একই রাতে বিধ্বস্ত হলো রিয়াল ও সিটি
মাঝে মাঝে চেনা আঙিনাও হয়ে যায় অচেনা। মঙ্গলবার রাতে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ম্যাচে এসি মিলানের কাছে নিজেদের ঘরের মাঠ সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে রীতিমতো বিধ্বস্ত হয়েছে লস ব্লাঙ্কোসরা, হেরেছে ৩-১ গোলে। অন্যদিকে পর্তুগিজ ক্লাব স্পোর্টিং লিসবনের আগুনে পুড়েছে ইংলিশ জায়ান্ট ম্যানচেস্টার সিটি। গুনে গুনে এক হালি গোল হজম করতে হয়েছে পেপ গার্দিওয়ালার শিষ্যদের।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগে এবার আহামরি ছন্দে নেই রিয়াল মাদ্রিদ। ঘরোয়া লিগেও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না চেনা রিয়ালকে। এবারের মৌসুমে বারবারই যেন নিজেদের হারিয়ে খুঁজছে রিয়াল মাদ্রিদ। নিজেদের আঁতুরঘর সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে আরও একবার হতাশ করলো ক্লাবটি। শেষ পর্যন্ত ইতালিয়ান ক্লাব এসি মিলানের কাছে ৩-১ গোলে হেরে যায় স্প্যানিশ জায়ান্টরা।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগে দুই দলই বেশ সফল। তবে এদিন মালিক চাওয়ের গোলে পিছিয়ে পড়ার পর সমতা টানেন ভিনিসিয়াস। বিরতির আগে আলভারো মোরাতা ফের এগিয়ে নেয় মিলানকে। আর দ্বিতীয়ার্ধে তাদের তৃতীয় গোলটি করেন টিয়ানি রেইন্ডার্স।
আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণের বিচারে লড়াই হয়েছে সমানে সমান। তবে খুব বেশি ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারেনি রিয়াল মাদ্রিদ। শেষ দিকে মরিয়া চেষ্টাও করে তারা, কিন্তু গোলের উদ্দেশ্যে ও লক্ষ্যে বেশি শট নিয়েও গোল পায়নি তারা। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে এই নিয়ে টানা দুটি ম্যাচ হারল রিয়াল। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে শিরোপা ধরে রাখার অভিযানেও চার ম্যাচে দুটিতেই হারল তারা।
বার্সেলোনার বিপক্ষে গত সপ্তাহে লা লিগার ম্যাচে ঘরের মাঠেই ৪-০ গোলে বিধ্বস্ত হয়েছিল রিয়াল। সেই ম্যাচে অনেক সুযোগ নষ্ট করা এমবাপ্পে এদিনও শুরুতেই দারুণ সুযোগ পেয়ে যান। কিন্তু কোনাকুনি শট লক্ষ্যে রাখতে পারেননি তিনি। দুই মিনিট পর ছয় গজ বক্সের বাইরে সতীর্থের বাড়ানো বল পেয়েও শট নিতে পারেননি ফরাসি এই ফরোয়ার্ড।
এরপরই পাল্টা আক্রমণে রিয়ালের জালে প্রথম পেরেক ঢুকায় মিলান। দ্বাদশ মিনিটে ক্রিস্টিয়ান পুলিসিকের কর্নারে হেডে জালে বল পাঠান জার্মান ডিফেন্ডার মালিক চাও।
