কাশ্মীরে সন্ত্রাসী সন্দেহে আটক যুবক নদীতে ঝাঁপ, লাশ উদ্ধার

সন্ত্রাসীদের সাহায্য করার অভিযোগে আটক কাশ্মীরি যুবকের নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ার একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এরপরই তোলপাড় শুরু হয় ভারত জুড়ে। পেহেলগামে হামলার ঘটনার পর সন্ত্রাস বিরোধী অভিযানে আটক করা হয় ওই যুবককে। এরপর নিরাপত্তা বাহিনী সন্ত্রাসীদের আস্তানা শনাক্তের জন্য তাকে নিয়ে গেলে, পার্শ্ববর্তী নদীতে ঝাঁপ দেন ওই যুবক। পরে তার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।
রোববার (৪ মে) সকালে কুলগাম জেলার দামহাল হানজিপোরা এলাকার টাংমার্গের দিনমজুর ইমতিয়াজ আহমেদ মাগ্রের (২৩) মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানিয়েছে জম্মু ও কাশ্মীর সরকার। খবর টাইমস অব ইন্ডিয়ার।
পুলিশ বলছে, শুক্রবার আটক ইমতিয়াজ নিরাপত্তা বাহিনীর জেরায় 'জঙ্গীদের' সাহায্য করার কথা স্বীকার করেন। দুই সন্দেহভাজন পাকিস্তানি সন্ত্রাসীর তথ্য প্রকাশ করেছেন তিনি। সেই তথ্যের ভিত্তিতে নিরাপত্তা বাহিনী 'জঙ্গিদের' একটি আস্তানায় নিয়ে যাওয়ার সময় বিশ্ব নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়েন তিনি।
সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে যে ইমতিয়াজ নদীর ধার দিয়ে দৌড়ে দ্রুত বয়ে যাওয়া পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়ছে। পুলিশ জানায়, ঝাঁপ দিয়ে মারা যাওয়া ইমতিয়াজ ২৩ এপ্রিল তাংমার্গ জঙ্গলে নিরাপত্তা বাহিনীর মাধ্যমে ধ্বংসপ্রাপ্ত একটি গোপন আস্তানার কথাও জানতেন।
এদিকে ইমতিয়াজের মৃত্যু নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন জম্মু ও কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা পিপলস ডেমক্রেটিক পার্টির নেত্রী মেহেবুবা মুফতি। তার মৃত্যুর পেছনে চক্রান্ত আছে বলে দাবি করেন তিনি।
পেহেলগাম হামলার পরে রাজ্যের সন্ত্রাসবিরোধী প্রতিক্রিয়ারও সমালোচনা করেছেন তিনি। সতর্ক করে মেহেবুবা মুফতি বলেছেন, 'এটি "সম্মিলিত শাস্তি"র একটি রূপে পরিণত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে, যা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি এবং জনসাধারণের আস্থাকে ক্ষুণ্ন করে। একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে নির্বিচারে গ্রেপ্তার, বাড়িঘর ভাঙচুর এবং নিরীহ বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্যবস্তু করা উচিত নয়। এরকম আচরণ প্রমাণ করে অপরাধীরা ইতিমধ্যেই তাদের লক্ষ্য অর্জন করেছে।'
এছাড়া সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সাকিনা ইতু পরিবারটির সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে লেফটেন্যান্ট গভর্নরকে বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছেন। তিনি বলেন, 'ইমতিয়াজ অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারের সন্তান। তিনি প্রায় দুই সপ্তাহ আগে দৈনিক মজুরির কাজ করার পর বাড়ি ফিরে আসেন। শুক্রবার তাকে তার বাড়ি থেকে তুলে নেওয়া হয়।'
যদিও এই ধরনের অভিযোগকে উড়িয়ে দিয়েছে নিরাপত্তা বাহিনী। ওই যুবকের মৃত্যুকে দুর্ভাগ্যজনক বললেও তার মৃত্যুর জন্য নিরাপত্তা বাহিনীকে দায়ী করা যায় না বলে জানিয়েছে তারা।
ভারতীয় গণমাধ্যম বলছে, রোববার সকালে পুলিশ ও সেনা তাকে নিয়ে 'জঙ্গিদের' ডেরার খোঁজে যায়। তখনই নিরাপত্তাবাহিনীর নজর এড়িয়ে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে পালানোর চেষ্টা করেন ইমতিয়াজ। কিন্তু, নদীর প্রচণ্ড স্রোতে ভেসে যান তিনি। এই ছবি ধরা পড়েছে ড্রোন ক্যামেরায়। ওই যুবকের মৃতদেহ উদ্ধারের পরে তা নিয়ে বিতর্ক দেখা দিলে সেই দৃশ্য প্রকাশ্যে আনে পুলিশ।
Comments