আফগানিস্তানকে যুদ্ধের হুমকি পাকিস্তানের
পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মাঝে পুনরায় শান্তি আলোচনা শুরুর আগে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ তালেবান সরকারকে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। ইস্তাম্বুলে শান্তি আলোচনা ব্যর্থ হলে পাকিস্তান সম্ভাব্য সামরিক অভিযান চালাতে পারে বলে হুমকি দিয়েছেন তিনি। সাম্প্রতিক প্রাণঘাতী সীমান্ত সংঘাত ও ড্রোন হামলার অবসানে কূটনৈতিক প্রচেষ্টার মাঝে তার এই হুমকি তীব্র উত্তেজনা তৈরি করেছে।
আফগানিস্তানে তালেবানকে মোকাবিলায় সামরিক সংঘাতই কি একমাত্র বিকল্প, এক সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে খাজা আসিফ বলেছেন, ''যুদ্ধ হবেই।'' বুধবার টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করেছেন তিনি। যদিও আর কয়েক ঘণ্টা পর তুরস্ক-কাতারের মধ্যস্থতায় আফগান ও পাকিস্তানি শীর্ষ প্রতিনিধিদলের তুরস্কে বৈঠকে বসার কথা রয়েছে। কয়েক দিন আগেও, পাকিস্তানের এই প্রতিরক্ষামন্ত্রী আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধের হুমকি দিয়েছিলেন।
খাজা আসিফ অভিযোগ করে বলেছেন, কাবুল জঙ্গিদের আশ্রয় দিচ্ছে এবং সীমান্তপারের হামলার ক্ষেত্রে চোখ বন্ধ করে রেখেছে। অন্যদিকে আফগানিস্তান পাল্টা অভিযোগ করে বলেছে, পাকিস্তান বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্য করে ''ড্রোন যুদ্ধ'' চালাচ্ছে এবং আইএস জঙ্গিদের প্রশিক্ষণের বিষয়ে নীরব রয়েছে।
গত মাসে দোহায় সম্পাদিত ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতি চুক্তি রক্ষার লক্ষ্যে বৃহস্পতিবার আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের শীর্ষ প্রতিনিধিরা ইস্তানবুলে শান্তি আলোচনায় বসছেন। এর আগের দফার আলোচনায় তীব্র বাগবিতণ্ডা হলেও ৩০ অক্টোবর উভয়পক্ষ যৌথ বিবৃতিতে যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বৃদ্ধি এবং সীমান্ত স্থিতিশীলতার জন্য পুনরায় বৈঠকে বসার অঙ্গীকার করেছিল।
ইস্তাম্বুলে আফগান প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে রয়েছেন দেশটির গোয়েন্দা প্রধান আবদুল হক ওয়াসিক। তার সঙ্গে রয়েছেন তালেবান সরকারের জ্যেষ্ঠ নেতা আনাস হাক্কানি, কাতারে নিযুক্ত ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত সুহাইল শাহিন, উপ-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রহমতুল্লাহ নাজিব ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আবদুল কাহার বালখি।
পাকিস্তানের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও আইএসআই প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল মুহাম্মদ আসিম। আলোচনায় সীমান্ত সংঘর্ষ, ড্রোন অভিযান এবং পাকিস্তানের বাণিজ্যিক সীমান্ত বন্ধ রাখার মতো ইস্যুতে আলোচনা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সীমান্ত বন্ধ থাকায় দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য কার্যত পঙ্গু হয়ে পড়েছে।
আফগানিস্তান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে পাকিস্তানে আট হাজারেরও বেশি আফগান কনটেইনার আটকে আছে এবং আরও চার হাজার প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। সীমান্তের এই স্থবিরতা উভয় দেশের অর্থনীতির জন্য বিশাল ক্ষতি ডেকে আনছে বলে আফগানিস্তানের সংবাদমাধ্যম তোলো নিউজ জানিয়েছে।
এদিকে, কূটনৈতিক উত্তেজনার মাঝে পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারের এক বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে আফগান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। দার দাবি করেছিলেন, আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুতাকি এক দিনে তাকে ছয়বার ফোন করেছিলেন। কাবুল এই বক্তব্যকে ভিত্তিহীন ও কূটনৈতিক শিষ্টাচারের পরিপন্থী বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি বলেছেন, সংঘাতের সময় পারস্পরিক সমন্বয়ের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে মাত্র দু'বার যোগাযোগ হয়েছিল।
গত ৩০ অক্টোবরের যৌথ বিবৃতিতে তুরস্ক ও কাতার শান্তি আলোচনায় উভয়পক্ষের সক্রিয় অংশগ্রহণের প্রশংসা করেছিল। পাশাপাশি বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, শান্তি নির্ভর করছে জবাবদিহিতা ও সংযমের ওপর। মধ্যস্থতাকারীরা এবার যুদ্ধবিরতির লঙ্ঘনের ঘটনায় তদন্ত ও শাস্তি নিশ্চিতে যৌথ তদারকি প্রক্রিয়া গঠনের প্রস্তাব করতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তবে পাকিস্তানের সাম্প্রতিক হুমকি ও কাবুলের পাল্টা অবস্থানের প্রেক্ষাপটে গভীর অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে শুরু হচ্ছে ইস্তাম্বুল বৈঠক। বিশ্লেষকরা সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, উভয়পক্ষ যদি উসকানিমূলক বক্তব্য ও সীমান্ত সংঘাত নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে এই ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতি ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার সম্ভাবনা আলোচনা শুরু হওয়ার আগেই ভেস্তে যেতে পারে।
Comments