পরের মিনিটে আবারও সুযোগ নষ্ট করেন এমবাপ্পে। এবার তার শট রুখে দেন গোলরক্ষক মাইক মিয়াঁ। তবে ২৩তম মিনিটে দলকে সমতায় ফেরান ভিনিসিয়াস। জুড বেলিংহ্যামের বক্সে বাড়ানো পাস ধরে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টায় ছিলেন ভিনি, তাকে স্লাইড করে ফেলে দেন ডিফেন্ডার এমেরসন। সঙ্গে সঙ্গে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। স্পট কিকে গোলরক্ষককে পরাস্ত করে সমতা টানেন ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড।
৩৯তম মিনিটে ফের পিছিয়ে পড়ে রিয়াল। নিজেদের সীমানায় অহেলিয়া চুয়ামেনির ভুল পাস ধরে আক্রমণে ওঠে মিলান। সতীর্থের পাস বক্সে পেয়ে, ডিফেন্ডার এদের মিলিতাওয়ের দুর্বল বাধা সামলে শট নেন রাফায়েল লেয়াও। ওই শট আন্দ্রি লুনিন ঝাঁপিয়ে ঠেকালেও বল বিপদমুক্ত করতে পারেননি, আলগা বল ফাঁকায় পেয়ে অনায়াসে জালে পাঠান রিয়ালের সাবেক স্ট্রাইকার মোরাতা।
৭৩তম মিনিটে ব্যবধান বাড়ায় মিলান। লেয়াওয়ের পাস ঠাণ্ডা মাথায় নিয়ন্ত্রণে নিয়ে, নিচু শটে গোলরক্ষকের দুই পায়ের ফাঁক দিয়ে গোলটি করেন ডাচ মিডফিল্ডার রেইন্ডার্স। শেষ দিকে দুই দলই একটি করে সুবর্ণ সুযোগ পায়। তবে কেউই প্রতিপক্ষ গোলরক্ষকের বাধা এড়াতে পারেনি।
দিনের আরেক ম্যাচে বড় ধাক্কা খেয়েছে ইংলিশ ক্লাব ম্যানচেস্টার সিটি। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ম্যাচে পর্তুগিজ ক্লাব স্পোর্টিং লিসবনের কাছে তারা হেরেছে ৪-১ ব্যবধানে। একের পর এক চোটে বিপর্যস্ত সিটি। কারাবাও কাপে বিদায় নেওয়ার পর প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচে তারা হেরেছে বোর্নমাউথের কাছে।
২০১৬ সালের অক্টোবরের পর চ্যাম্পিয়ন্স লিগে এবারই প্রথম চার গোল হজম করেছে ক্লাবটি। পাশাপাশি ২০১৮ সালের এপ্রিলের পর এবারই প্রথম টানা তিন ম্যাচে হারল সিটি।
লিসবনের মাঠে ৪ মিনিটেই ফিল ফোডেনের কল্যাণে গোল পেয়ে যায় সিটি। তবে প্রথমার্ধেই সমতা ফিরিয়ে আনে লিসবন। প্রথমার্ধে আর কোনও গোল না হলেও দ্বিতীয়ার্ধে তিনটি গোল হজম করে সিটিজেনরা।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই লিড এনে দেন ম্যাক্সিমিলিয়ানো আরাউহো। এরপর অবশ্য তিনটি পেনাল্টি পেয়েছে দুই দল। এর মধ্যে পেনাল্টি মিস করেছেন আর্লিং হলান্ড। দ্বিতীধার্ধে তার নেওয়া পেনাল্টি শটটি ওপরের পোস্টে লেগে ফিরে আসে। অন্যদিকে ৪৯ ও ৮০ মিনিটে স্পটকিক থেকে গোল করে হ্যাটট্রিক পূরণ করেন গায়োকেরেস। এই ম্যাচে ইউরোপিয়ান ফুটবলে ২২ ম্যাচে অপরাজিত থাকার রেকর্ড ভাঙল ম্যানচেস্টার সিটির।
চার ম্যাচে দুই জয়ে ৬ পয়েন্ট নিয়ে ১৭ নম্বরে নেমে গেছে রিয়াল। সমান পয়েন্ট নিয়ে ১৮ নম্বরে উঠেছে মিলান। ১২ পয়েন্ট নিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে আছে লিভারপুল। সমান চার ম্যাচে ১০ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে আছে স্পোর্টিং। চার ম্যাচে দুই জয়, একটি করে হার ও ড্রয়ে ৭ পয়েন্ট টেবিলের ষষ্ঠ স্থানে আছে ম্যানচেস্টার সিটি।