জীবনবিমা খাতে আস্থা সংকট: আড়াই বছরে পলিসি কমেছে ১০ লাখের বেশি
দাবি নিষ্পত্তিতে দীর্ঘসূত্রতা, বিনিয়োগে অস্বচ্ছতা ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএর দুর্বল তদারকির কারণে জীবনবিমা খাতে মানুষের আস্থা দ্রুত কমছে। আইডিআরএর সাম্প্রতিক প্রতিবেদন বলছে, গত আড়াই বছরে সক্রিয় পলিসি কমেছে ১০ লাখ ২৫ হাজার ৯২৪টি—হ্রাসের হার ১৩.১৪ শতাংশ। অর্থাৎ নতুন পলিসি না নিয়ে বরং অনেকে পুরোনো পলিসির অর্থই তুলে নিচ্ছেন।
দেশে ৩৬টি জীবনবিমা কোম্পানি রয়েছে। ২০২২ সালের শেষে সক্রিয় পলিসি ছিল ৭৮ লাখ ৯ হাজার ১২১টি, যা ২০২৪ সালের শেষে নেমে দাঁড়ায় ৭০ লাখ ৮৯ হাজার ৭৭৭টিতে। ২০২৫ সালের জুন শেষে তা আরও কমে ৬৭ লাখ ৮৩ হাজার ১৯৭টিতে পৌঁছায়—মাত্র ছয় মাসে কমে ৩ লাখ ৬ হাজার ৫৮০টি পলিসি।
পলিসি কমার তালিকার শীর্ষে রয়েছে সোনালী লাইফ ইনস্যুরেন্স (২ লাখ ৩৭ হাজার ৬৬৮), ডেলটা লাইফ (১ লাখ ৯৩ হাজার ৭৬৮) ও পপুলার লাইফ (১ লাখ ৮৪ হাজার ৯৭৯)। এরপর রয়েছে ন্যাশনাল লাইফ, প্রগতি লাইফ এবং আলফা ইসলামী লাইফ।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, দুর্বল ব্যবস্থাপনা কাঠামোই পুরো খাতকে সংকটে ঠেলে দিয়েছে। বিনিয়োগ, দাবি নিষ্পত্তি ও গ্রাহকসেবায় কঠোর নীতিমালা প্রয়োগ এখন জরুরি।
অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ। ইনস্যুরেন্স প্রফেশনালদের সংগঠন বিআইপিএসের মতে, অনিয়মের তদন্তে প্রমাণ পাওয়া গেলেও বাস্তবায়নে কঠোরতার অভাব থাকে, যা গ্রাহকের আস্থাকে আরও ক্ষতিগ্রস্ত করে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আইডিআরএর মানবসম্পদ ও নজরদারি সক্ষমতা শক্তিশালী না হলে খাতের সমস্যা কাটবে না।
তবে আইডিআর এবলছে, খাতের বিচ্যুতি দূর করতে আইনি সংস্কার প্রক্রিয়াধীন এবং দাবি নিষ্পত্তি দ্রুত করার নির্দেশনা ইতিমধ্যে দেওয়া হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বিমা খাত টিকে থাকে মানুষের বিশ্বাসে; সেই বিশ্বাস একবার ভেঙে গেলে তা ফিরিয়ে আনা কঠিন। তাই দাবি নিষ্পত্তির সময়সীমা নির্দিষ্ট করা, বিনিয়োগে স্বচ্ছতা, নিয়মিত অডিট ও কঠোর তদারকির ক্ষেত্রে দৃশ্যমান পরিবর্তন এখন অপরিহার্য।
Comments