ভোলায় বাস টার্মিনালে ব্যাপক সংঘর্ষ, বাস চলাচল বন্ধ

ভোলা সদর উপজেলার বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল বাস টার্মিনালে ভিতর থেকে অবৈধ যানবাহন স্থাপনা উচ্ছেদ নিয়ে বাস ও সিএনজি চালকদের মধ্যে গতকাল রাতে ও আজ সকালে ইট পাটকেল নিক্ষেপ ও দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে।
এসময় ২টি বাস ও ১০টি সিএনজিতে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়েছে । ভাংচুর করা হয়েছে আরও একটি বাস। এ ঘটনায় এক সাংবাদিকসহ আহত হয়েছে উভয় পক্ষের অন্তত ২৫/৩০ জন। আহতদের মধ্যে গুরুতর অবস্থায় ভোলার ২৫০ শয্যা হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
এদিকে বাসটার্মিনাল সংলগ্ন ফায়ার সার্ভিসের অফিস হলেও ঘটনার প্রায় ১ ঘন্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে দমকল বাহিনী। পরে পুলিশ ,নৌবাহিনী কোস্টগার্ড সহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এদিকে এমন পরিস্থিতিতে বাস মালিক সমিতির পক্ষ থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘটের পালন করছে। সকাল থেকে ভোলা জেলার অভ্যন্তরীণ সকল রুটে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে করে দূরপাল্লার যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।
সাধারণ যাত্রীরা জানান,বাস বন্ধ থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। তারা অনেকে নিরুপায় হয়ে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে বিকল্প যানবাহন দিয়ে গন্তব্যে যাচ্ছেন।তবে সময় অনেক বেশী লাগছে গন্তব্যে পৌঁছাতে।
এদিকে বাস ধর্মঘট চলাকালে বেলা ১১ টার দিকে বাস স্ট্যান্ড এলাকায় সিএনজি ও অটোরিকশা চলাচল করার সময় অতর্কিত হামলা চালানো হয়। এসময় বাস শ্রমিক ও সিএনজি শ্রমিকদের সাথে সংঘর্ষ ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে ৫টি সিএনজি ও অটোরিকশায় অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।পরে পুলিশ, নৌ বাহীনি ও কোস্টগার্ড ঘটনে স্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে।ফায়ার সার্ভিসের একটি টীম এসে আগুন নেভাতে সক্ষম হয়।বর্তমানে আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে বাসস্ট্যান্ড এলাকায় পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।

ভোলা জেলা বাস মালিক সমিতির পক্ষ থেকে জানান, বীর শ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল বাস টার্মিনাল পৌর সভা থেকে তারা ইজারা নিয়েছে। তাই ভোলা পৌরসভা থেকে সিএনজি চালকদের বাসস্ট্যান্ড ছেড়ে দেয়ার বিষয়ে জানানো হয় । কিন্তু সিএনজি চালকরা গতকাল মঙ্গলবার রাতে অতর্কিত ভাবে বাস শ্রমিকদের উপর হামলা চালায়। এতে তাদের বেশ কয়েকজন শ্রমিক আহত হয়েছেন।এছাড়াও কয়েকটি বাসে আগুন ও ভাংচুর করে কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলেও জানান।
অপরদিকে, সিএনজি মালিক সমিতির পক্ষ থেকে উল্টো অভিযোগ করে জানান, কোনো কিছু না জানিয়ে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পর বাস টার্মিনালে সিএনজি রাখার স্থানে দুই থেকে তিনটি বাস ঢোকানো হয়। এসময় বাসগুলো স্ট্যান্ডে রাখা সিএনজির উপর উঠিয়ে দেয়।পরবর্তীতে সিএনজিগুলোতে তারা আগুন জ্বালিয়ে দেয়।এতে আমাদের ৮টি সিএনজি আগুনে পুড়ে যায়।
বাস শ্রমিকরা নিজেরাই সিএনজি চালকদের লক্ষ করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে তাদের ৮ জন গুরুতর আহত হয়। তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল পাঠানো হয়েছে।
ভোলা জেলা ফায়ার সার্ভিসের ওয়ার হাউজ ইন্সপেক্টর ফারুক হোসেন হাওলাদার জানান, আমরা যথা সময়ে খবর পেয়েছি। কিন্তু উপস্থিত লোকজন বাধা দেয়ার কারনে আমারা যথা সময়ে আমাদের কাজ শুরু করতে পারি নি। আমাদের উপরও ইট পাটকেল নিক্ষেপ করেছে। পরে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা আসার পর আমরা এসে ২ টি বাস ও ৫টি সিএনজিতে দেয়া আগুন নিয়ন্ত্রণে এনেছে।
এদিকে এ ঘটনার পর ভোলা জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শরীফুল হক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এসময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন,বাস টার্মিনাল শ্রমিক ও সিএনজি শ্রমিকের সাথে সার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে এ ঘটনা ঘটে। এতে বেশ কয়েকজন আহত হয় এবং বেশ কিছু যানবাহনে আগুন দেয়া হয়। পুলিশ ও যৌথ বাহিনীর সদস্য ঘটনা স্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। এখন পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক। পরবর্তীতে আমরা দেখবো কারা এর সাথে জড়িত ছিলো। তাদের দ্রুত আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে বলেও জানান এ পুলিশের কর্মকর্তা।
Comments