী নেতা চলাচলের রাস্তা দখল করে নিজেদের খেয়ালখুশি মতো বসিয়েছেন সিএনজিচালিত অটোরিকশার স্ট্যান্ড। প্রতিটি স্ট্যান্ডে পার্কিং করা যানবাহনগুলো থেকে নেওয়া হচ্ছে দৈনিক ভিত্তিতে চাঁদা।
সরেজমিনে দেখা যায়, সিলেট শহরের প্রবেশ পথ চন্ডিপুলে ত্রিমুখী রাস্তার দুপাশে গড়ে উঠেছে সিএনজিচালিত অটোরিকশার একাধিক অবৈধ স্ট্যান্ড। কুশিয়ারা কনভেনশন হলের সম্মুখের সড়ক থেকে দক্ষিণ সুরমা ডিগ্রী কলেজ পর্যন্ত রাস্তার দুপাশে সিএনজিচালিত অটোরিকশার অবৈধ স্ট্যান্ড গড়ে উঠেছে। সড়কের ঠিক বিপরীতে সিএনজি পাম্পের সামনের সড়ক থেকে নর্থইস্ট মেডিকেল কলেজ পর্যন্ত চলাচলের রাস্তা দখল করে নিজেদের খেয়ালখুশি মতো যাত্রী উঠানামা করছেন চালকেরা। এতে ব্যস্ততম ওই সড়কে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। ভোগান্তি পোহাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এ ছাড়া দক্ষিণ সুরমা ডিগ্রী কলেজের সামনে গাড়ী দাঁড় করিয়ে যাত্রী ওঠানামা করা হয়। সিএনজি ও অন্যান্য গাড়ির কারণে রাস্তার দুই পাশে মনে হয় এখানে গাড়ির হাট বসেছে। এসব স্ট্যান্ডে প্রতিটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা থেকে ২০ থেকে ৪০ টাকা করে চাঁদা আদায় করা হয়।
জানা গেছে, শহর থেকে বিভিন্ন আঞ্চলিক সড়কে প্রায় ৫-৭ হাজারের অধিক সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচল করে। এসব অটোরিকশা থেকে প্রতিদিন কয়েক লাখ টাকা চাঁদা আদায় করা হয়। কোনো চালক চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে তার সিরিয়াল বাতিল করা হয়। কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে মারধর করাসহ ট্রাফিক পুলিশ দিয়ে মামলায় জড়িয়ে হয়রানি করা হয়। চাঁদা আদায়কারী কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলে তারা কেউ কথা বলতে রাজি হয়নি।
সিএনজি চালকেরা জানান, প্রতিবার যাত্রী নিয়ে যাওয়া-আসার সময় শ্রমিক সংগঠনের নির্দেশে তাদের নিয়োজিত লোকজন ২০ টাকা শ্রমিক সংগঠনের নামে চাঁদা নিয়ে যায়।
কাসেম নামে এক চালক বলেন, 'প্রতিটি স্টান্ডে দুইজন করে দায়িত্বে থেকে চাঁদা আদায়সহ গাড়ির সিরিয়াল ঠিক করে। চাঁদা না দিলে হয়রানি করা হয়।'
এ বিষয়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সিলেট জেলা শাখার সভাপতি মো. জাকারিয়া আহমেদ প্রতিবেদককে বলেন, 'সিলেটে প্রায় ৪০-৫০ বছর ধরে অটোরিকশার ২৭টি স্ট্যান্ড রয়েছে। এগুলো অনুমোদিত না হলেও অনেকটা অনুমোদিতই বলা যায়। এখানে আগে স্ট্যান্ডের আলাদা সাইনবোর্ড ছিল, সেটা দুই বছর আগে ট্রাফিক বিভাগ তুলে নিয়েছে স্থায়ীভাবে করে দেওয়ার জন্য। সিটি করপোরেশন ও ট্রাফিকে বারবার আবেদন করেও কোনো সুরাহা হচ্ছে না। স্থায়ীভাবে কোনো ব্যবস্থা করে দিলে যত্রতত্র এ রকম স্ট্যান্ড হবে না।'
সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মতিউর রহমান খান ঢাকা জার্নালকে বলেন, 'অটোরিকশার স্ট্যান্ড করার বিষয়ে সিটি করপোরেশন থেকে এখনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। তবে অবৈধ স্ট্যান্ড উচ্ছেদে শিগগিরই অভিযানে নামব।'
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (ডিসি-ট্রাফিক) মাহফুজুর রহমান ঢাকা জার্নালকে বলেন, 'সিলেট নগরে কোনো বৈধ স্ট্যান্ড নেই। এগুলো অনেক আগে থেকেই অবৈধভাবে করা হয়েছে। এ বিষয়ে সিটি করপোরেশন উদ্যোগ নিলে আমরা সহযোগিতা করব। যত্রতত্র অবৈধ স্ট্যান্ড গড়ে ওঠায় শহরে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।'
Comments