জুলাই গণ-অভ্যুত্থান আন্দোলনের ৮ মাসেও ছাড়া পায়নি সৌদি আরবে আটক ১২ প্রবাসী

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রবাসে অবস্থানরত সৌদি আরবে থেকে ছাত্র আন্দোলনের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে বিভিন্নভাবে আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত হন বাংলাদেশী এই ১২ জন প্রবাসী রেমিট্যান্স যোদ্ধা। আন্দোলন পরবর্তী ৫ আগস্ট সরকার পতনের মধ্য দিয়ে ছাত্র জনতার বিজয় উপলক্ষ্যে ৮ আগস্ট আনন্দ ভোজ অনুষ্ঠান থেকে আটক হন ১২ বাংলাদেশি। ৮ মাস পার হলেও এখনো ছাড়া পাননি তারা। আটককৃতদের মুক্ত করতে প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনায় জাতীয় মানবাধিকার সমিতি ও জাতীয় জনতা ফোরামের যৌথ সহযোগিতায় সংবাদ সম্মেলনে করেছেন ভিকটিম পরিবার।
আজ শনিবার সকাল ১১ টায় জাতীয় প্রেসক্লাবে মাওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁ হল রুমে এ সম্মেলন হয়। সংবাদ সম্মেলনে ভিকটিমের পাশে দাড়ান বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি। সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব। তিনি বলেন, রাষ্ট্র সংস্কার করার আগে দেশের মানুষদের অধিকার রক্ষা করতে হবে। যে ১২ জন রেমিট্যান্স যোদ্ধা সৌদি আরবে আটকা পড়ে আছে তাদের নিরাপদে দেশে আনাই বড় সংস্কার। আমি আপনাদের পাশে আছি এবং সর্বাত্মক সহযোগিতা করবো।
আরও উপস্থিত ছিলেন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী এডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম, তাতীদলের কেন্দ্রিয় কমিটির সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক ড. কাজী মনিরুজ্জামান মনির, বাংলাদেশ জাতীয় মানবাধিকার সমিতির চেয়ারম্যান মো: মঞ্জুর হোসেন ঈসা, জাতীয় জনতা ফোরাম কেন্দ্রীয় সংসদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও মানবাধিকার সংগঠক, মোহাম্মদ অলিদ বিন সিদ্দিক তালুকদার প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন আহসান উল্লাহ। এসময় ভিকটিমের বাবা, মা, স্ত্রী, সন্তানসহ স্বজনরা। স্বজনরা কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, ১২ জন সৌদি প্রাবাসী গ্রেফতার হওয়ার পর থেকেই পরিবার নিয়ে কষ্টে দিন পার করছে। সেখানকার রাষ্ট্রদূত এ ব্যাপারে তেমন কোন পদক্ষেপ গ্রহন করেনি। তারা প্রধান উপদেষ্টা, পররাষ্ট উপদেষ্টা ও প্রবাসী কল্যান মন্ত্রনালয়ের উপদেষ্টার সহযোগিতা কামনা করেন।
আগামীকাল (রবিবার) সকালে প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করা হবে, পরে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট মন্ত্রনালয় ও প্রবাসী কল্যান মন্ত্রনালয়ে স্মারকলিপি প্রদান করা হবে।
