গোপালগঞ্জে অজ্ঞাত রোগে মারা যাচ্ছে টমেটো গাছ
গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের গুয়াধানা গ্রামের কৃষানী মঞ্জু মন্ডল (৫৫)। এবছর স্বামীর সাথে ৩ বিঘা ঘেরপাড়ে করছেন আগাম জাতের টমেটো চাষ। গাছ ভালো হওয়ায় প্রচুর পরিমানে এসেছিল ফুল ও ফল। কিন্তু টমেটো একটু বড় হলেই মারা যাচ্ছে টমেটো গাছ। বিভিন্ন কীটনাশক দিয়েও থামাতে পারছেন না গাছ মরে যাওয়া। এতে অর্থিক ক্ষতির মুখে হয়ে পড়েছেন দিশেহারা।
কৃষানী মঞ্জু মন্ডল বলেন, পরিবারে স্বামী ও ছেলে মেয়ে রয়েছে। একটু ভালো দাম পাওয়ার আশায় আগাম জাতের টমেটোর চাষ করেছি। কিন্তু এভাবে যদি গাছ মরে যায় লাভ তো দূরের কথা খরচও উঠবে না। ধার-দেনা হয়ে টমেটোর আবাদ করেছি। সারা বছর কিভাবে চলবে সেই চিন্তায় রাত কাটে।
শুধু মঞ্জু মন্ডল নয় এমন অবস্থা গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার রঘুনাথপুর ইউনিয়ন ও গোপালপুর ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রামের শতাধিক কৃষকের। ক্ষতি কমাতে অজ্ঞাত রোগ চিহ্ণিত করতে দ্রুত কায্যকরী পদক্ষেপ নিবে কৃষি বিভাগ, এমনটিই দাবী ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের।
তবে, কৃষি বিভাগ বলছে, একই জমিতে বারবার একই ফসল করার এমনটি হতে পারে। তাই কৃষকদের বারবার একই ফসল না করার জন্য নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানাগেছে, বেশি দাম পাওয়ায় আশায় গোপালগঞ্জে ১২০ হেক্টর জমিতে আগাম টমোটো চাষ করেছেন কৃষকরা। ঘেরপাড়ে চাষ করা এসব টমেটো গোপালগঞ্জের চাহিদা মিটিয়ে ঢাকা, খুলনা, বাগেরহাটসহ বিভিন্ন অঞ্চলের চলে যায়। আগাম বাজারে যাওয়ায় দাম ভালো পাওয়ায় লাভবান হয় এসব এলাকার কৃষকরা।
শুক্রবার (০৭ নভেম্বর) বিকালে টুঙ্গিপাড়া উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের গুয়াধানা গ্রামের টমেটো ক্ষেতে গিয়ে দেখা গেছে, ঘেরপাড়ে চাষ করা টমেটো গাছগুলো লম্বা হয়েছে। গাছের শাখায়-প্রশাখায় এসেছে ফুল আর ধরেছে টমেটো। গাছে ফুল আর ফল ভালো আসায় লাভের স্বপ্ন দেখেছিলেন তারা। কিন্তু গাছে টমেটো একটু বড় হলেই হঠাত করে অজ্ঞাত রোগে মারা যাচ্ছে টমেটো গাছ। এতে অর্থিক ক্ষতি হওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষক। নানা কীটনাশক দিয়েও ঠেকানো যাচ্ছে না গাছ মারা যাওয়া। এভাবেই গাছ মারা গেলে লাভ তো দূরের কথা ধারদেনা কিভাবে পরিশোধ করবেন সেই চিন্তায় দিন কাটছে তাদের। কৃষকদের অভিযোগ এখন পযর্ন্ত ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের কোন খোঁজ খবর নেয়নি কৃষি বিভাগ।
গুয়াধানা গ্রামের কৃষক হরিচাঁদ মন্ডল বলেন, এবছর তিন বিঘা ঘেরপাড়ে টমেটোর আবাদ করেছি। গাছে যখনই ফুল ও ফল ধরেছে তার মধ্যে প্রায় ৩০ ভাগ গাছ হঠাত করে শুকিয়ে মারা যাচ্ছে। সন্তানের মতো করে গাছগুলো আমরা লালন-পালন করি। বিভিন্ন ধরনের ঔষধ ব্যবহার করেও গাছ মারা যাওয়া ঠেকাতে পারছি না। গাছ যদি এভাবে মরা যায় তাহলে আমাদের লোকসান দিতে হবে। পরিবার নিয়ে কিভাবে চলবো সেই চিন্তায় ঘুম আসে না।
অপর ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক সমীর বিশ্বাস বলেন, গুয়াধানা গ্রামের এমন কোন পরিবার নেই, ঘের নেই যেখানে টমেটো চাষ করা হয়না। কিন্তু প্রতিটা ঘেরে টমেটো গাছ মারা যাচ্ছে এর কারণ আমরা খুঁজে পাচ্ছি না, কোন প্রতিকারও পাচ্ছি না।
অপর কৃষক সবুজ বিশ্বাস বলেন, টমেটো গাছ লাগানোর পর বড় হয়ে যখন ফুল আর ফল ধরছে ঠিক তখনই গাছ শুকিয়ে মারা যাচ্ছে। কেন মারা যাচ্ছে তার কোন কারন জানতে পারছি না। এমনকি কৃষি বিভাগ আমাদের কোন খোঁজ খবর নেয়নি, কোন পরামর্শও দেয়নি। এভাবে গাছ মারা গেলে আমাদের লোকসান দিতে হবে।
গোপালগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মো: মামুনুর রহমান জানান, এ বছর গোপালগঞ্জ জেলায় ১২০ হেক্টর জমিতে আগাম টমোটো চাষ করেছেন কৃষকরা। টমেটো গাছ মারা যাওয়া খবরে সরেজমিনে পরিদর্শন করে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে কৃষি কর্কর্তারা। একই জমিতে বারবার একই ফসল করায় এমনটি ঘটতে পারে বলেও জানান তিনি।
Comments