আইএমএফের ঋণের শর্ত পূরণে দুই দিনের বৈঠকেও সমঝোতা হয়নি

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের কিস্তি ছাড়ে কোনো সমঝোতা ছাড়াই শেষ হয়েছে দ্বিতীয় দিনের ভার্চুয়াল বৈঠক। গতকালও বাংলাদেশের স্পষ্ট অবস্থান ছিল– এই মুহূর্তে ডলারের দর বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া সম্ভব নয়। বাংলাদেশের এ অবস্থানের ভিত্তিতে সংস্থাটি নিজেদের মধ্যে আবার আলোচনা করবে। এরপর আগামী ১৯ মে উভয় পক্ষের মধ্যে আরেকটি ভার্চুয়াল বৈঠক হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
মার্কিন ডলারের বিপরীতে বাংলাদেশি মুদ্রায় টাকার মান কত হবে—তা বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার শর্ত পূরণের ওপর নির্ভর করছে আইএমএফের চলমান ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ কর্মসূচি থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ বাংলাদেশ পাবে কি না। ঋণের কিস্তি ও শর্তের বিষয়ে সর্বশেষ গত সোমবার ও গতকাল মঙ্গলবার ভার্চ্যুয়ালি আইএমএফের সঙ্গে বৈঠক করেছে বাংলাদেশ। বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।
আইএমএফের সঙ্গে ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ কর্মসূচি শুরু হয় ২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি। ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত তিনটি কিস্তিতে ২৩১ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। বাকি আছে ঋণের ২৩৯ কোটি ডলার। বাকি ঋণের দুই কিস্তি ও শর্ত নিয়ে আইএমএফের সঙ্গে প্রায় এক মাস ধরে দর-কষাকষি চলছে।
ইতিমধ্যে পাওয়া দ্বিতীয় ও তৃতীয় কিস্তির পর্যালোচনা করতে গত ৬ থেকে ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত আইএমএফের একটি মিশন ঢাকা ঘুরে গেছে। ওই সময় ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির বিষয়ে কোনো সমঝোতা হয়নি। আলোচনা গড়ায় ওয়াশিংটনেও। সেখানে ২১ থেকে ২৬ এপ্রিল আইএমএফ-বিশ্বব্যাংকের বসন্তকালীন বৈঠক ছিল। ওই বৈঠকের এক ফাঁকে ঋণের কিস্তি ও শর্তের বিষয়ে আইএমএফের সঙ্গে বাংলাদেশের আলোচনা হয়। সেখানেও কোনো সমঝোতা হয়নি।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, গতকাল পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো সুরাহা হয়নি। আবার আলোচনার পথও বন্ধ হয়ে যায়নি। সমঝোতার বিষয়ে আরও বৈঠক হবে। আইএমএফকে জানানো হয়েছে এবং বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে, বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার উপযুক্ত সময় এখন নয়। বৈঠকে চলমান ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ কর্মসূচির বাইরে আইএমএফের কাছে ১০০ কোটি ডলারের একটি স্থিতিশীলতা তহবিল (স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড) নেওয়ার বিষয়েও আলোচনা হয়। ভবিষ্যতে বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করা হলে ওই তহবিল কাজে লাগানোর পরিকল্পনা রয়েছে।
বৈঠক সূত্রে আরও জানা গেছে, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যুক্তি হিসেবে বলা হয়, বর্তমান ডলারের দর বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এ কারণে আনুষ্ঠানিক চ্যানেলের সঙ্গে খোলাবাজারের দরের তেমন পার্থক্য নেই। বৈধ পথে রেমিট্যান্স গত ৯ মাসে বেড়েছে ২৯ শতাংশ। ডলারের দর দীর্ঘদিন ধরে ১২২ টাকায় স্থিতিশীল থাকার পরও এভাবে রেমিট্যান্স বাড়ছে। এ মুহূর্তে নমনীয়তা দেখালেই ডলারের দর বাড়তে পারে। তখন কমতে থাকা মূল্যস্ফীতি আবার বেড়ে যাবে।
Comments