বক্তারা বলেন, বাংলাদেশে রেমিট্যান্স যোদ্ধারা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। ফ্যাসিবাদ পতনের আন্দোলনেও তাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ও অবদান রয়েছে। আমরা যখন ফ্যাসিবাদ পতনের আগে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স না পাঠানোর জন্য আহ্বান জানিয়ে ছিলাম তখন তারা আমাদের সেই ডাকে সারা দিয়েছিল। এখন তারা যদি কারাগারে থাকে তাহলে কিসের সংস্কার। তাদের দ্রুত মুক্তির জন্য তিনি প্রধান উপদেষ্টাসহ সকলের দৃষ্টি কামনা করেন।
এডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম বলেন, যতদিন তাদের মুক্তি না হবে ততদিন তাদের পক্ষে আমরা লড়াই-সংগ্রাম করবো। আমি বিশ্বাস করি নোবেল বিজয়ী প্রফেসর ড. ইউনুস এ বিষয়ে দ্রুত হস্তক্ষেপ করবেন বলে আশ্বস্ত ব্যক্ত করেন তিনি।
মোহাম্মদ অলিদ তালুকদার বলেন, জাতিসংঘের মহাসচিব বাংলাদেশে রয়েছেন। আর বাংলাদেশের রেমিট্যান্স যোদ্ধারা কারাগারে থাকবে এটি আমরা মানতে পারি না। প্রফেসর ড. ইউনূস তিনি যদি জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তাহলে তাদের মুক্তি সময়ের ব্যাপার মাত্র।
এসময় অনুষ্ঠানস্থলে কারাগারে যারা রয়েছে তাদের স্ত্রী, শিশু সন্তান ও পরিবারের কান্নায় পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে।
রেমিট্যান্স যোদ্ধা যারা কারাগারে আটক তাদের নাম ও পরিচয়
বর্তমানে তারা সৌদি আরবের আল কাসিম বুরাইদা সফর জেলে আছেন তাদের নামের তালিকা- মোঃ বাদল, পিতা: সিদ্দিকুর রহমান, গ্রাম-ইমামপুর, পো-মাহমুদপুর, থানা-মেলান্দহ, জেলা- জামালপুর। ইসমাইল হোসেন, পিতা- ইব্রাহিম খলিল, গ্রাম- মোহাম্মদপুর, পো- মোহাম্মদপুর, থানা- চাঁটখিল, জেলা- নোয়াখালী। মোঃ কাউসার হোসেন স্বপন, পিতা- মোঃ আবুল হোসেন, সাং- লক্ষীপুর, পো-বহরিয়া বাজার, জেলা- চাঁদপুর সদর। এরশাদ, পিতা- ইসরাফিল, গ্রাম- ঘাটেশ্বরী দক্ষিণ পাড়া, ডাকঘর-বহেড়া তৈল-১৯৫০, সখিপুর, টাঙ্গাইল। জুয়েল রানা, পিতা- ফিরোজ মিয়া, গ্রাম- বড়তলা, পো- আশুগঞ্জ, থানা- আশুগঞ্জ, জেলা- ব্রাহ্মণবাড়িয়া। মোঃ শাকির হোসেন, পিতা- কবির হোসেন, গ্রাম- কড়াইল, পো- মির্জাপুর, থানা-মির্জাপুর, জেলা- টাঙ্গাইল। মোঃ হাবিবুর রহমান, পিতা- হাজী হাফেজ আলী মিঝি, গ্রাম-মহজনপুর, পো-আলগী বাজার, থানা-হাইমচর, জেলা-চাঁদপুর। মোঃ আবুল হোসেন, পিতা- মোঃ নানু মিয়া, গ্রাম-মুক্তরামপুর, পো-সলিমগঞ্জ, থানা-নবীনগর, জেলা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া। মোহাম্মদ জামিল হোসাইন, পিতা- মোঃ আবদুল মান্নান, সাং-নোয়া বাড়ি, অটেহরা, ডাকঘর- কালির হাট-৩৫০১, বরুড়া, কুমিল্লা। মোহাম্মদ ইয়াকুব, পিতা মৃত- মোঃ আক্তার, দক্ষিণ মালিভিটা, পো- দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ, আব্দুল্লাহপুর, ঢাকা। সাদ্দাম হোসাইন, পিতা- আবু তায়েব, গ্রাম- কালিকাচর, পো- কালিকাচর, থানা-সরাইল, জেলা- ব্রাহ্মণবাড়িয়া। মাসুদ গাজী, পিতা- মুনাফ গাজী, গ্রাম-মহজমপুর, পো- আলগি বাজার, থানা- হাইমচর, জেলা- চাঁদপুর।
Comments