বেকারদের কাছ থেকে অর্ধশত কোটি টাকা রাজস্ব আয় সরকারের!

সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১৮

মুরাদ হুসাইন : সবাই বলে বেকারত্ব একটি অভিষাপ। কিন্ত মাঝে মাঝে এর ব্যতিক্রমও ঘটে। কারণ এই বেকারত্বকে পূজি করে শতশত কোটি টাকা আয় করছে সরকার। বিভিন্ন সংস্থা বা বিভাগ থেকে নিয়োগ পরীক্ষার নামে নেয়া হচ্ছে মোটা অংকের ফি। আর বেকার জনশক্তি একটি চাকরি পাওয়ার আশায় হুমড়ী খেয়ে পড়ছে। একটি আসনের বিপরীতে হাজারের বেশি প্রার্থী আবেদন করছেন। এই সুযোগেই পোয়াবারো সংস্থা বা বিভাগগুলোর।
দেখা গেছে, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ‘সহকারী শিক্ষক’ নিয়োগ পরীক্ষায় অনলাইন আবেদন প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। গত ১ আগস্ট থেকে ৩০ আগস্ট পর্যন্ত অনলাইনে আবেদন কার্যক্রম চলে। এ সময়ের মধ্যে ২৪ লাখের বেশি আবেদন জমা হয়েছে। এ বাবদ প্রায় ৪০ কোটি টাকা রাজস্ব আয় হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর (ডিপিই) সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশে মোট ১২ হাজার শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ যাবত সকল নিয়োগ প্রক্রিয়াকে ছেড়ে এবার সর্বোচ্চ আবেদন জমা হয়েছে। এবার সারাদেশে ২৪ লাখ ১ হাজার ৫৯৭ জন প্রার্থী আবেদন করেছেন। সবচাইতে বেশি আবেদন পড়েছে চট্টগ্রামে, মোট ৯৮ হাজার ৯৬৯টি আবেদন জমা হয়েছে। তার পরের অবস্থানে রয়েছে ময়মনসিংহ জেলায় ৮৮ হাজার ২১৮টি, কুমিল্লা জেলায় ৮৪ হাজার ৭২৮টি আবেদন রয়েছে। সকল জেলায় মোট ২৪ লাখের বেশি আবেদন এসেছে।
জানা গেছে, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা বাবদ প্রতি আবেদনের জন্য ১৬৮ টাকার মতো নির্ধারিত ফি আদায় করা হয়েছে। টেলিটক মোবাইল ফোনের মাধ্যমে এসএমএমের মধ্যেমে পরীক্ষার ফি জমা নেয়া হয়। সে অনূযায়ী টেলিটকে দুটি এসএমএস পাঠানো বাবদ ৪ টাকা কর্তন করা হয়। বাকি টাকা নিয়োগ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের ফান্ডে জমা দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেটের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার শাকিল আহমেদ বলেন, বেশি আবেদন জমা হলেই টেলিটক কোম্পানির খুব বেশি লাভ হয় না। পুরো অর্থই নিয়োগকাির প্রতিষ্ঠানে চলে যায়। তাই আবেদনকাির কাছে দুটি এসএমএস বাবদ চার টাকা কর্তন করা হলেও আবেদনকারিকে একাধিক এসএমএস পাঠানো হয়। এছাড়াও নিয়োগ সংক্রান্ত সকল আপডেট এসএমএসের মাধ্যমে জানাতে হয়।
তিনি বলেন, প্রতি আবেদন চার টাকা নিলেও টেলিটক কোম্পািনর ২ শতাংশের বেশি আয় হয়ে থাকে। আবার যেসকল খাতে আবেদন আসে না সেগুলোতেও আমাদের একই ব্যায় হয়ে থাকে। ফলে টেলিটকের নয়, আবেদন প্রতি চার টাকা কেটে বাকি টাকা নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানকে বুঝিয়ে দিতে হয়।
জানা গেছে, সারাদেশে ১২ হাজার আসনের বিপরীতে প্রতি আসনে ২০০ জনের বেশি চাকরি প্রত্যাশী পরীক্ষা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করবেন। চলতি বছরের ১৯ থেকে ২৬ অক্টোম্বরের মধ্যে লিখিত পরীক্ষা আয়োজনে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। ডিসেম্বরের মধ্যে মৌখিক পরীক্ষার শেষ হতে করা পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিপিই’র মহাপরিচালক আবু হেনা মোস্তফা কামাল বলেন, সহকারী শিক্ষক নিয়োগে এবার সর্বোচ্চ আবেদন এসেছে। এটি একটি ইতিবাচক বিষয় হিসেবে গণ্য করা হবে। বেশি আবেদন এলে কঠিন প্রতিযোগিতার মাধ্যমে মেধাবী শিক্ষক নেওয়া সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে জেলাওয়ারী আবেদনকারীর সংখ্যা এসেছে। নিয়োগ পরীক্ষা আয়োজনে পরবর্তী প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। নিয়োগ পরীক্ষার দিন-সময় নির্ধারণে আগামী সপ্তাহে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে একটি সভা হওয়ার কথা রয়েছে বলে জানান তিনি। মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী ১৯ থেকে ২৬ অক্টোম্বর শিক্ষক নিয়েগের লিখিত পরীক্ষার আয়োজন করা হতে পারে। সেই মোতাবেদক ডিপিইকে নির্দেশনা দিতে এই সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর (ডিপিই) সূত্রে জানা গেছে, অন্যান্য বর্তমানে সারা দেশে প্রায় ৬৪ হাজার ৮২০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এরমধ্যে প্রায় ১২ হাজার সহকারী শিক্ষক শূন্য রয়েছে। এ কারণে নতুন করে আরও ১২ হাজার সহকারী শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। পুরনো নিয়োগ বিধিমালা অনুসরণ করে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। ফলে নারী আবেদনকারীদের ৬০ শতাংশ কোটায় এইচএসসি বা সমমান পাস এবং পুরুষের জন্য ৪০ শতাংশ কোটায় স্নাতক বা সমমান পাস রাখা হয়েছে। লিখিত পরীক্ষায় আসন প্রতি তিনজনকে (একজন পুরুষ ও দুইজন নারী) নির্বাচন করা হবে। মৌখিক পরীক্ষার পর চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করা হবে।
প্রার্থীরা http://dpe.teletalk.com.bd ওয়েবসাইট থেকে প্রবেশপত্র ডাউনলোড করতে পারবেন। ওএমআর শিট পূরণের নির্দেশাবলী এবং পরীক্ষা সংক্রান্ত অন্যান্য তথ্য ওয়েবসাইটে (www.dpe.gov.bd) পাওয়া যাবে বলেও জানা গেছে।
জানতে চাইলে ডিপিই’র মহাপরিচালক আবু হেনা মোস্তাফা কামাল বলেন, সহকারী শিক্ষক নিয়োগে এবার এবার রেকর্ড সংখ্যা আবেদন জমা হয়েছে। এ বাবদ যে অর্থ জমা হয়েছে তা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণাণলয়ের ফান্ডে জমা রয়েছে।
তিনি বলেন, নিয়োগ পরীক্ষা ও ফলাফল প্রকাশ করতে বিপুল পরিমাণে ব্যয় হয়ে থাকে। এ জন্য সারাদেশে বিপুল পরিমাণে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োজিত রাখতে হয়। সব মিলে অধিকাংশ অর্থ এ বাবদ ব্যয় হয়ে যায়।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.