শিক্ষক নেই, নিরাপত্তা প্রহরী ও আয়ারা করাচ্ছেন পাঠদান
সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় শিক্ষক সংকট থাকায় আয়া এবং নিরাপত্তা প্রহরী দিয়ে চলছে মাদ্রাসার পাঠদান। উপজেলার বড়পাঙ্গাসী ইউনিয়নের বড় কোয়ালীবেড় দাখিল মাদ্রাসায় সোমবার (২০ জানুয়ারি) সকালে সরেজমিনে গিয়ে প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা যায়, ইবতেদায়ী শাখায় মোট শিক্ষার্থী রয়েছে ১০০ জন। তবে প্রথম শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণির ক্লাসে গিয়ে দেখা যায় উপস্থিতি শিক্ষার্থী সংখ্যা ১০ জন পাওয়া যায়। প্রথম শ্রেণিতে কোন শিক্ষার্থী উপস্থিত নেই, তবে সেই শ্রেণিতে প্রতিষ্ঠানে কর্মরত নিরাপত্তা প্রহরী নাঈম হোসেন ক্লাস নেয় নিয়মিত। দ্বিতীয় শ্রেণিতে ২ জন শিক্ষার্থী নিয়ে পাঠদান করাচ্ছে সেই প্রতিষ্ঠানের ক্বারী শিক্ষক আব্দুল ওহাব। ৩য় শ্রেণিতে ৩ জন শিক্ষার্থী নিয়ে গণিত ক্লাস নিচ্ছেন প্রতিষ্ঠানে আয়া পদে কর্মরত মোছা. রত্না খাতুন। শিক্ষার্থীরা তাকে রত্না খালা বলেই ডাকে। তবে শিক্ষক না থাকায় নিয়মিত তিনি তৃতীয় শ্রেণির বাংলা এবং গণিত ক্লাস নিয়ে থাকেন বলে জানান শিক্ষার্থীরা। ৪র্থ শ্রেণিতে শিক্ষার্থী উপস্থিত রয়েছে ২ জন এবং ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী ৩ জন উপস্থিত পাওয়া যায়।
বড় কোয়ালীবেড় দাখিল মাদ্রাসায় ৬ষ্ঠ শ্রেণী থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত খাতা-কলমে শিক্ষার্থী ১৭৬ জন থাকলেও প্রতিষ্ঠানে গিয়ে ৪৩ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত পাওয়া যায়। এবং ইবতেদায়ি শাখায় শিক্ষার্থী রয়েছে ১০০ জন, উপস্থিত শিক্ষার্থী পাওয়া যায় ১০ জন।
প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরত আয়া পদে রত্না খাতুন এবং নিরাপত্তা প্রহরী নাঈম হোসেন জানান,মাদ্রাসায় শিক্ষক সংকট থাকার কারণে তারা প্রতিনিয়তই ক্লাস নিয়ে থাকেন। এ ছাড়াও ক্লাস নেওয়ার ফাঁকে ফাঁকে তাদের নিরাপত্তা প্রহরী ও আয়ার দায়িত্বও পালন করতে হয়।
বড় কোয়ালীবেড় দাখিল মাদ্রাসার ইবতেদায়ী শাখার প্রধান শিক্ষক আব্দুল মোত্তালিব হোসেন বলেন, মাদ্রাসায় প্রথম শ্রেনীতে যখন ছাত্র-ছাত্রীরা ভর্তি হয় আমরা যখন তাদের পড়ানো শুরু করি তখন তাদের একটু বুদ্ধি হলেই সেই পরিবারের লোকজন শিক্ষার্থীদের নিয়ে গিয়ে প্রাথমিক স্কুলে ভর্তি করে দেয়। এতে করে মাদ্রাসায় আমাদের শিক্ষার্থী কমে যায়। এছাড়া উপবৃত্তি পাওয়ার লোভেও শিক্ষার্থীরা মাদ্রাসায় পড়তে চায় না। তাই সরকারের কাছে অনুরোধ ইবতেদায়ী শাখার উপবৃত্তি চালু করার।
এ বিষয়ে বড় কোয়ালীবেড় দাখিল মাদ্রাসার সহকারি সুপার ইব্রাহিম খলিল জানান,প্রতিষ্ঠানটিতে দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষক সংকট রয়েছে। তাই আয়া ও নিরাপত্তা প্রহরী দিয়ে ক্লাস নেওয়া হয়।
এছাড়া শিক্ষার্থী উপস্থিতি কম থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইবতেদায়ী মাদ্রাসায় উপবৃত্তি না থাকায় শিক্ষার্থীরা মাদ্রাসায় পড়তে চায় না। কারণ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে উপবৃত্তির ব্যবস্থা থাকায় নিন্মবৃত্ত ও মধ্যবৃত্ত পরিবারের সন্তানদের প্রাথমিকে ভর্তি করে দেয়।
বিষয়ে উল্লাপাড়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এ,কে,এম শামসুল হক জানান নিরাপত্তা প্রহরী ও আয়া দিয়ে ক্লাস করার নিয়ম নেই, কেউ এই কাজ করলে সে অন্যায় করেছেন। সেই মাদ্রাসার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য ২০২৪ সালে দাখিল পরীক্ষায় বড় কোয়ালীবেড় মাদ্রাসায় ১২ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করলেও কেউ পাশ করতে পারেননি বলে জানান মাদ্রাসার সহকারী সুপার ইব্রাহিম খলিল। তিনি আরো জানান প্রতিষ্ঠানটিতে ১৪ জন শিক্ষকের পরিবর্তে শিক্ষক রয়েছে ৯ জন। শিক্ষক সংকট থাকায় ক্লাস নিচ্ছেন আয়া এবং নিরাপত্তা প্রহরী।