চুরি করে বের হওয়ার সময় ধরা পড়েছিলেন গৃহকর্মী আয়েশা: পুলিশ
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের শাহজাহান রোডে বোরকা পরে বাসায় ঢুকে মা-মেয়ে খুনের ঘটনায় গৃহকর্মী আয়েশাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি পুলিশকে জানান, কিছু মালামাল চুরি করে বাসা থেকে বের হওয়ার সময় গৃহিণী লায়লা আফরোজ তাকে হাতে-নাতে ধরে ফেলেন। তখন হাতে থাকা ছুরি দিয়ে লায়লা আফরোজকে আঘাত করলে তাতে তার মৃত্যু হয়। এসময় লায়লা আফরোজের মেয়ে নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজ বিষয়টি দেখে ফেলেন। তাকেও ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়।
মোহাম্মদপুর থানার এসআই ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম মাছুম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
আজ বুধবার দুপুরে অভিযান চালিয়ে ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার কয়ার চর গ্রাম থেকে গৃহকর্মী আয়েশাকে গ্রেপ্তার করে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ। এসময় তার স্বামী রবিউল ইসলামকেও গ্রেপ্তার করা হয়।
মোহাম্মদপুর জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) মো. আব্দুল্লাহ আল মামুনের নেতৃত্বে মোহাম্মদপুর থানার নয়জনের একটি টিম এ অভিযান চালায়।
এরআগে, সোমবার সকালে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের শাহজাহান রোডে নিজের বাসায় খুন হন মা লায়লা আফরোজ (৪৮) ও মেয়ে নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজ (১৫)। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, বাসার গৃহকর্মী আয়েশা ওইদিন বোরকা পরে ঢুকে স্কুল ড্রেস ও মাস্ক পরে বেরিয়ে যান। এ ঘটনায় গৃহকর্মীকে আসামি করে মামলা করেন গৃহকর্তা এম জেড আজিজুল ইসলাম।
পুলিশ বলছে, হত্যাকাণ্ডের ঘটনার চার দিন আগে মোহাম্মদপুর শাজাহান রোডের ৩২/২/এ নম্বর বাসার সাততলায় একটি বাসায় কাজ নেন ওই গৃহকর্মী। নিজেকে আয়েশা নামে পরিচয় দেন। মা ও মেয়েকে হত্যার পর নাফিসার স্কুল ড্রেস পরে বাসা থেকে বেরিয়ে যান আয়েশা।
নিহত লায়লা আফরোজ ছিলেন গৃহিণী, আর মেয়ে নাফিসা বিনতে আজিজ মোহাম্মদপুরের প্রিপারেটরি স্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী। নাফিসার বাবা এম জেড আজিজুল ইসলাম উত্তরায় সানবীমস স্কুলের পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষক।
ভবনের একাধিক সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, নাফিসার বাবা স্কুলের উদ্দেশ্যে সকাল ৭টার দিকে বের হয়ে যান। এর ঘণ্টাখানেক পর ৭টা ৫১ মিনিটে বোরকা পরে ওই বাসায় প্রবেশ করেন গৃহকর্মী আয়েশা। দেড় ঘণ্টা পর ৯টা ৩৬ মিনিটে স্কুল ড্রেস পরে বাসা থেকে বেরিয়ে যান তিনি। ওই স্কুল ড্রেস নাফিসার। সকাল সাড়ে ১১টার দিকে নাফিসার বাবা বাসায় ফিরে স্ত্রী ও মেয়েকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখতে পান।
পুলিশের একটি সূত্র বলছে, মাকে হত্যার বিষয়টি বুঝতে পেরে মেয়ে নাফিসা ডাইনিং রুমে রাখা ইন্টারকম থেকে কাউকে ফোন দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু সেখানেই তাকে ছুরিকাঘাত করা হয়। ওই সময় ধস্তাধস্তিতে ইন্টারকমের লাইন খুলে যায়। বাসায় তল্লাশি করে বাথরুমে একটি সুইচ গিয়ার চাকু ও একটি ফল কাটা ছুরি পাওয়া যায়। ধারণা করা হচ্ছে, ওই ছুরি দুটি দিয়েই মা-মেয়েকে হত্যা করে গৃহকর্মী আয়েশা। এই ঘটনায় ওই বাসার দারোয়ান মালেককে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে।
Comments