কোরবানির গোশত কয়দিন রাখা জায়েজ

আল্লাহর ভালোবাসায় নিজের প্রিয় বস্তু উজাড় করে দেয়ার নাম কোরবানি। ইবরাহীম ও ইসমাঈল (আ.) এর স্মৃতিতে প্রতিবছর ঈদুল আজহায় কোরবানিকরা হয়। এর মাধ্যমে আমরা ত্যাগ ও তাকওয়ার শিক্ষা লাভ করি।
পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, 'আল্লাহর কাছে পৌঁছে না এগুলোর (কোরবানির পশুর) গোশত ও রক্ত, বরং তাঁর কাছে পৌঁছে তোমাদের তাকওয়া। এভাবেই তিনি সেসবকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন, যাতে তোমরা আল্লাহর তাকবির পাঠ করতে পারো, এ জন্য যে তিনি তোমাদের হেদায়াত দান করেছেন, সুতরাং তুমি সৎকর্মশীলদেরকে সুসংবাদ দাও। (সুরা হজ, আয়াত: ৩৭)
তাই 'নিসাব' পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে প্রাপ্তবয়স্ক ও স্বাভাবিক জ্ঞানসম্পন্ন প্রত্যেক মুসলিমের পক্ষ থেকে কোরবানিকরা ওয়াজিব বা আবশ্যক। অর্থাৎ, কেউ সাড়ে ৭ ভরি স্বর্ণ বা সাড়ে ৫২ ভরি রুপা অথবা এর সমপরিমাণ নগদ টাকা কিংবা সম্পদের মালিক হলে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য তার কোরবানিকরা আবশ্যক।
এ ক্ষেত্রে কোরবানির পশু যেমন সুস্থ হতে হবে, তেমনি রোগাক্রান্ত হওয়াও চলবে না। এমনকি কানা-খোঁড়া পশু দিয়ে কোরবানি দেয়াও উচিত নয়। শরিয়তে সম্মিলিতভাবে একটি বড় পশু (উট, গরু, মহিষ) মোট ৭ শরিকে কোরবানি দেয়া যায়। তবে ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা দ্বারা কোরবানির ক্ষেত্রে একজন শরিকই কোরবানি দিতে পারবেন।
অন্যদিকে কোরবানির পশুর গোশত ৩ ভাগে ভাগ করার বিধান রয়েছে। যার একটি ভাগ নিজের জন্য এবং আরেকটি ভাগ প্রতিবেশী, বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনদের খাওয়ানোর জন্য। এছাড়া তৃতীয় ভাগটি গরিব ও অভাবী মানুষদের মধ্যে বণ্টন করতে হয়। তবে কোরবানির গোশত কতদিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করে খাওয়া যায়, সে বিষয়টি নিয়ে অনেকেই নানা মত দিয়ে থাকেন। কেউ কেউ বলেন- কোরবানির গোশত ৩ দিনের বেশি সময় ধরে সংরক্ষণ করে খাওয়া জায়েজ নয়। আসলেই কি তাই?
ইসলামী স্কলার শায়খ আহমাদুল্লাহর মতে, কোরবানির গোশত ৩ দিনের বেশি রাখা যাবে কিনা এ নিয়ে অনেকের মধ্যেই ধোঁয়াশা কাজ করে। মূলত সহিহ বুখারির একটি হাদিসে রাসুল (সা.) ৩ দিনের বেশি কোরবানির গোশত রাখতে নিষেধ করেছেন। অনেকে এই হাদিসের আলোকে ৩ দিনের বেশি কোরবানির গোশত খাওয়া যায় না এমনটা দাবি করেন। কিন্তু বিভিন্ন হাদিসে স্পষ্টভাবে এসেছে, নবীজি পরবর্তীতে এই বিধান রহিত বা বাতিল করেছেন। ফলে কোরবানির পশুর গোশত ৩ দিনের বেশি সময় ধরে রেখে খেলেও সেটি জায়েজ হবে।
Comments