অপরাধজগতের নিয়ন্ত্রণ নিতে মামুনকে হত্যা: ডিবি প্রধান
রাজধানীর পুরান ঢাকায় তারিক সাইফ মামুন হত্যার পেছনে অপরাধজগতের নিয়ন্ত্রণকে কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছে পুলিশ। এতে জড়িত অভিযোগে পাঁচজনকে গ্রেপ্তারের পর ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) প্রধান বলেছেন, আরেক সন্ত্রাসী রনির নির্দেশে এই ঘটনা ঘটে।
গত সোমবার ন্যাশনাল মেডিকেল ইনস্টিটিউট হাসপাতালের সামনে নিহত হন মামুন। তিনি পুলিশের শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকায় ছিলেন। বুধবার দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করেন ডিবির প্রধান ও অতিরিক্ত কমিশনার শফিকুল ইসলাম। এ সময় তিনি মামুন হত্যার কারণ ও এর সঙ্গে জড়িতদের পরিকল্পনার তথ্য তুলে ধরেন।
শফিকুল ইসলাম বলেন, জামিনে মুক্তি পেয়ে ফের অপরাধজগতের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন মামুন। এতে আন্ডারওয়ার্ল্ডের এক সময়ের আলোচিত ব্যক্তি সানজামুল ইসলাম ইমন ও মামুনের দ্বন্দ্ব প্রকট হয়। হত্যার নির্দেশদাতা রনি ইমনের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। কিছুদিন ধরে রনি একাধিকবার মামুনকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। ঘটনার দিন রনির নির্দেশে দুই লাখ টাকার বিনিময়ে মামুনকে গুলি করেন ফারুক ও রবিন।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, এ ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ফারুক ও রবিন ছাড়া অন্য তিনজন হলেন শামীম, রুবেল ও ইউসুফ। তাদের মধ্যে ইউসুফ পেশায় দর্জি, রুবেল ভাড়ায় গাড়ির ব্যবসা করেন। জব্দ করা হয়েছে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত মোটরসাইকেল, অস্ত্র, অব্যবহৃত গুলি ও নগদ ১ লাখ ৫৩ হাজার টাকা।
মঙ্গলবার রাতে ফারুক, রবিন, শামীম ও রুবেলকে নরসিংদী থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তারা সিলেট হয়ে ভারতে পালানোর চেষ্টা করেছিলেন। ব্যর্থ হয়ে সাতক্ষীরা সীমান্ত পাড়ি দেওয়ার পরিকল্পনা করেন। সিলেট থেকে নরসিংদী যাওয়ার পথে পুলিশের হাতে ধরা পড়েন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, মামুনকে হত্যার পর ব্যবহৃত অস্ত্র ও অব্যবহৃত গুলি রুবেলের হেফাজতে রাখা হয়েছিল। পরে রুবেল সেগুলো ইউসুফের হেফাজতে দেন। মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর রায়েরবাজারে অভিযান চালিয়ে ইউসুফকে গ্রেপ্তারের পাশাপাশি তাঁর ঘর থেকে দুটি বিদেশি পিস্তল, ৬টি গুলি ও দুটি ম্যাগজিন জব্দ করা হয়।
গত সোমবার হিমেল হত্যা মামলায় হাজিরা দিতে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে যান মামুন। তাঁকে হত্যার জন্য এই দিনটিই বেছে নেওয়া হয়। ডিবি প্রধান শফিকুল ইসলাম বলেন, আগের দিন অর্থ্যাৎ রোববার সন্ধ্যার দিকে রবিনকে নিজের বাসায় ডেকে নেন রনি। মামুনকে হত্যার অভিযানে যুক্ত থাকতে টাকার প্রস্তাবও দেন। এতে রাজি হন রবিন। ওই সময় রনি রবিনকে জানান, এই অভিযানে ফারুক, সুমন, কামালসহ আরও কয়েকজন থাকবেন।
সোমবার সকালে রনি মোবাইল ফোনে কল দিয়ে সবাইকে আদালত এলাকায় যেতে বলেন। রবিন তাঁর বন্ধু শামীমের সঙ্গে মোটরসাইকেলে করে আদালত এলাকায় গিয়ে হত্যায় অংশ নেন। অন্যরাও সে সময় আদালত এলাকায় অবস্থান করছিলেন। মামুনের গতিবিধি সম্পর্কে ফারুক ও রবিনকে জানান কামাল। পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রথমে সুমন ও ফারুকের গুলি করার কথা ছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে ফারুক ও রবিন গুলি করেন।
সংবাদ সম্মেলনে শফিকুল ইসলাম বলেন, হত্যার পর অভিযানে অংশ নেওয়া ব্যক্তিরা বেড়িবাঁধ হয়ে রায়েরবাজার যান। সেখানে রনির নির্দেশে ইউসুফের কাছে অস্ত্র ও গুলি জমা দেন। পরে রুবেলের দেওয়া দুই লাখ টাকা ভাগাভাগি করে নেন ফারুক ও সুমন।
Comments