কঙ্গোতে তামা ও কোবাল্ট খনিতে সেতু ধস, নিহত অন্তত ৩২
মধ্য আফ্রিকার দেশ ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোর (ডিআর কঙ্গো) একটি তামা ও কোবাল্ট খনিতে সেতু ধসে কমপক্ষে ৩২ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
মূলত নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে শ্রমিকদের ঢুকে পড়া এবং পরে আতঙ্কে সেতুর দিকে ছুটে যাওয়ার ফলেই এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। দেশটির দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় লুয়ালাবা প্রদেশের কালান্ডো খনিতে এ ঘটনা ঘটে বলে জানান প্রাদেশিক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রোয়া কাওমবে মায়োন্ডে।
এই ঘটনায় নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সোমবার (১৭ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রোয়া কাওমবে মায়োন্ডে জানান, ভারী বৃষ্টি ও ভূমিধসের ঝুঁকি থাকায় আগেই খনিতে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা ছিল। তারপরও বেপরোয়া শ্রমিকরা জোর করে খনিতে ঢুকে পড়ে।
মূলত বন্যার পানি ঠেকাতে খনিতে একটি অস্থায়ী সেতু তৈরি করা হয়েছিল। বিপুল সংখ্যক শ্রমিক একসঙ্গে দৌড়ে সেটি পার হওয়ার চেষ্টা করায় সেতুটি ভেঙে পড়ে।
খনি খাত তদারকি সংস্থা এসএইএমএপি-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, ঘটনাস্থলে সেনাদের গুলিবর্ষণের শব্দে শ্রমিকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। আতঙ্কে সবাই সেতুর দিকে ছুটে গেলে সেতুটি ধসে পড়ে এবং তারা একে অপরের ওপর পড়ে যায়। ফলে ব্যাপক প্রাণহানি ও দগ্ধ হওয়ার ঘটনা ঘটে।
অবশ্য মায়োন্ডে মৃত্যুর সংখ্যা অন্তত ৩২ জন বলে নিশ্চিত করলেও এসএইএমএপি-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, মৃতের সংখ্যা কমপক্ষে ৪০।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, কালান্ডো খনিটি নিয়ে বহুদিন ধরে বেপরোয়া খনিকর্মীদের সঙ্গে স্থানীয় একটি সমবায় ও খনিটির বৈধ পরিচালনাকারীদের বিরোধ চলছে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের প্রাদেশিক সমন্বয়ক আর্থার কাবুলো জানান, কালান্ডো খনিতে ১০ হাজারের বেশি শ্রমিক কাজ করে।
এই ঘটনার পরে রোববার ঘটনাস্থলে সব ধরনের কার্যক্রম স্থগিত করে প্রাদেশিক কর্তৃপক্ষ।
এদিকে মানবাধিকার সংগঠন এ ঘটনায় সেনাবাহিনীর ভূমিকা খতিয়ে দেখতে স্বাধীন তদন্তের দাবি জানিয়েছে। তারা বলেছে, খনিশ্রমিকদের সঙ্গে সেনাদের সংঘর্ষের অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে এ বিষয়ে এখনো কোনও মন্তব্য করা হয়নি।
ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো বিশ্বের সবচেয়ে বড় কোবাল্ট উৎপাদনকারী দেশ। বৈদ্যুতিক গাড়ির লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি তৈরিতে ব্যবহৃত এই খনিজের প্রায় ৮০ শতাংশ উৎপাদনই চীনা কোম্পানির নিয়ন্ত্রণে।
এছাড়া কোবাল্ট খনিতে বহুদিন ধরে শিশু শ্রম, নিরাপত্তাহীন কাজের পরিবেশ ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। দেশটির পূর্বাঞ্চলে তিন দশকের বেশি সময় ধরে চলা সংঘাতের কেন্দ্রেও রয়েছে এই খনিজ সম্পদ।
Comments