কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠার ধারণাটা আমি জাতির পিতার কাছ থেকে পেয়েছি,প্রধানমন্ত্রী

আগস্ট ২২, ২০১৫

PMশনিবার শ্রেষ্ঠ কমিউনিটি ক্লিনিক পুরস্কার বিতরণ এবং কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডারদের ই-লার্নিং কার্যক্রম উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একথা জানান।

তিনি বলেন, “স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে আমরা একটি ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করব। প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিকের একটি নিজস্ব অ্যাকাউন্ট থাকবে। ভবিষ্যতে সরকার পরিবর্তন হলেও এক হুকুমে কেউ যেন বন্ধ করতে না পারে।”

সাধারণ মানুষের হাতের নাগালের মধ্যে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছানোর লক্ষ্যে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপনের কাজ শুরু করে।

সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর পাঁচ বছর মেয়াদে ১৮ হাজার ক্লিনিক স্থাপনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার কাজ শুরু করলেও ১০ হাজার ৭২৩টি ক্লিনিক চালু হয়।

অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় এসে ক্লিনিকগুলো বন্ধ করে দেয়।

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতা নিয়ে বন্ধ কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো চালুর উদ্যোগ নেয়। এ পর্যন্ত ১৩ হাজার ৫০০ ক্লিনিক স্থাপিত হয়েছে, এর ১২ হাজার ৯০৬টি পুরোদমে চালু।

প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে ৩০ ধরণের জরুরি ওষুধ বিনামূল্যে দেওয়া হয়। একেকটি ক্লিনিকের জন্য বছরে ওষুধের বাজেট ১ লাখ ১০ হাজার টাকা।

কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপনের জন্য স্থানীয় জনগণ এ পর্যন্ত প্রায় ৮০০ একরের বেশি জমি দান করেছেন। এখন পর্যন্ত ১৩ হাজার ৭৮৪ জন হেলথকেয়ার প্রোভাইডার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বী করার উপর জোর দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের নিজের পায়ে দাঁড়ানো এবং নিজেদের চেষ্টায় সব কিছু করতে হবে। এই কমিউনিটি ক্লিনিক স্থানীয় জনগণের পরিচালিত, সম্পূর্ণ নিজস্ব হোক।”

প্রধানমন্ত্রী জানান, এ পর্যন্ত ৪০ কোটিরও বেশি ভিজিটের মাধ্যমে জনগণ কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে সেবা গ্রহণ করেছেন। এর শতকরা ৮০ ভাগেরও বেশি নারী ও শিশু।

কমিউনিটি ক্লিনিকের ওষুধ খোলা বাজারে বিক্রি করে কেউ যেন জনগণকে বঞ্চিত করতে না পারে, সেজন্য সজাগ থাকার আহ্বানও জানান তিনি।

কয়েকটি ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান বিনামূল্যে কমিউনিটি ক্লিনিকে তাদের উৎপাদিত ওষুধ দিচ্ছে। সব প্রতিষ্ঠানকে তা অনুসরণের আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর কার্যক্রম ব্যাখ্যা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এটা কিন্তু প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র। এখানে সব চিকিৎসা হবে না। এটা রেফারেল সিস্টেম।”

সবার স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে সরকারের নেওয়া উদ্যোগগুলো তুলে ধরতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী রাজশাহী ও চট্টগ্রামে আরও দুটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কথা বলেন। আগামীতে প্রতিটি বিভাগে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় করার আশ্বাসও দেন তিনি।

যত্রতত্র মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার সমালোচনা করে সরকার প্রধান বলেন, “বাঙালি হুজুগে মাতে। মেডিকেল কলেজ শুরু হল তো, সব জায়গায় মেডিকেল কলেজ দরকার।

“এত মেডিকেল কলেজ করলে স্টুডেন্ট পাবে কোথায়? শিক্ষক পাবেন কোথায়? এটা তো বিশেষায়িত বিষয়। এটাকে ঢালাওভাবে করতে গেলে রোগী বাঁচানোর ডাক্তার হবে না। রোগী মারার ডাক্তার হবে।”

“এই রোগী মারার ডাক্তার যেন না হয়, সেদিকে দেখতে হবে। যত্রতত্র মেডিকেল কলেজ করলে প্রকৃত ডাক্তার না হয়ে, হাতুড়ে ডাক্তার হবে।”

মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও সরকারি নীতিমালা প্রতিপালনের উপর গুরুত্বারোপ করেন প্রধানমন্ত্রী।

ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী সাত বিভাগের সাতটি শ্রেষ্ঠ কমিউনিটি ক্লিনিককে পুরস্কৃত করেন।

পুরস্কারপ্রাপ্তদের অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী দেশের সব কমিউনিটি ক্লিনিকের সেবা ও জমিদানকারীদের ধন্যবাদ জানান।

শেখ হাসিনা বলেন, “কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠার ধারণাটা আমি জাতির পিতার কাছ থেকে পেয়েছি।

“কমিউনিটি ক্লিনিক স্থানীয় জনগণ দ্বারা পরিচালিত হবে। সরকার কিছু সুবিধা দেবে। ঘর দেবে, ওষুধ দেবে।”

“এই পুরস্কার দিতে পেরে সত্যিই আমি আনন্দিত। আমার বাবার আত্মা শান্তি পাবে,” বলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।

স্বাস্থ্য সচিব সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক স্বাস্থ্য উপদেষ্টা সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী এবং বাংলাদেশে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধি এন পারানিথরন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মাখদুমা নার্গিস।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.