আর্থিক টানাপড়েন সামাল দিতে জাতিসংঘের বাজেট কাটছাঁট, হবে কর্মী ছাঁটাই
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস জানিয়েছেন, সদস্য দেশগুলোর বকেয়া চাঁদার পরিমাণ বেড়ে ১ দশমিক ৫৯ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। এর ফলে সৃষ্ট আর্থিক টানাপড়েন সামাল দিতে ২০২৬ সালে জাতিসংঘ তাদের বাজেট ১৫ দশমিক ১ শতাংশ এবং কর্মী সংখ্যা ১৮ দশমিক ৮ শতাংশ কমাবে। খবর আল জাজিরার।
সোমবার (১ ডিসেম্বর) গুতেরেস আগামী বছরের বাজেট উপস্থাপন করেন। ২০২৬ সালের জন্য জাতিসংঘের বাজেট ধরা হয়েছে ৩ দশমিক ২৪ বিলিয়ন ডলার। ২০২৫ সালের তুলনায় যা ৫৭৭ মিলিয়ন ডলার কম। জাতিসংঘের পৃথক এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া ও মেক্সিকোর বকেয়া চাঁদা থেকেই মূল ঘাটতি তৈরি হয়েছে। তবে বাজেট ঘাটতির ফলে ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের যেন কোনো সমস্যায় না পড়তে হয়, সেদিকে খেয়াল রেখেছে জাতিসংঘ। তাদের নিয়ে কাজ করা জাতিসংঘের সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ)-এর বাজেট অপরিবর্তিত থাকবে বলে জানিয়েছেন মহাসচিব গুতেরেস।
তিনি বলেন, 'গাজায় মানবিক কার্যক্রমের মূল ভিত্তি ইউএনআরডব্লিউএ। তাই এর বাজেট কমানো হলে মারাত্মক প্রভাব পড়বে। এ কারণে আমি সংস্থাটিকে বাজেট কাটছাঁটের বাইরে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।' একইভাবে 'ডেভেলপমেন্ট অ্যাকাউন্ট এবং আফ্রিকার উন্নয়নের পক্ষে অ্যাডভোকেসি' কার্যক্রমের বাজেটও ২০২৫ সালের স্তরেই রাখা হবে।
বাজেট ঘাটতি পূরণে জাতিসংঘ বিভিন্ন সংস্থায় মোট ২,৬৮১টি পদ বাতিল করবে। গুতেরেসের ভাষায়, 'এসব পদের দায়িত্ব এমন, যা অন্যরা আরও দক্ষতার সঙ্গে করতে পারে বা কাঠামোগত দক্ষতা বাড়িয়ে কমানো সম্ভব।'
তিনি আরও জানান, সদস্য দেশগুলোর বকেয়া চাঁদা ও অন্যান্য দেনার কারণে চলমান অর্থ সংকটের ফলে জাতিসংঘের প্রায় ১৮ শতাংশ পদ ইতোমধ্যেই খালি পড়ে আছে। তবে এসব শূন্যপদ সরাসরি কাটছাঁটের লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে সম্পর্কিত নয়।
গুতেরেস বলেন, 'এসব শূন্যপদ কোনো কৌশলগত সিদ্ধান্তের ফল নয়; বরং কর্মীরা চলে গেছেন আর অর্থ সংকটের কারণে আমরা তাদের স্থলাভিষিক্ত কাউকে নিয়োগ করতে পারিনি।'
বিশেষ রাজনৈতিক মিশনগুলোর বাজেটও কমিয়ে ২০২৬ সালে ৫৪৩ দশমিক ৬ মিলিয়ন ডলার করা হবে—যা আগের বছরের তুলনায় ১৪৯ দশমিক ৫ মিলিয়ন ডলার বা ২১ দশমিক ৬ শতাংশ কম। এই সিদ্ধান্তের ফলে কিছু মিশন বন্ধ এবং কিছু মিশনের কার্যক্রম সীমিত করা হবে।
এ ছাড়াও নিউইয়র্কে জাতিসংঘের উপস্থিতি ধীরে ধীরে কমানো হচ্ছে। বিশ্বের অন্যতম ব্যয়বহুল এই শহরে জাতিসংঘের প্রধান কার্যালয় অবস্থিত। গুতেরেস জানান, ২০২৭ সালের শেষ নাগাদ নিউইয়র্কে জাতিসংঘের দুটি অফিসের ভাড়া চুক্তি বাতিল করার পরিকল্পনা রয়েছে, যার মাধ্যমে ২০২৯ সাল থেকে বছরে ২৪ দশমিক ৫ মিলিয়ন ডলার সাশ্রয় হবে। ইতোমধ্যে ২০১৭ সাল থেকে নিউইয়র্কের অন্যান্য অফিস বন্ধ করে ১২৬ মিলিয়ন ডলার সাশ্রয় করা হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
Comments