পুঁজিবাজারে আস্থা ফেরাতে কাজ করছে সরকার- অর্থ উপদেষ্টা
পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরানোর জন্য যথেষ্ট সহায়তা করছে সরকার। নিয়ন্ত্রণ সংস্থাকে সাপোর্ট দেয়া হচ্ছে, আইসিবিকে তিন হাজার কোটি টাকা ঋণ দেয়া হয়েছে এসব তো আস্থা ফেরাতেই করা হয়েছে। মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) রাজধানীর নিকুঞ্জে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ভবনে পুঁজিবাজারে চলমান সংকট নিরসনে করণীয় নির্ধারণে সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক আলোচনা সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেন, পৃথিবীর বড় বড় দেশগুলোতে ইন্ডাস্ট্রিগুলোর জন্য লং টার্ম ফাইন্যান্সিং পুঁজিবাজার থেকে আসে। ব্যাংকের টাকা হলো জনগণের জমা করা টাকা। তাই বড় এবং দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের জন্য ব্যাংকের উপর নির্ভরতা কমাতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আপনারা অনেক সময় দেখেন যে শেয়ার মার্কেট পরে গেছে। এর কারণ বাজার রিফর্ম হচ্ছে৷ কারও উপকার করার জন্য এখানে কোনো পলিসি নেয়া হয়নি, যা অতীতে হয়েছিল। পুঁজিবাজারে শুধু সূচক বেড়ে ৯ হাজার পয়েন্ট হওয়া ভালো কিছু নয়। সেটা স্বাভাবিক না। সেটা কৃত্রিমভাবে বাড়ানো হয়। সেখানে কারসাজির মতো সমস্যা থাকে। উত্থান-পতনের মাধ্যমে বাজার ভালো করতে হবে। বর্তমানে ব্যাংকে ৮-৯ শতাংশ পর্যন্ত আমানতের সুদ পাওয়া যায়। যেখানে বাজারে ১২ শতাংশ হলেও অনেক আমানতকারী সেটা নিরাপদ মনে করে সেখানে যায়।
এ অর্থনীতিবিদ বলেন, পুঁজিবাজারে অনেক সংস্কার হচ্ছে। এজন্য সাময়িক সময় কিছু সমস্যা মেনে নিতে হবে। পুঁজিবাজারের সাথে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্পর্ক আরো মজবুত করতে আজকে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে আসা হয়েছে। আমাদের দেশে বেশিরভাগ ব্যবসা করে ব্যাংক থেকে। ভালো কোম্পানিগুলো শেয়ার ছাড়তে চায় না। ব্যাংক থেকে ঋণ নিলে আরেকটা সুবিধা আছে, সেটা হচ্ছে, টাকা নিয়ে ফেরত দেওয়া লাগে না। ব্যবসার ক্ষেত্রে ঋণ আর শেয়ারের বিষয়ে সমন্বয় না করলে বাজার ভালো হবে না। এজন্য ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া এবং শেয়ারবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহের ক্ষেত্রে সামঞ্জস্য করতে হবে। সেক্ষেত্রে বাজারে ভালো কোম্পানি আনতে হবে, যেটা বাংলাদেশে হয় না।
উপদেষ্টা আরো বলেন, বাজারের মধ্যস্থতাকারীরা পুঁজিবাজারের অংশ। তারা খারাপ নাকি ভালোভাবে ব্যবসা করবে, সেটা তাদের ওপর নির্ভর করে। এতে বাজার ভালোও হতে পারে, খারাপও হতে পারে। এটা গত ১৫ বছরে দেখে এসেছেন। এখন বাজার ভালো করার সময় এসেছে। গত ১৫ বছরে এ সুযোগ পাওয়া যায়নি। তাই, পুঁজিবাজারের ভালো করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের সবাই আগ্রহী। তার জন্য প্রয়োজনে নীতি পরিবর্তন করা হবে। তবে, সেটা দ্রুত করতে হবে। এ সরকার দীর্ঘ মেয়াদে থাকবে না। কিন্তু, বাজারকে দীর্ঘ মেয়াদে ভালো রেখে যেতে হবে। এজন্য দ্রুত কাজ করতে হবে।
ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এ আলোচনা সভায়- বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি), বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই), ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিবিএ), বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ), সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল), সেন্ট্রাল কাউন্টার পার্টি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিসিবিএল), ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি), ফাইনান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলের (এফআরসি) প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।